গর্ভাবস্থায় মসুর ডাল খাওয়ার উপকারিতা।
বাঙালির রান্নাঘরের অন্যতম সুপরিচিত একটি খাদ্য হলো মসুর ডাল। যার ইংরেজি নাম lentil. মসুর ডালে প্রোটিন এবং ফাইবার বেশি থাকে। এগুলি ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিঙ্ক এবং নিয়াসিন সমৃদ্ধ উৎস। এছাড়াও মসুর ডাল উচ্চ আমিষসমৃদ্ধ যা মানব দেহে আমিষের অভাব পূরণ করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আপনি জানেন কি এই মসুর ডাল গর্ববতী মহিলাদের জন্যও খুব উপকারী।
গর্ভাবস্থায় সঠিক পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন এবং ফাইবার গ্রহণ করা অতি প্রয়োজনীয়। একজন গর্ভবতী মহিলাকে বেশি খাদ্য গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই, বরং তার উচিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, গর্ভবতী মহিলাদের ডাল, মটরশুটি, শাক সবজি ও ফলমূল জাতীয় উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা ভালো। এগুলো গর্ভাবস্থায় শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, গর্ভাবস্থায় মসুর ডাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
রক্তাল্পতা কমাতে সাহায্য করে:
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার শরীরে বেশি রক্ত উৎপাদিত হতে হয় শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য। তাই এ অবস্থায় যদি তিনি পর্যাপ্ত পরিমানে আয়রন না গ্রহন করেন তাহলে তার শরীরে বেশি পরিমাণে রক্ত কনিকা উৎপাদিত হবে না। এজন্য গর্ভবতী মহিলাদের মসুর ডাল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ এক কাপ মুসুর ডালে ৩৭% আয়রন থাকে যা আমাদের প্রতি দিনের প্রয়োজনের এক তৃতীয়াংশ পূরণ করতে পারে। প্রচুর আয়রন থাকাই এটা রক্ত সল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে:
গর্ভাবস্থায় দেহ যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না, তখন গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে। সুতরাং, এ সময় মসুর ডাল খাওয়া উপকারী কারণ এটি স্বল্প গ্লাইসেমিক সূচক (GI) খাদ্য। যা ওজন বৃদ্ধি এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে।
জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি হ্রাস করে:
জন্মগত ত্রুটি রোধ করার একটি অন্যতম উপাদান হল ফোলিক এসিড, যা পাওয়া যায় মসুর ডালে। এছাড়াও শরীরের নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং মহিলাদের হোমোসিস্টেইন স্তর বজায় রাখতে সহায়তা করে এই ফোলিক এসিড।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়:
মসুর ডালে রয়েছে পটাসিয়াম যা সঠিক রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করে ও উচ্চ রক্তচাপ কমায়। কিছু কিছু গর্ভবতী মহিলার উচ্চ রক্তচাপ থাকে যা হৃদরোগ, স্ট্রোক বা কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে:
বেশির ভাগ গর্ভবতী মহিলার কোষ্ঠকাঠিন্য একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। মসুর ডালে প্রচুর ফাইবার থাকায় তা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। অন্ত্রের অন্যান্য রোগ বালাইয়ের বিরুদ্ধেও মসুর ডাল বেশ কার্যকারী।
গর্ভের শিশুর বিকাশের জন্য:
মুসুরের ডালে প্রচুর পটাশিয়াম, ফোলেট এবং আয়রন রয়েছে। ফোলেট এবং আয়রন গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই দুটি উপাদান বেশ প্রয়োজনীয়। ফোলেট গর্ভের শিশুর বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবং আয়রন ক্লান্তি দূরে রাখতে সহায়তা করে। পটাসিয়াম লবণের খারাপ প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রক্তচাপকে হ্রাস করে।
শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে:
খুবই পুষ্টিকর এবং প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস মসুর ডাল। যা শক্তি বা এনার্জি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এক কাপ রান্না করা মসুর ডাল থেকে ৪০ গ্রাম পর্যন্ত কার্বহাইড্রেট।
সতর্কতা
অতিরিক্ত মুসুরের ডাল খেলে গ্যাস হতে পারে। আর যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তারা একটু বুঝে শুনে পরিমাণ মত খাবেন।