সামান্য খরচে এলার্জিকে আজীবনের জন্য বিদায় জানান। কি করতে হবে জেনে নিন।

এলার্জি কি?

বিশেষ কিছু খাবার, ধুলোময়লা, পরাগরেণু, গৃহপালিত পশুর পশম, মৌমাছির বিষ ইত্যাদির উপর শরীরের অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়াকে এলার্জি বলে। অনেকে এলার্জি সমস্যা নিয়ে অতিমাত্রায় অস্বস্তিতে থাকেন।

পশম, ধুলোময়লা, মশা, মৌমাছি বা অন্যান্য পোকামাকড়ের কামড় সহজে এড়িয়ে গেলেও খাবারের এলার্জিটা মানুষকে বেশি ভোগায়। চোখের সামনে এতো সুস্বাদু খাবার লোভও সামলানো যায় না।

ডিম, দুধ, মাছ, মাংসে এলার্জি তবুও খেয়ে ফেলছি বেশি পরিমানে। তবে সচেতনতার সাথে খাদ্য গ্রহণ করে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতির সাথে সাথে এলার্জি সমস্যা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর জন্য দামি ওষুধই লাগবে এমনটি নয়।

ঘরোয়া টোটকা অবলম্বন করে আমরা সহজে এটা দূর করতে পারি।

এলার্জিক উপসর্গ সমূহ

নাক, চোখ এবং শরীরের ত্বক (চামড়ায়) সাধারণত এলার্জির উপসর্গসমূহ দেখা যায়। চামড়ায় লাল লাল ফুসকুড়ি, চাকা চাকা হয়ে এক এক জায়গা ফুলে যায় সেই সাথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া। নাক দিয়ে পানি পড়ে। নাক বন্ধ হয়ে যায়।

চোখ লাল হয়ে ফুলে ওঠে এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চুলকানি ও এলার্জি যেনো সমার্থক।অনেকের বমি বমি ভাব, অস্থিরতা, মুখ, ঠোঁট, গাল, গলায় প্রদাহ, পেটের সমস্যা ইত্যাদি।

পোকামাকড় বা মৌমাছির কামড়ে ফুলে ব্যাথা হওয়া, উদ্বিগ্নতা, হঠাৎ প্রেসার কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা এবং ধুলোময়লা ও পশুপাখির বিষে হাঁচি-কাশি ও নাক দিয়ে পানি পড়া অবশ্যাম্ভাবী।

ঝুঁকির কারণসমূহ

১. পারিবারিক ইতিহাস– Asthma ও এলার্জির সমস্যা পারিবারিকভাবে থাকলে।
২. শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাই তারা সহজে আক্রান্ত হয়।
৩. অন্ধকারময় পরিবেশে থাকলে।
৪. সিজারের মাধ্যমে জন্মানো বাচ্চা।
৫. Asthma থাকলে।

বহুল পরিচিত এলার্জিক খাবার:

১. ডিম: বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশ। মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিমের প্রতি শরীরের সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া বেশি দেখা যায়।
২. মাংস: গরুর মাংস, খাসির মাংস, শুকরের মাংস ইত্যাদি।
৩. মাছ: চিংড়ী মাছ- গলদা চিংড়ী, বাগদা চিংড়ি সহ সকল প্রকার চিংড়ি মাছ। ইলিশ মাছ, কাঁকড়া মাছ ইত্যাদিতেও প্রতিক্রিয়া দেখা যাই তবে মাছের ক্ষেত্রে শিশুদের চেয়ে বয়স্কদের বেশি allergic উপসর্গ দেখা যায়।
৪. দুধ: বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হিসাবে দেখা যায়।
৫. গম বা আটা :বাচ্চারা ভুগে থাকে।
৬. এছাড়া বাদাম, সোয়াবেন, নারকেল, কিছু ফল ও সবজি, মশলা, তিল, কিডনি bean, গ্রীনপিস, cereal ইত্যাদিতে দেখা যায়।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে এলার্জি দূর করা যায় :

বাড়িতে বসে খুব সহজ উপায়ে এলার্জি সমস্যা সমাধান করা যায়। বলা যাই,এক ডালা পদ্ধতি আপনার সামনে উপস্থাপন করা হলো।

নিমপাতা :

বাড়ির আঙিনা, বাগবাগিচা, পুকুরের পাড়, রাস্তাঘাট সর্বত্রই নিমগাছ দেখা যায়। আমরা সহজেই নিমপাতা সংগ্রহ করতে পারি। কয়েক হাজার বছর আগে থেকে আয়ুর্বেদে নিম পাতার গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিমপাতার উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এন্টিসেপটিক, এন্টিভাইরাল ,এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টিডাইবেটিক ও এন্টি allergic উপাদান শুধু নয় লিভার ডিটক্সিফাই করে এবং রক্ত পরিষ্কার করে। আয়ুর্বেদিক অনেক প্রকার ওষুধ তৈরিতে নিমপাতা ব্যবহার করা হয়। নিমপাতার রস খান বা পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে খান যেটাই করুন নিযমিত এক মাস খান। এলার্জি পালিয়ে যাবে। নিমপাতা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে ইসবগুলের ভুসির সাথে প্রতিদিন সকালে খালি পেতে খেতে পারেন। এক চামচ ভুসি ও এক চামচ পাতা চূর্ণ একটি গ্লাসে মিশিয়ে খেয়ে নিন।

হলুদ :

হলুদেরও প্রায় নিমের মতো গুনাগুন রয়েছে। হলুদের রয়েছে এন্টিইনফ্লামেটরি গুন। শরীরের বিষাক্ত-বর্জ্য বের করে দিয়ে শরীরকে পরিষ্কার করে। কাঁচা হলুদের রস খাওয়া অনেকটা অস্বস্তির ও কষ্টকর। আজকাল এগুলোরই ক্যাপসুল ও চূর্ণপ্যাক পাওয়া যায়। কারকিউমিন ক্যাপসুল প্রতিদিন দুইবার খাবার পরে জল দিয়ে সেবন করুন।

তুলসী ক্যাপসুল :

তুলসী গাছ অনেকের বাড়িতেই থাকে কিন্তু আমরা অনেকেই এর গুরুত্ব দেই না। জীবাণু প্রতিরোধী পবিত্র এই গাছটির রয়েছে অনেক গুন। এন্টিএলার্জি, এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিইনফ্লামেটরি, এন্টিমাইক্রোবিয়াল, immunomodulator কার্যকারিতা সম্পন্ন। তুলসী ক্যাপসুল প্রতিদিন দুটো করে দুইবেলা খাবার পর জল দিয়ে সেবন করুন।

মধু

প্রতিদিন অল্প করে মধু খান। পুদিনা পাতা, তুলসী পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। পুদিনা পাতা+ তুলসীপাতা+ চা + মধু। একত্রে এককাপ খেয়ে নিন।

ঠান্ডা খাবার

ঠান্ডা খাবার থেকে দূরে থাকুন। তৈলাক্ত ও স্টিকি খাবারও এড়িয়ে চলুন। সময়মতো আহার গ্রহণ করুন।

যোগ ব্যায়াম

যোগ ব্যায়াম করুন নিয়মিত। খুব ভোরে উঠে মেডিটেশন করে দিন শুরু করুন।

কোষ্টকাঠিন্য

কনস্টিপেশন বা কোষ্টকাঠিন্য এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন