এই গরমে তালশাঁস গর্ভবতী মায়ের শরীর ঠান্ডা রাখে, রক্ত বাড়ায় ও ডিহাইড্রেশন দূর করে।
গরমে তালশাঁস আহা, প্রাণটা একেবারে জুড়ায়। গরমের দিনে বাবা বাজারে যাওয়ার সময় মা জোরে জোরে মানে হাঁক ছেড়ে বলতো কয়টা তাল বা তালশাঁস নিয়ে এসো বা আজকে কিন্তু তালশাঁস নিয়ে আসবা, ভূলে যেওনা যেনো।
এখন সেই একই ভাবে বউ এখন আমাকে বলে বা আমি নিজেই মনে করে নিয়ে আসি কারণ এতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন- এ,বি,সি-সহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। এছাড়া সে যেহেতু গর্ভবতী তাই আনতে ভুল করি না কারণ এটি গর্ভবতী মায়ের আইরনের ঘাটতি পূরণ অর্থাৎ রক্তশুন্যতা দূর করার পাশাপাশি আরো অনেক উপকার করে থাকে।
ছয় ঋতুর মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঋতু হচ্ছে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল। এই সময়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল। ফলের তালিকায় রয়েছে আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল, আম, জাম, লিচুসহ অন্যতম আরেকটি ভিন্নধর্মী ফল তালের শাঁস।
তালের এই নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি তালকুর নামে বেশি পরিচিত।
বর্তমানে শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন অলিগলিতে এই মৌসুমি ফল তালের শাঁস বিক্রির ধুম পড়েছে। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী তাল গাছ থেকে অপরিপক্ক তাল পাইকারি দরে কিনে তালগুলো কেটে বিভিন্নজন তালগুলো বিভিন্ন দামে বিক্রয় করে।
তবে নরম অবস্থায় তাল শাঁসের দাম অনেক বেশি। কিন্তু দিন যতই যেতে থাকে এই তাল শাঁস ততই শক্ত হতে থাকে। তখন শাঁসের দাম কমতে থাকে এবং এক সময় তাল পরিপক্ক হয়ে গেলে তখন আর এই শাঁস খাওয়া সম্ভব হয় না।
গর্ভবতী মায়ের জন্য তালশাঁসের উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা:
এছাড়া তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়। মধু মাসের এ ফলকে কেউ বলে তালশাঁস, কেউ বলে তালকুর, কেউ বলে তালের আঁটি। প্রচণ্ড গরমে তালশাঁস শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
গর্ভবতীর শরীর ঠান্ডা রাখে:
একজন গর্ভবতী মাকে দুটো সত্তা বহন করতে হয়। নিজের ও তার গর্ভের বাচ্চার। যখন ছয়-সাত মাস পার হয়ে যাই অর্থাৎ গর্ভের বাচ্চার ওজন যতই বাড়তে থাকে ততই মায়ের শারীরিক কষ্ট বাড়তে থাকে।
গর্ভবতী মাকে এমনিতেই প্রচুর তরল খাবার বা পানি পান করতে হয়। আর এই গরমে প্রচুর পানি বা জলযুক্ত তালশাঁস গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপাদেয় একটি খাবার। কারণ Plam fruit বা তাল ফল একটি প্রাকৃতিক শীতলকারক। গ্রীষ্মের সময় শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে।
গর্ভবতীর পানিশুন্যতা দূর করে:
এই গরমে বাইরে কাজ করা কর্মজীবী মানুষ হোক বা ঘরে কাজ করা মায়েরা সকলের প্রাণ হাঁসফাঁস করতে থাকে প্রচন্ড গরমে। বার বার ঘামের কারণে আমাদের শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে। সেটি দ্রুত পূরণ করতে পারে এই তালশাঁস। কচি তালশাঁসে ৯০-শতাংশের উপরে জলীয় অংশ থাকে। তাই এই গরমে তালশাঁস গর্ভবতী মায়ের পানিশুন্যতা দূর করে।
হজমের সমস্যা দূর করে:
বেশ কয়েকটি পেটের অসুস্থতা এবং হজমজনিত সমস্যার জন্য palm fruit বা তাল ফল একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে এবং সাধারণ অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
রক্তাল্পতা দূর করে :
কচি তালশাঁসের রসে প্রচুর পরিমানে আইরন থাকে। এটি গর্ভবতী মায়ের রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে রক্তসল্পতা দূর করে।
বমি বমি ভাব দূর করে:
এটি অ্যাসিডিটি এবং পেটের আলসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। গর্ভবতী মহিলাদের তালশাঁস খেতে বলা হয়, কারণ এটি গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব কমিয়ে দেয়।
তালশাঁস একটি কম ক্যালোরি ফল। ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। এটি পেট দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ রাখে। এটি ঘন ঘন খাওয়ার প্রবণতা প্রতিরোধে সহায়তা করে যা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। এতে চিনির পরিমান খুব কম থাকে।
চোখের জন্য ভালো:
তালেশাঁসে আছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন, সালফার,সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ম্যাগনেসিয়ামের মত বেশ কিছু উপকারী উপাদান। যা গর্ভবতী ও তার বাচ্চার চোখের জন্য অত্যান্ত উপকারী।
তাই তালের শাঁস খেলে আমাদের দৃষ্টিশক্তির অনেক উন্নতি হয়। এটি খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর এর ফলে আমরা বিভিন্ন রকম সিজিনাল অসুখ থেকে মুক্তি পাই।
ত্বককে সুন্দর উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় করে তুলতে চান, তাহলে তালশাঁস খান। আমরা জানি তালশাঁসের জলীয় অংশে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি-সহ আইরন, ক্যালসিয়ামের মতো মিনারেল রয়েছে। এগুলো ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
এটি ঘামাচি, ডিহাইড্রেশন, শুষ্ক ত্বক, কিডনিতে সমস্যা এবং চুল পড়া তাপ সম্পর্কিত একাধিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি কেবল শরীরকে হাইড্রেট করে না, অতিরিক্ত ঘামের কারণে নষ্ট হওয়া পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলি পূরণে সহায়তা করে।
গরমের এ সময়ে কাঁচা তালের শাঁস যেন প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। এই তালশাঁস দিয়েও তৈরি করা যায় পায়েস, পুডিং, ফুলুরির মতো খাবার। তেমন কয়েকটি খাবারের রেসিপি:
তালশাঁসের শরবত:
উপকরণ:
নরম তালশাঁস, ডাবের পানি, চিনি স্বাদ অনুযায়ী, খাবার পানি
প্রণালি:
তালের শাঁস ছোট কিউব করে কেটে নিতে হবে। ব্লেন্ডারে বাকি তালের শাঁস, ডাবের পানি, ঠান্ডা পানি আর স্বাদমতো চিনি দিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। ব্লেন্ড হয়ে গেলে একটা জগে নামিয়ে এর সঙ্গে কিউব করে কাটা তালশাঁস মিশিয়ে গ্লাসে ঢেলে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করতে হবে।
তালশাঁসের milkshake:
উপকরণঃ
নরম তালশাঁস, দুধ, চিনি
প্রণালী:
উপাদানগুলো একত্র করে ব্লেন্ড করে নিন। বরফ বা বাদামকুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
সতর্কতাঃ
গ্রীষ্মের উপাদেয় তালশাঁস আজ যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু আমরা তাল ফলকে হারাতে চাই না।
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই খাবেন না। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।