সফল হতে সময়ের সঠিক ব্যবহার কিভাবে করবেন?
জীবনের অনেক দক্ষতার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হল সময়ের সঠিক ব্যবহার করা। সময়ের সঠিক ব্যবহার না করলে জীবনের কোন লক্ষ্যই অর্জন করা সম্ভব না। সময় যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা অনুধাবন করা যায় যখন সময় গত হয়ে যায়।
এটা আসলেই ব্যাপার না যে আপনি কে, আপনার বয়স কত, আপনার বর্ণ, আপনার গোত্র কারণ আমাদের সবার জন্যই ২৪ ঘন্টায় দিন। কত সময় বাকি আছে তার উপর ভিত্তি করে সফলতা নির্ধারণ হয় না বরং সফলতা নির্ধারণ হয় কতটা দক্ষতার সাথে সময়কে ব্যবহার করছি তার উপর।।
জীবনে সফল মানুষগুলো এই ২৪ ঘন্টা সময়কে দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে জীবনে সফল হয়েছে। আসুন জেনে নেই জীবনে সফলতার জন্য কিভাবে সময়ের সঠিক ব্যবহার করা যায়।
লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:
সময়ের সঠিক ব্যবহারের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ খুবই জরুরী। লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সফলতা অর্জন সম্ভব।
লক্ষ্য হতে পারে বছরের জন্য, লক্ষ্য হতে পারে মাসের জন্য, দিনের জন্য, ঘন্টার জন্য, মিনিটের জন্য। একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করে প্রত্যেকটি ধাপ অর্জনের জন্য সময় বন্টন করা উচিত।
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকা তৈরি করুন:
সময়ের সঠিক ব্যবহারের একটা বিশেষ দিক হলো সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকা তৈরি করা। একটা দিনে দেখা যায় দুটি অথবা তিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে। আমাদের উচিত এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে শেষ করা।
আমরা যদি আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোর উপর রাখি এবং নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারি, তাহলে দিনটিকে আমাদের সফল মনে হবে।
যে কাজটি করছেন তাতে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন:
এই মুহূর্তে যে কাজটি করছেন চেষ্টা করুন নিজের সম্পূর্ণ মনোযোগ সেই কাজটি উপর রাখতে। সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে কাজটি নির্দিষ্ট সময়ে শুধু শেষই হবে না কাজের কোয়ালিটি অনেক ভালো হবে।
এজন্য কাজের সময় মোবাইল ফোন, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, বন্ধুবান্ধব বা অন্যান্য মনোযোগ নষ্টকারী বিষয় থেকে দূরে থাকুন।
যত শীঘ্র সম্ভব শুরু করুন:
যে কোন কাজ প্রথমে দেখে অনেক সহজ মনে হলেও কাজটি করতে গিয়ে তার গভীরতা টের পাওয়া যায়। যেকোনো কাজকে অনেক সহজ মনে করে অযথা সময় নষ্ট না করে কাজটি একটু তাড়াতাড়ি শুরু করাই ভালো।
কাজ দেরিতে শুরু করলে শেষের দিকে অনেক চাপ সৃষ্টি হয় তেমনি কাজের মান ভালো হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের থেকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে কাজ শেষ করতে হয়।
কমপক্ষে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমান:
কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও সময়ের সঠিক ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই দরকারী। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য দিনে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমানো জরুরী। কম ঘুমালে বেশি সময় পাওয়া যায় এবং বেশি কাজ করা যায় ধারণাটা ঠিক নয়।
কম ঘুমালে আমাদের উৎপাদনশীলতা কমে যায়। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে ইনসোমিয়া (কম ঘুম) রোগে আক্রান্ত মানুষ বছরে প্রায় ১২ দিনের উৎপাদনশীলতা হারায়।
যে কাজ প্রতিদিন করছেন তাকে অভ্যাস বানান:
কিছু কাজ আছে যেগুলো আমাদের প্রতিদিন করতে হয় এমন কাজগুলোকে যদি অভ্যাস তৈরি করা যায় তাহলে কাজগুলো অনেক সহজে হয় এবং কাজের মধ্যে মজা থাকে।
কোন কাজকে যখন অভ্যাস করা হয় তখন কাজটি করতে আমাদের ব্রেইন কম সময় নেয় এবং ক্লান্তি বোধ কম থাকে।
প্রত্যেকটি কাজের একটা সময় নির্ধারণ করে দিন:
কোন একটা কাজ ঘন্টার পর ঘন্টা বসে করছি এবং ভাবছি কাজটি যতক্ষণ শেষ না হয় ততক্ষন করব। এভাবে চিন্তা না করে যদি কাজটির জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেই যেমন কাজটি চার ঘণ্টায় করব।
কাজের জন্য নির্ধারিত সময় আপনাকে চাপ প্রয়োগ করবে কাজটির প্রতি মনোযোগ দিতে যা আপনাকে অনেক বেশি কার্যকরী করে তুলবে।
টিভি, ইন্টারনেট, গেম এ বুঝে সময় দিন:
টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদির সুবিধা যেমন আছে তেমনি অনেক অসুবিধাও আছে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় এগুলো সহজেই গ্রাস করে নেয়।
ঘন্টার পর ঘন্টা টিভি দেখা, কিছুক্ষণ পর পর সোশ্যাল মিডিয়া আপডেট চেক করা বা মজার কোন গেম খেলা এগুলোতে কিছু শিক্ষণীয় থাকলেও জীবনের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না বরং জীবনের মূল্যবান সময় অপচয় হয়।
কম গুরুত্বপূর্ণ কাজকে না বলুন:
একটা দিনের প্রধান কাজ গুলোর উপর মনোযোগ রেখে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে কম প্রাধান্য দিন এবং না বলতে শিখুন।
একটি কাজের মধ্যে অনেক সময় ছোট অনেক কাজ যেটা না করলেও চলে, করতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। এমন কাজ গুলো কে না বলুন।
মনোযোগ বিঘ্নকারীদের সরিয়ে রাখুন:
গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে খেয়াল করুন কোন বিষয়গুলি আপনার মনোযোগের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। কাজের সময় এগুলো থেকে দূরে থাকুন।
উদাহরণস্বরূপ আপনি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন এমন সময় সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশন বা অপ্রত্যাশিত ফোন কল ইত্যাদি আপনার মনোযোগ নষ্ট করছে। সম্ভব হলে এগুলো সরিয়ে রাখুন।