করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে ভিটামিন “ডি” এর কার্যকারিতা।
ভিটামিন ‘ডি’ সোলার ভিটামিন বা সানসাইন ভিটামিন নামে পরিচিত। ভিটামিন ডি কে কখনও কখনও “রোদ ভিটামিন” বলা হয় কারণ এটি ত্বকে সূর্যের আলোর প্রতিক্রিয়া থেকে তৈরি হয়।
এটি একটি ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন যাতে ভিটামিন ডি-1, ডি-2, এবং ডি-3 অন্তর্ভুক্ত। ভিটামিন ‘ডি’ এমন পুষ্টি উপাদান যা শরীর নিজে থেকে তৈরি করতে পারে না।
তাই কোনও ব্যক্তিকে অবশ্যই তার খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন “ডি” গ্রহণ করতে হবে।
তবে মানব শরীর ভিটামিন “ডি” তৈরি করতে পারে সূর্যালোকের সাহায্যে। সূর্যের আলো বা সকালের রোদ গায়ে মাখুন।
মধ্যাহ্ন কালও ভালো বিশেষতঃ গ্রীষ্মের সময়, সূর্যের আলো পাওয়ার উপযুক্ত সময়। তবে দিন যত গড়ায় ইউভি (UV) রশ্মি সবচেয়ে তীব্র হয়। তাই সকালের রোদটাই নিরাপদ।
কোনও ব্যক্তি নির্দিষ্ট খাবার বা পরিপূরকের মাধ্যমে ভিটামিন “ডি” গ্রহণ বাড়িয়ে তুলতে পারেন। স্বাস্থ্যকর হাড় এবং দাঁত বজায় রাখা সহ বিভিন্ন কারণে ভিটামিন “ডি” প্রয়োজনীয়।
এটি টাইপ-1 ডায়াবেটিসের মতো বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত ভিটামিন ডি-৩ ফুসফুসের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জীবাণুবাহিত রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।
ইউরোপের দেশগুলোতে করোনাভাইরাসে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু এবং জনগণের শরীরে কম পরিমাণ ভিটামিন “ডি” থাকার মধ্যে একটি সম্পর্ক পাওয়া গেছে নতুন এক গবেষণায়।
ভিটামিন “ডি” ও করোনাভাইরাস :
করোনা ভাইরাসের আক্রমণে অতিমাত্রার ইনফ্ল্যামেটরি মেডিয়েটর সাইটোকাইন রিলিজ হয়। এই সাইটোকাইনের প্রভাবেই ফুসফুস তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অক্সিজেন স্বল্পতা ঘটে অবশেষে মাল্টি অর্গান ফেইলর হয়ে মৃত্যু হয়।
ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজে অবস্থিত অ্যাঙলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটির গবেষক ডা. লি স্মিথ এবং কুইন এলিজাবেথ হসপিটালের ডা. পিটার ক্রিস্টিয়ান ইলি এ ব্যাপারে গবেষণা করেন।
এজিং ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল জার্নালে তাদের গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, শরীরে ভিটামিন “ডি” কম থাকার কারণে দ্রুত ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্তের শঙ্কা থাকে।
শ্বেত রক্ত কণিকা প্রাণবন্ত করে তোলার কাজ করে ভিটামিন “ডি”। কিন্তু শরীরে এর মাত্রা কম থাকলে ভাইরাস দ্রুত সংক্রমণ ঘটায়।
ডা. লি স্মিথ বলেন, ইউরোপের ২০টি দেশে আমরা পরিসংখ্যান চালিয়ে দেখেছি, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, তাদের শরীরে ভিটামিন “ডি” কম।
তিনি আরও বলেন, ভিটামিন “ডি” পারে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে। যাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি কম, করোনা আক্রান্ত হলে তাদের পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে। যারা গুরুতর আক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে, তাদেরও ভিটামিন “ডি” এর অভাব দেখা যাচ্ছে।
ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে কেউ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবেন না, এমন কোন প্রমাণ নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মহামারির সময় ভিটামিন “ডি” নেয়ার আলাদা উপকারিতা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে মেডিসিনের ইমেরিটাস প্রফেসর জন রোডস বলেন, ভিটামিন “ডি” শরীরের অভ্যন্তরীণ জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়তা করে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অত্যন্ত অসুস্থ ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ প্রদাহের কারণে ফুসফুসে বড় ধরণের ক্ষতি হয়, যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর হতে পারে ভিটামিন “ডি”।
তবে এই বিষয়ে আরো অনেক গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন অধ্যাপক রোডস।
ভিটামিন ডি এর উৎস:
প্রতিদিন সকালে অল্প কিছুক্ষন সময় (২০ থেকে ৩০ মিনিট) রোদে হাঁটার অভ্যাস করুন। পর্যাপ্ত রৌদ্রের আলো পাওয়া শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন “ডি” উৎপাদন করতে সাহায্য করে। ভিটামিন “ডি” এর প্রচুর খাদ্য উৎস রয়েছে, যেমনঃ
- চর্বিযুক্ত মাছ
- কড লিভার মাছের তেল।
- ডিমের কুসুম
- পনির
- চিংড়ি
- মাশরুম
- দুধ, দই (fortified)
- Fortified সিরিয়াল এবং কমলার রস।
- ভিটামিন ‘ডি’ ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারেও পাওয়া যায়।
- ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটের সঙ্গে ভিটামিন ডি-৩ মিশ্রিত থাকে।
একদিনে কি পরিমাণ ভিটামিন “ডি” গ্রহণ করা উচিত?
একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যাক্তির ১০-২০ মাইক্রোগ্রামে ভিটামিন “ডি” গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, রক্তের সর্বোত্তম মাত্রা বজায় রাখতে ২৫-১০০ মাইক্রোগ্রাম দৈনিক প্রয়োজন।
ভিটামিন “ডি” প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর হাড় এবং দাঁত গঠনে। এটি প্রতিরোধ ক্ষমতা, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারে।
ইনসুলিনের স্তর নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফুসফুস ফাংশন এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ভোরের রোদে কি ভিটামিন “ডি” থাকে?
অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, এটি কেবলমাত্র ভোরের সূর্য – অর্থাৎ সকাল ৭ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত যা ভিটামিন “ডি” তৈরি করতে সহায়তা করে।
সকাল ১০ টার পরে, সূর্যের আলোতে থাকা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। Vitamin”D” not only a vitamin but also a prohormone, or precursor of a hormone .
ভিটামিন “ডি” পেতে কতক্ষণ বাইরে থাকতে হবে?
এটি কতটা ত্বক উন্মোচিত এবং দিনের সময়ের উপর নির্ভর করে। আপনি যদি ফর্সা স্কিনযুক্ত হন তবে, সানস্ক্রিন ছাড়া দিনের মাঝখানে কয়েক মিনিটের বাইরে বাইরে ভিটামিন “ডি” পাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট হবে।
তবে আপনি যদি ইতিমধ্যে ট্যানড হন তবে, আপনার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দরকার হতে পারে।
তাহলে কি প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন “ডি” খাওয়া উচিত?
উত্তর হলো, না। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট বা ট্যাবলেট খুবই নিরাপদ হলেও প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
আপনি যদি ভিটামিন “ডি” সাপ্লিমেন্ট নিতে চান:
- ১-১০ বছরের শিশুদের দিনে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি নেয়া উচিত নয়
- ১২ মাসের নিচে শিশুদের দিনে ২৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি নেয়া উচিত নয়।
- প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ১০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি নেয়া উচিত নয়।
যাদের ভিটামিন ডি’র স্বল্পতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ডাক্তাররা অতিরিক্ত ভিটামিন “ডি” গ্রহণ করতে বলে থাকেন। আবার বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা – যেমন কিডনির সমস্যা – থাকলে নিরাপদে ভিটামিন “ডি” নেয়া যায় না।
সূত্রঃ medicalnewstoday, healthline