আতা ফল দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধী ও বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর করে।
আতা, এই ফলটি আমরা ভুলতে বসেছি। অনেকে আবার বলে বসবে এটা আবার কি ফল। এই নামে কোনো ফল আছে নাকি? হ্যাঁ আছে! যাদের গ্রামের সাথে সম্পর্ক আছে। তারা চিনবেন বা অনেকের বাড়ির আঙ্গিনায় হয়তো আতা গাছ আছে।
আতা ফুলে খুব ঘ্রাণ হয়। ঘ্রাণ এতো মধুর যে ঘ্রাণ শুকে অনেকে বলে দিতে পারবে আতা গাছ আশপাশেই কোথাও আছে। এই ফলের ভিতরে অনেকটা কাঁঠালের মতো দেখতে। ছোট ছোট কোষে ভর্তি।
প্রতিটি কোষের ভেতরে থাকে একটি করে বীজ, বীজকে ঘিরে থাকা নরম ও রসালো অংশই খেতে হয়। আতা ফুলে যেমন ঘ্রাণ পাকা আতাতেও তেমনি মন মাতানো ঘ্রাণ।আতা গাছে তোতা পাখি এই মিষ্টি ছড়া ছেলেবেলায় কে না পড়েছে! আতা শরিফা, শরীফা এবং নোনা নামেও পরিচিত। আতা ফলের বেশ কয়েকটি প্রজাতি আছে।
আতা শক্তির উৎস। এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও শর্করা রয়েছে। এছাড়াও এতে ভিটামিন “সি” এবং ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি-6, ভিটামিন বি-2, ভিটামিন বি-3, ভিটামিন বি-5, ভিটামিন বি-9, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম রয়েছে।
আতা খাওয়ার সময় জিভে চিনির মতো মিহি দানা দানা লাগে। আতা cherimoya নামেও পরিচিত।
আতার পুষ্টিউপাদান
এই ফলটিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। নিচে এর গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানগুলি দেওয়া হলো –
- ক্যালরি: ৯৪
- ফাইবার:৪.৪ গ্রাম
- থায়ামাইন (বি 1):১০% (DV)
- রিবোফ্লাভিন (বি 2):৯% (DV)
- নায়াসিন (বি 3): ৬% (DV)
- ভিটামিন বি 6: ১৫% (DV)
- ভিটামিন “সি”: ৪৪% (DV)
- আয়রন: ৫% (DV)
- ম্যাগনেসিয়াম: ৬% (DV)
- ম্যাঙ্গানিজ: ২০% (DV)
- পটাসিয়াম: ৫% (DV)
আতা ফলের উপকারীতা
এতে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে, বার্ধ্যকতা দূরে রাখে, হার্টের জন্য ভালো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। আতা ফলের পাশাপাশি আতা গাছের পাতা ও শিকড়রের অনেক উপকারীতা রয়েছে। নিচে আতা ফলের উপকারীতা দেওয়া হলো –
উচ্চ রক্তচাপ রোধ করতে পারে:
আতাতে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম উভয়ই রক্তনালী প্রসারণ করে, ফলে রক্তচাপ নিম্ন থাকে। উচ্চ রক্তচাপ হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
একটি পর্যালোচনাতে দেখা গেছে যে, যারা অল্প পরিমাণের ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করেছিলেন তাদের তুলনায় যারা সবচেয়ে বেশি ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি 8% কম ছিল।
চোখের জন্য ভালো:
এই ফলটি চোখের জন্য খুব ভালো। কারণ এটি ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট লিউটিন সমৃদ্ধ। এটি আমাদের চোখের অন্যতম প্রধান অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ফ্রি র্যাডিকালগুলির সাথে লড়াই করে সুস্থ্য দৃষ্টি শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বেশ কয়েকটি গবেষণা বলে, উচ্চ লিউটিন গ্রহণ বয়সের সাথে সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয়ের (ছানি পড়া) ঝুঁকি কমিয়ে দেয়, যা চোখের ক্ষতি রোধ করে এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো করতে সাহায্য করে।
মন মেজাজ ভালো করে:
খুবই সুস্বাদু ফল আতা ভিটামিন বি-6 এর একটি দুর্দান্ত উৎস। ১ কাপ আতাতে ৩০% (RDI) এর বেশি ভিটামিন বি-6 থাকে। ভিটামিন বি-6 সেরোটোনিন এবং ডোপামিন সহ নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা আমাদের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
২৫১ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ভিটামিন বি-6 এর ঘাটতি হতাশা বাড়িয়ে দেয়।
হজমের জন্য ভালো:
এক কাপ আতাতে প্রায় ৪.৪ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার থাকে। ফাইবার হজম না হয়ে মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে অন্ত্রের গতি বিধি ঠিক রাখে। এছাড়াও, এতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রের ভালো ব্যাকটিরিয়া বৃদ্ধি করে।
এতে হজমশক্তি ঠিক থাকে ও পেটের সমস্যা দূর হয়। তাই যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা আতা ফল খেলে অনেক উপকার পাবেন।
এন্টি-ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
সুমিষ্ট এই ফটিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যৌগ রয়েছে, যা ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। আতাতে অনেক ধরণের ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যেমন- কেটাচীন, এপিকেচিন (epicatechin) এবং এপিগ্যালোকোটিন (epigallocatechin)।
কিছু টেস্ট-টিউব স্টাডিজ এ দেখা গেছে, এই flavonoids (ফ্ল্যাভোনয়েডস) ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি থামাতে পারে। আরেকটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ক্যাটচিন স্তন ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি ১০০% কমিয়ে দিতে পারে।
বার্ধক্যতা দূর করে:
বয়সের সাথে সাথে বার্ধক্য একটি সাধারণ বিষয়। তবে কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের বার্ধক্য প্রক্রিয়া একটু ধীরে করে দিতে পারে। তার মধ্যে আতা ফল একটি। আতা ফলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ন্ত্রণ করে ত্বককে বার্ধক্যতার হাত থেকে দূরে রাখে। এছাড়া আতা ফল চুলের জন্যও বেশ উপকারী।
প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে:
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বা ব্যথা হার্টের রোগ এবং ক্যান্সারসহ বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক অসুস্থ্যতার কারণ হতে পারে। আতাতে বেশ পরিমাণে কাউরেনোইক (kaurenoic) এসিড সহ বেশ কয়েকটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ রয়েছে। এই অ্যাসিডটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসাবে কাজ করে এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
অন্যান্য ফলের মতো আতাতেও ভিটামিন “সি” রয়েছে। ভিটামিন “সি” এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। আতাফলে থাকা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। দুরারোগ্য ব্যাধিকে দূর করে আমাদের সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।
আতা ফলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আতা ফলে অ্যানোনাসিন রয়েছে যা স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। এজন্য যাদের পার্কিনসন ডিজিজ বা অন্য কোনও স্নায়ুতন্ত্রের রোগ আছে তাদের আতা ফল এড়িয়ে চলাই ভালো। এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আতা ফল খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।