সফেদা দেহে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে, কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে ও স্নায়ু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
আম জাম কাঁঠাল এর পরেই সফেদার স্থান। অনেকে বলবে লিচু আপেল আঙ্গুর থাকতে সফেদা কেন। কেউ কেউ আবার বলে বসবে আমি কিন্তু সফেদা খাই না। হয়তো এটা সবার পছন্দের না তারপও আমি এটাকে আম, জাম, কাঁঠালের পরেই রাখব।
কারণ সফেদার পুষ্টিগুণ ও ঘ্রাণ আম জাম কাঁঠালের থেকে কোন অংশে কম নয়। শুধু আর ঘ্রাণের কথা কেন বলছি স্বাদেও কোন অংশে কম নয়।
এক গুচ্ছ সবুজ পাতার মাঝ খানে বাদামী রঙের ফল। ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে সফেদাকে বলা হয় ‘মিস্পেল’, হন্ডুরাস, ব্রাজিলে বলা হয় ‘sapoti’, ফিলিপাইনে এর নাম ‘chico’ ভারতে এর নাম ‘চিকু’ বা ‘চিক্কু’। বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতে এর নাম “sobeda/sofeda” (সবেদা বা সফেদা)।
সফেদা গ্রীষ্মকালীন ফল কিন্তু কম বেশি সারা বছর ধরে পাওয়া যায়। সফেদায় আছে অনেক ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
সফেদার পুষ্টিগুণ
নিচে সফেদার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো –
- ক্যালরি: ৩৪৭
- পানি: ৭৮%
- কার্বোহাইড্রেট: ১৫%
- ফাইবার: ১৪%
- ফোলেট: ৪%
- পেন্টোথেনিক অ্যাসিড: ৬%
- থায়ামিন: ৫%
- ভিটামিন “এ”: ২%
- ভিটামিন “সি”: ২৪.৫%
সফেদার উপকারিতা
সফেদার (Sapodilla) অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশাপাশি সৌন্দর্য উপকারিতাও রয়েছে। সফেদার স্বাস্থ্য উপকারীতা নিচে দেওয়া হলো –
কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে:
সফেদা একটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ ফল। এতে থাকা ফাইবার হজম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এছাড়া সফেদা বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। আধাপাকা সফেদা জলে ফুটিয়ে কষ বের করে খেলে ডায়রিয়া ভালো হয়।
চোখের জন্য ভালো:
দিনে একটি সফেদা চোখের ডাক্তারকে দূরে রাখতে পারে। এতে ভিটামিন “এ” রয়েছে। ভিটামিন “এ” আমাদের চোখকে সুস্থ্য রাখে এবং বৃদ্ধ বয়সেও দৃষ্টি উন্নত করতে সহায়তা করে। সুতরাং, দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে প্রতিদিন অবশ্যই সফেদা খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
শক্তি সরবরাহকারী:
সফেদায় প্রাকৃতিক ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ রয়েছে। যা আমাদের দেহে তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করতে পারে। বিশেষ করে অ্যাথলিটদের জন্য প্রচুর পরিমাণে শক্তি প্রয়োজন হয়। তাই অ্যাথলিটদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় সফেদা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস:
ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন “এ”, “বি” এবং “সি” ছাড়াও সফেদাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও রয়েছে। তাই এটি মুখ গহ্বরের ক্যান্সারের মতো নির্দিষ্ট কয়েক ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।
অনিদ্রা দূর করে:
এটি স্নায়ু শান্ত এবং মানসিক চাপ উপশম করার ক্ষমতা রয়েছে। ডাক্তাররা অনেকেই অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিকে সফেদা ফল খেতে বলেন। এতে অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সৌন্দর্য উপকারীতা:
নিয়মিত সফেদা খেলে শরীর থেকে টক্সিন অপসারণ করতে সহায়তা করে। সফেদায় রয়েছে ভিটামিন “এ” ও “সি” যা ত্বকে সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। সফেদা একটি ‘হ্যাপি’ খাবার হিসাবে পরিচিত।
এটি কোলাজেন উৎপাদন করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। সফেদা ফলের বীজের ঔষুধি গুণাগুণ অনেক। চামড়ার যে কোন ধরণের ইনফেকশন দূর করতে সফেদা বীজের তেল বেশ কার্যকর। সফেদা ফল ত্বকের অয়েন্টমেন্ট হিসেবে কাজ করে।
সতর্কতা:
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।