তরমুজের বীজ রক্তশূন্যতা দূর করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গরমের সময়ে অতি পরিচিত একটি ফল তরমুজ। মসৃণ সবুজ ত্বক, লাল সজ্জা এবং রস বিশিষ্ট এই ফলটির গুণ অনেক। গরমে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে তরমুজ খুবই কার্যকরী। একটি তরমুজের মধ্যে ৯৮ ভাগই পানি থাকে।
এই গরমে ঠান্ডা তরমুজ খাওয়ার মজাই আলাদা। বেশিরভাগ সময়ই সবাই তরমুজ খেয়ে এর বীজ ফেলে দিয়ে থাকেন। কিন্তু জানেন কি, তরমুজের বীজের কত গুণ? জানলে হয়তো এরপর থেকে আর এ বীজ ফেলে দিবেন না। কয়েকটি মারণব্যাধি থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে তরমুজের বীজ।
হার্টের রোগ এমনকি ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগও নিয়ন্ত্রণে আনে তরমুজের বীজে থাকা গুনাগুণ। গবেষকরা বলছেন, তরমুজের বীজে এমন এক রাসায়নিক থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী।
তরমুজের বীজে থাকে প্রোটিন, ভিটামিন, ওমেগা-3 এবং ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিংক, পটাসিয়াম এবং আরও অনেক পুষ্টি উপাদান।
তরমুজের বীজ খাওয়ার উপকারিতা
এবার জেনে নিন, তরমুজের বীজ খেলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি পাবেন-
হার্ট অ্যাটাক রোধ করে:
তরমুজের বীজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকেও হ্রাস করে। তরমুজের বীজে ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও রয়েছে সিটরুলিন নামের একটি উপাদান যা অ্যারোটিক ব্লাড প্রেসারকে কমিয়ে হার্টকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
পরিমাণ মতো তরমুজের বীজ হালকা করে ভেজে নিয়ে যদি খেতে পারেন, তাহলে শরীরে আয়রন এবং ভিটামিন “বি” এর ঘাটিতি কমতে শুরু করে। ফলে কেউ যদি অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা রোগে ভুগতে থাকেন, তাহলে নিমেষে সেই রোগ সেরে যায়। কারণ আয়রন শরীরে প্রবেশ করা মাত্র লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তাল্পতার প্রকোপ কমতে শুরু করে। অন্যদিকে ভিটামিন “বি” দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর একবার ইমিউনিটি যদি বেড়ে যায়, তাহলে শুধু সংক্রমণ নয় আরও একাধিক রোগের আক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা পায় শরীর।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে:
ডায়াবেটিস রোগী এখন প্রায় প্রত্যেক ঘরেই আছে। তাদের জন্য এ বীজ বিশেষ উপকারী। সম্প্রতি এক ইরানিয়ান স্টাডি অনুসারে, তরমুজের বীজে এমন কিছু উপাদান আছে, যা শরীরে প্লাজমা গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। এ কারণে ডায়াবেটিস ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়:
হজম ক্ষমতা বাড়াতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে তরমুজের বীজ। এতে থাকা জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়াম হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগ নিমেষেই কমে যায়।
শরীরে অ্যানার্জি বৃদ্ধি করে:
তরমুজের বীজে ক্যালোরি বেশি থাকে। এক আউন্স তরমুজের বীজে প্রায় ১৫৮ ক্যালোরি থাকে। তরমুজের বীজ থেকে আসা বেশিরভাগ ক্যালোরি স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে আসে।
তরমুজের বীজের গুঁড়ো এক কাপ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে আপনার অ্যানার্জি বাড়বে। সেই সাথে শরীরে মুহূর্তেই জোগাবে শক্তি।
মস্তিষ্কের সক্ষমতা বাড়ায়:
তরমুজের বীজে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই খনিজটি স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকলে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হতে শুরু করে। ফলে এক সময়ে গিয়ে অ্যালঝাইমারস বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই এই পুষ্টিকর উপাদানটির ঘাটতি যাতে কোনো সময় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।
হাড় মজবুত করে:
অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে কাজ করে তরমুজের বীজ। নিয়মিত এই বীজ খেলে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে এবং দুর্বলতা কমে। তরমুজের বীজ প্রতিদিনের ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদার ১৪০% পূরণ করতে পারে। এছাড়া এই বীজ কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। এসব পুষ্টি হাড়ের স্বাস্থ্যে অবদান রাখে এবং হাড়কে মজবুত করে।
রক্তশূন্যতা দূর করে:
তরমুজের বীজ রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। এক মুঠো তরমুজের বীজে প্রায় ০.২৯ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। আয়রন হিমোগ্লোবিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা শরীরের মাধ্যমে অক্সিজেন বহন করে। তরমুজের বীজ আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণকে স্বাভাবিক রাখে ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে:
তরমুজের বীজ মনস্যাচুরেটেড এবং পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভাল উৎস। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, মনস্যাচুরেটেড এবং পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে পারে এবং রক্তে “খারাপ” কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে।
চুলের জন্য ভালো:
চুলের জন্যও ভালো তরমুজের বীজ। এতে আছে প্রোটিন, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং কপার যা চুলের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। প্রোটিন চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। ম্যাগনেসিয়াম চুলের আগা ফাটা ও ভেঙে পড়া রোধ করে। এবং কপার মেলানিন উৎপাদন করে, ফলে চুল হয় রেশমি কোমল।
ব্রণ কমাতে সাহায্য করে:
ত্বকের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে তরমুজের বীজে থাকা পুষ্টিগুণ। তরমুজের বীজ ব্রণের প্রাদুর্ভাব রোধ করে, ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে, নিস্তেজতা রোধ করে এবং বার্ধক্যের প্রাথমিক লক্ষণগুলিও প্রতিরোধ করে। পাশাপাশি বলিরেখা দূর করে। ফলে ত্বক থাকে টানটান।
জিংক সমৃদ্ধ:
তরমুজের বীজ জিংক এর একটি ভাল উৎস। এক আউন্স তরমুজের বীজ প্রায় ২৬% জিংক সরবরাহ করে। জিঙ্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ:
তরমুজের বীজে বেশ কয়েকটি খনিজ রয়েছে তার মধ্যে একটি হল ম্যাগনেসিয়াম। ৪ গ্রাম তরমুজের বীজে ২১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যা প্রতিদিনের চাহিদার ৫% পূরণ করতে পারে।
ম্যাগনেসিয়াম শরীরের বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপগুলির জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। এটি স্নায়ু এবং পেশী ফাংশন ঠিক রাখার পাশাপাশি অনাক্রম্যতা, হার্ট এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
সতর্কতা
যা কিছু খাবেন পরিমিত পরিমাণে খাবেন। অতিরিক্তি কোন কিছুই ভালো নয়। এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।