কাঁচকলা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, হার্টের বন্ধু ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
পেটের বন্ধু কাঁচকলা। পেটের যেকোনো সমস্যায় কাঁচ কলা ও থানকুনি পাতা খেতে হয় তা আমরা অনেকে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। কাঁচকলা এমন একটি সবজি, যা সহজলভ্য ও শরীরের জন্য অনেক বেশী উপকারী।
যদিও অনেকে এই সবজীটিকে অবহেলা করে থাকেন, কারণ অনেকে এর গুনাগুন সম্পর্কে জানেন না। কাঁচ কলা (green banana) দিয়ে ইলিশ মাছ বাঙ্গালীর অন্যতম সেরা একটি খাবার।
এছাড়া কাঁচকলার চপ, কাঁচকলার কোপ্তা, কাঁচকলা দিয়ে কাবাব, কাঁচকলা ভর্তা ইত্যাদি বিভিন্ন পদ খাওয়া যায়।
সবুজ এই সবজিটিতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন “বি”, ভিটামিন “সি” সহ নানা উপকারী উপাদান।
কাঁচকলা ফাইবারে পূর্ণ হওয়ার কারণে হজম এবং অন্ত্রের সমস্যা আছে এমন লোকদের জন্য খুবই ভালো।
কাঁচকলা ক্যালরির একটি ভাল উৎস। একটি বড় মাপের কাঁচকলা থেকে ১০৫ ক্যালরি বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কাঁচকলা এমন একটি ফল, যা সারা বছর পাওয়া যায়।
পাঁকাকলা যেমন ফল হিসাবে আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকে, ঠিক তেমনি কাঁচকলা সবজি হিসাবে আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
কাঁচকলার পুষ্টিউপাদান
পাঁকা কলা এবং কাঁচকলা উভয়েরই পুষ্টি উপাদান কাছাকাছি। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –
- ফাইবার:৩.১ গ্রাম
- পটাশিয়াম:১২%
- ভিটামিন বি-6:২০%
- ভিটামিন “সি”:১৭%
- ম্যাগনেসিয়াম:৮%
কাঁচ কলার উপকারীতা
পাঁকা কলার তুলনায় কাঁচকলা বেশি উপকারী। নিচে কাঁচকলার স্বাস্থ্যগত উপকারীতা দেওয়া হলো –
ক্ষুধা কমায়:
কাঁচ কলা উচ্চ ফাইবারে পূরণ থাকে। তাই এটি অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে পারে। এছাড়া এতে প্রতিরোধী স্টার্চ এবং প্যাকটিন রয়েছে।
প্রতিরোধী স্টার্চ এবং প্যাকটিন হজম হতে সময় নেয়। ফলে ক্ষুধা কমে যায়।
আর ক্ষুধা না পেলে খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমতে শুরু করে। তাই এটি আপনাকে ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে যা ওজন হ্রাসে সহায়তা করতে পারে।
হার্টের জন্য ভালো:
যেকোনো শাকসবজি ও ফলমূল হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ৪,৭০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম গ্রহণে হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
কাঁচকলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা হার্টের জন্য ভালো এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
হজম স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে:
কাঁচ কলাতে থাকা প্রতিরোধী স্টার্চ এবং পেকটিন অন্ত্রের ভালো ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া পেটের ভিতরের খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করে দেয়।
ব্যাকটিরিয়া, প্রতিরোধী স্টার্চ এবং পেকটিন এই দুই ধরণের ফাইবার প্রক্রিয়াজাত করে, উপকারী শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে।
শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড বিভিন্ন হজমেজনিত সমস্যায় সহায়তা করতে পারে।
এছাড়াও, কিছু প্রমাণ রয়েছে যে কাঁচকলা কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো:
রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে পারে কাঁচকলা। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে যদি সময়ের সাথে সাথে চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি টাইপ-2 ডায়াবেটিস হতে পারে।
এছাড়া অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। কাঁচকলাতে থাকা প্যাকটিন এবং প্রতিরোধী স্টার্চ এই দুটি উপাদানই খাবারের পরে রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
এতে গ্লাইসেমিক সূচকও কম থাকে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স পরিমাপ করে যে, খাবার খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা কত দ্রুত বৃদ্ধি করে।
ডায়রিয়ায় কাঁচকলা:
ডায়রিয়া বা পেটের যেকোনো সমস্যায় কাঁচকলা ভর্তা বা কাঁচকলা দিয়ে পাতলা ঝোল ঔষুধের থেকেও বেশি কার্যকরী।
এতে থাকে এনজাইম, যা ডায়রিয়া এবং পেটের নানা ইনফেকশন দূর করে। তাই ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকেরা কাঁচকলা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
সতর্কতা
পটাসিয়াম সবার জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ অথবা কিডনির রোগে আক্রান্ত রোগীদের তাই কাঁচকলা পরিমাণমতো খাওয়া দরকার।
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
সূত্র: হেলথলাইন