অ্যালকোহল বা মদ্য পানের ক্ষতিকর প্রভাব কি কি?
নিয়মিত মদ্যপান কারার কারনে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য কখনোই উপকারী নয়।
মদ্যপান কারার কারনে মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে অ্যালকোহল।
মদ্যপান ফুসফুসের ভারসাম্য নষ্ট করে ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। মদ্যপান করার পর যানবাহন চালানো দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে এবং এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
২.২ শতাংশ নারী এবং ৬.৮ শতাংশ পুরুষের অপরিণত বয়সে মৃত্যুর জন্য দায়ী হলো মদ্যপান।
অ্যালকোহল বা মদ্য পানের ক্ষতিকর প্রভাব কি কি
অ্যালকোহল বা মদ্য পানের ক্ষতিকর প্রভাব নিচে আলোচনা করা হলো-
মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর:
মদ্যপান করার ফলে মানুষের রক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ করে যে রক্তনালী সেগুলোর ক্ষতি হতে পারে। যার কারণে স্মৃতি লোপ পেতে পারে।
অ্যালকোহল মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। এতে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। এজন্য মদ্যপানের পর কখনোই গাড়ি চালানো উচিত নয়।
যেহেতু অ্যালকোহল আপনার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে, এতে পায়ে এবং হাতে অসাড়তা অনুভব করতে পারেন।
শ্বাসকষ্ট:
যে সকল প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ মদ্যপান করেন তাদের শ্বাসে নাইট্রিক অক্সাইডের পরিমাণ যারা মদ্যপান করে না তাদের থেকে কম হয়ে থাকে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করে যে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া তা থেকে শ্বাসতন্ত্রকে রক্ষা করে নাইট্রিক অক্সাইড। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় আমাদের শরীরে এই বর্ণহীন গ্যাস সৃষ্টি হয়।
হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি:
মদ্যপানের কারণে হৃৎপিণ্ডের সংকোচন-প্রসারণ অনিয়মিত হয়ে পড়ে এটি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
যদি নিয়মিত পান করা হয় তাহলে এর অবস্থার অবনতি হতে পারে৷ হৃৎপিণ্ডে কোলেস্টোরল জমে যাওয়া থেকে মুক্ত হতে হলে মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি:
একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, মদ্যপান করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
যারা অল্প পরিমাণে মদপান করে তাদের তুলনায় যারা মদ খান না তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও কম থাকে।
লিভারের রোগ:
যারা বেশী মদ্য পান করেন এবং যাদের ওজন বেশী তাদের লিভারের রোগ হওয়ার ঝুকি যেমন বেশী থাকে তেমনি মৃত্যুর সম্ভাবনাও বেশী।
লিভার আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ অপসারণ করতে সহায়তা করে। দীর্ঘমেয়াদী অ্যালকোহল পান লিভারের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় যা লিভার সিরোসিস নামে পরিচিত।
পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের ধীরে মদের বিপাক ক্রিয়া ঘটে। তাই মদ খেলে মহিলাদের লিভার বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়:
প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীরের আক্রমণকারী জীবাণু এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
যারা দীর্ঘ সময় ধরে প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করেন তাদের সাধারণ মানুষের তুলনায় নিউমোনিয়া বা যক্ষ্মা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
চিনির মাত্রা বৃদ্ধি পায়:
অগ্ন্যাশয় আপনার শরীরের ইনসুলিন ব্যবহার এবং গ্লুকোজের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যখন আপনার অগ্ন্যাশয় সঠিকভাবে কাজ করে না তখন রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
অ্যালকোহল পানের ফলে অগ্ন্যাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত অগ্ন্যাশয় চিনি ব্যবহার করার জন্য শরীরকে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে বাধা দিতে পারে।
তাই ডায়াবেটিস বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা এড়ান উচিত।
দাঁত নষ্ট হওয়া:
নিয়মিত মদ্যপান করলে দাঁতে জমা হওয়া ‘প্লাক’ এর মাত্রা বেশি হয়। ফলে দাঁত নষ্ট হতে পারে এবং ‘প্রিডেন্টাল ডিজিজ’ হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।
অ্যালকোহল অনেক সময় দেখা যায় সোডা এবং জুসের সাথে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়ে থাকে যেগুলোতে চিনির মাত্রা অনেক বেশি থাকে। ফলে দাঁত নষ্ট হওয়ার ঝুকি বাড়ে।
হজমের সমস্যা:
অ্যালকোহল সেবন এমন একটি বিষয় আপনি যত বেশি পান করবেন তত বেশি ক্ষতি হবে।
মদ্যপান আপনার পরিপাকতন্ত্রের টিস্যুগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং অন্ত্রকে খাদ্য হজম, পুষ্টি এবং ভিটামিন শোষণ করতে বাধা দেয়। ফলে অপুষ্টি দেখা দিতে পারে।
এছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে গ্যাস্ট্রিক, পেটে পূর্ণতার, ডায়রিয়া, কোষ্টকাঠিন্য হতে পারে। যারা প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান পান করেন তাদের আলসার বা অর্শ্বরোগ হয়।
অ্যালকোহল বা মদ্য পান আমাদের শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। অ্যালকোহল বা মদ্য পানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।