যমজ কলা বা জোড়া ফল খেলে কি যমজ সন্তান হয়?

বড় বিচিত্র বড় জটিলতা পূর্ণ আমাদের বা মানুষের এই জীবন। কত বিশ্বাস, কত রহস্য যে মানুষ ধারণ করতে পারে তা বলে বোঝানো যাবে না।

আমাদের এই বাঙালি সমাজে দৈনন্দিন জীবনে অনেক কূসংস্কার প্রচলিত আছে। মানুষ এখন শিক্ষাদীক্ষায় অনেক উন্নত। সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে মানুষের ও সমাজ ব্যাবস্থার উন্নতি হলেও অনেক কূসংস্কারকে আমরা কেমন যেন স্বজ্ঞানে মেনে নেই।

এমন অনেক কুসংস্কার প্রচলিত যা বিশ্বাস না করলেও নিজের অজান্তেই কেউ কেউ মেনে চলেন। এরমধ্যে একটি হলো জোড়া কলা খেলে যমজ বাচ্চা হয়।

উপকথাগুলোতে দেখা যায় সন্তানহীনা নারীকে কোনো সন্ন্যাসী বা ফকির জোড়া ফল খেতে দিচ্ছেন। তারপর সেই ফল খেয়ে ওই নারী গর্ভবতীও হচ্ছেন।

জোড়া কলা অথবা জোড়া ফল সাধারণত নারীরা এড়িয়ে চলেন। পরম্পরাগতভাবে বলা হয়ে থাকে, জোড়া কলা বা জোড়া ফল খেলে যমজ সন্তান হয়।  প্রশ্ন জাগতেই পারে, এই সংস্কারের পিছনে কোনও বৈজ্ঞানিক সত্য কাজ করছে কি না।

কাহিনি-কিংবদন্তি যা-ই বলুক না কেন, জোড়া ফল খাওয়ার সঙ্গে যমজ সন্তানজন্মের কোনও সম্বন্ধ পাওয়া যায়নি।

সন্তান যমজ হওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ:

যমজ সন্তানের জন্মের পিছনে যে বৈজ্ঞানিক সত্য কাজ করছে, সেটি হলো–গর্ভে দুটি পৃথক ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে গেলে বা একটি একক নিষিক্ত ডিম্বাণু দুটি ভ্রুণে বিভক্ত হলে যমজ বাচ্চা হয়ে থাকে।

মোনোজাইগোটিক টুইন:

অর্থাৎ নারীর একই ঋতুচক্রে একই সঙ্গে দুটি ডিম্বাণু নির্গত হয়। যদি এই দুটি ডিম্বাণু আলাদা আলাদা দুটি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়, তাহলে যমজ সন্তানের জন্ম হতে পারে।

এই নিষেকের ফলে যে শিশুদের জন্ম হয়, তাদের ‘মোনোজাইগোটিক টুইন’ বলা হয়। এদের গায়ের রং, চোখের মণির রং, রক্তের বৈশিষ্ট্য এক হতে পারে, আলাদাও হতে পারে।

ডাইজাইগোটিক টুইন:

অপর একটি প্রক্রিয়ায়ও যমজ সন্তান গর্ভে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিম্বাশয় থেকে একটি মাত্র ডিম্বাণু নির্গত হয়ে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়।

নিষিক্ত ডিম্বাণুটি পরে বিভক্ত হয় এবং যমজ ভ্রূণে পরিণত হয়। এদের ‘ডাইজাইগোটিক টুইন’ বলা হয়। এদের চেহারা, রক্তের গ্রুপ এমনকী চরিত্র বৈশিষ্ট্যও হুবহু হয়ে থাকে।

সুতরাং জোড়া কলা বা জোড়া ফল খাওয়ার সঙ্গে যমজ বাচ্চা হওয়ার কোনো সম্পর্কই নেই।