“সজনে ডাটা” খান এবং উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচুন।

ফল আবার লাঠির মতো লম্বা হয় কিভাবে। হ্যা বন্ধুরা ফল কিন্তু লাঠির মতো লম্বা। বলুনতো এটা কী? পারলেন না তো। আচ্ছা আরো সহজ করে দিচ্ছি। আমরা এটাকে খুবই মজাদার সবজি হিসাবে তরকারি, ডাল, ঘণ্ট, সুক্ত ইত্যাদির সাথে খেয়ে থাকি।

আরে মশায় গরম এসে গেলো আর সজনে বা সজিনার কথা মনে করতে পারছেন না। এরই মধ্যে বাজারে উঁকি দিতে শুরু করেছে সবজিটি। সজনে গাছের কাঁচা লম্বা সবুজ রংয়ের ফলটি ফাল্গুন-চৈত্র মাসে সবজি হিসাবে খুবই জনপ্রিয়।

আমরা বাঙ্গালীরা লাঠির মতো লম্বা এই ফলটিকে সজনে ডাটা বলে থাকি। ইংরেজিতে এটাকে ঢোলের লাঠি বা Drumstick বলা হয়ে থাকে। ঔষধি উদ্ভিদ সজিনার বৈজ্ঞানিক নাম Moringa Oleifera. সজনে বা সজিনা- এর বাংলা নাম।

সজনা পুষ্টির ডিনামাইট

সজিনা উচ্চপুষ্টি ও খাদ্যগুণসম্পন্ন একটি সবজি। সজিনা গাছকে প্রচলিত বিভিন্ন খাদ্য প্রজাতির মধ্যে সর্বোচ্ছ পুষ্টিমান সম্পন্ন উদ্ভিদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর ফল,পাতা, ফুল, ছাল, শিকড়- সবকিছুই অতি পুষ্টিসম্পন্ন। দক্ষিণ আফ্রিকার লোকেরা এটিকে ম্যাজিক ট্রি বলে থাকেন।

আয়ুর্বেদে সবুজ ও লাল এই দুই রঙের সজিনা গাছের কথা উল্লেখ আছে। শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সবগুলো ভিটামিনের সাথে আবশ্যকীয় সব অ্যামিনো এসিড সজিনা ডাটা, পাতায় বিদ্যমান বলে বিজ্ঞানীরা একে পুষ্টির ডিনামাইট হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।

সজনাতে বিদ্যমান পুষ্টিগুণ

সজিনাতে অনেক উপকারী উপাদান আছে। উল্লেখযোগ্য কিছু উপাদান নিচে দেওয়া হলো:

  • প্রোটিন: ২ গ্রাম
  • ভিটামিন B6: ১৯%
  • ভিটামিন C: ১২%
  • Iron: ১১%
  • রিবোফ্লাভিন (B2): ১১%
  • ভিটামিন A (বিটা ক্যারোটিন থেকে ): ৯%
  • ম্যাগনেসিয়াম : ৮%

সজনে ডাটার উপকারীতা:

পুষ্টির ডিনামাইট সজিনা খুবই উপকারী। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারীতা আলোচনা করা হলো:

  • সজিনাতে খুব বেশি পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা শরীরের ফ্রি রাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে। ফ্রি রাডিক্যাল হার্ট এর রোগ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের জন্য দায়ী।
  • রক্তে অতিমাত্রায় শর্করা ডায়াবেটিস রোগের প্রধান কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে সজিনা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • ভ্যারিসেলা জোস্টার নামক ভাইরাস এর আক্রমণে জলবসন্ত রোগ হয়। এই ভাইরাস প্রতিরোধে সজিনা ভালো কাজ করে।
  • সজনে ডাটা খেলে মুখে রুচি বাড়ে। সজনে ডাঁটার মতো এর পাতারও রয়েছে যথেষ্ট গুণ। সজনে পাতা শাক হিসেবে, ভর্তা করেও খাওয়া যায়। এতে মুখের রুচি আসে।
  • পেটের সমস্যায় বহুকাল আগে থেকে সজনে হজমের সহায়ক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পেটে গ্যাস হলে, বদহজম হলে এবং পেটে ব্যথা হলে সজনের তৈরি তরকারীর ঝোল খেলে পেটের সমস্যার উপশম হবে।
  • সজনে ডাঁটা খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। সজনে দেহের কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • সজনে পাতা বেটে অল্প গরম করে ফোঁড়ার ওপর লাগালে ফোঁড়া ফেটে যায়।
  • খুসকি কমাতে সাহায্য করে। সজনে পাতার রস মাথায় ঘষলে খুসকি কমে যায়।
  • দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া এবং মাড়ি ফুলে যাওয়া থেকে মুক্তি দিতে পারে সজনে পাতা। সজনে পাতা ১/২ মগ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে ভালও করে প্রতিদিন কুলকুচা করতে হবে। এতে মাড়ির সমস্যার সমাধান হয়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • কোষ্টকাঠিন্য দূর করে।

কি কি উপায়ে সজিনার ডাটা খেতে পারি?

আমরা ভোজনপ্রিয় বাঙ্গালীরা সজনে ডাটা অনেক ভাবেই রান্না করে থাকি। তবে সবথেকে মজার এবং পরিচিত রেসিপি হলো-

  • সরিষা বাটা ও আলু দিয়ে সজনে ডাটার ঝোল ও
  • সজনে ডাটা, লাউ ( কুঁচি কুঁচি করে কেটে ), কুমড়ো বড়ি,সরিষা ফোড়ন দিয়ে ঘন্ট।
  • পরবর্তী রেসিপিটা হলো- ডাল, আলু দিয়ে সজনে ডাটার ঝোল।
  • এছাড়া দই + সজনে ডাটা + সরিষার তেল + কাঁচা ঝাল- এই রান্নাটা খেতেও খুব ভালো লাগে।

নিরামিষতো হলো এবার আসি আমিষের দিকে।

  • সজনে ডাটা ও আলু দিয়ে রুই মাছের ঝোল (সাথে ২-৩টা কাঁচা পাকা টমেটো দিলে একেবারে জমে ক্ষীর )
  • সজনে চিংড়ীর ঝোল বা আপনি নতুন কিছু এক্সপেরিমেন্টও করতে পারেন।

আপনি যদি গুগলে Moringa Olifera বা drumstick লিখে সার্চ করেন তাহলে সজনের ডাটা, পাতা ও ফুলের অসাধারণ উপকারিতা দেখে অবাক হবেন। কমপক্ষে ৩০০- রোগের চিকিৎসায় এই গাছটি ব্যবহার করা হয়।