শেয়াল ও সারসের গল্প।
একদিন এক শেয়াল নিমন্ত্রণ করল এক সারস পাখিকে। নিমন্ত্রণের দিন শেয়াল খুব যত্ন করে পায়েস রান্না করল। রান্নাবান্না শেষে টেবিলের দু’পাশে রাখল দুটি প্লেট আর মাঝখানে রাখল পায়েসের বাটি। এরপর মনে মনে শেয়াল বলল, সারস ভায়া জীবনেও এই ভোজের কথা তুমি ভুলবে না।
উঃ আমার আর র্ত সইছে না, কখন যে দেখব মজাটা। ঠিক এই সময় দরজায় টোকা পড়ল। শেয়াল মুচকি হেসে দরজা খুলে দিতেই দেখতে পেল সারস তার লম্বা ঠোঁটে হাসি মেখে হাজির।
শেয়াল স্বাগত জানিয়ে বলল, আরে সারস ভায়া, এসো এসো, রান্নাবান্না সব তৈরি। আগে খাওয়া-দাওয়াটা সেরে নেই তারপর বসে গল্পসল্প করা যাবে।
শেয়াল আর সারস পাশাপাশি খেতে বসল। শেয়াল তার লম্বা জিভ দিয়ে সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে চেটে চেটে প্লেটের সব পায়েস শেষ করে ফেলল।
কিন্তু সারস বেচারা তার ছুঁচালো লম্বা ঠোঁটটা কয়েকবার প্লেটে ডোবানোর চেষ্টা করল কিন্তু মুখে পায়েস উঠল না। এ দৃশ্য দেখে শেয়ালের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। সারসকে জব্দ করতে পেরে তার খুশির যেন শেষ নেই।
শেয়ালের চালাকি বুঝতে পেরে সারস বলল, এই যা শেয়ালভায়া একটা কথা তো তোমাকে বলতেই ভুলে গেছি। আজ যে আমি উপোস। এই মাত্র কথাটা মনে পড়ল। তোমার পায়েস খেতে পারছি না বলে মনে কিছু কর না ভাই।
এরপর সারস শেয়ালকে তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিল এবং কিছুক্ষণ পর চলে গেল। পরদিন শেয়াল গেল সারসের বাড়ি। কিছু গল্প আলাপ করার জন্য শেয়াল আর সারস আরাম করে চেয়ারে বসল।
টেবিলের দিকে তাকিয়ে শেয়ালের তো চক্ষু স্থির। টেবিলে সাজানো আছে দুটো সরু কলসি। তাতে কানায় কানায় ভর্তি করে ঢালা হয়েছে রসালো পায়েস। সারস শেয়ালকে উদ্দেশ্য করে বলল, জানি-তুমি পায়েস খেতে ভালবাস তাই আজ খুব যত্ন করে পায়েসই রাঁধলাম। এই বলে সারস কলসিতে লম্বা ঠোঁট ডুবিয়ে পায়েস খেতে মন দিল।
কিন্তু শেয়াল বেচারা গোমড়া মুখে বসে রইল। তার তো আর সারসের মত লম্বা ঠোঁট নেই যে, কলসতে তা ডুবিয়ে পায়েস খাবে? কিছুক্ষণের মধ্যে সারস সব পায়েস খেয়ে সাবাড় করে ফেলল।
এরপর ঢেকুর তুলে বলল, আরে একি শেয়াল ভায়া। তুমিতো কিছুই খেলে না। সব পায়েসই তো পড়ে রইল। সারসের কথাগুলো শেয়াল কি জবাব দেবে ভেবে পেল না। সারসের সঙ্গে সে যে প্রতারণা করেছে তার জবাব পেয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে রইল।