সজনে চা বা মরিঙ্গা চা রক্তচাপ কমায়, ওজন কমায় ও অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

সজনে গাছ আমাদের দেশে খুবই সুপরিচিত। তবে গাছটির সঙ্গে পরিচয় থাকলেও গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে আস্তে আস্তে পরিচিত হচ্ছে গোটা বিশ্ব। এই গাছের পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে চা-কফি বা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ব্লাড প্রেসার কম থাকে। বাড়তি ওজনও ঝরে।

সজনে গাছের পাতা শুধু নয়, এই গাছের ছাল এবং বীজও শুকিয়ে গুঁড়ো করে একইভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে খাবারে বা পানীয়ে। সাধারণত আলোকিত জায়গায় বেড়ে ওঠায় সজনে গাছেল পাতা ও বীজে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই নির্ভয়ে যেকোনও খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।

সজনে গাছ অত্যন্ত পুষ্টিকর প্রোফাইল এবং শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং টিস্যু-প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্যের জন্য একটি নতুন “সুপারফুড” হিসাবে আরও জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে।

ভারত, পাকিস্তান এবং নেপাল এই দেশগুলি ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, রক্তাল্পতা, বাত, লিভার ডিজিজ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস, ত্বক, হজম জনিত ব্যাধি মতো রোগের চিকিৎসার জন্য প্রজন্ম ধরে সজনে পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

মরিঙ্গা ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন “এ”, “সি” এবং “ই” রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, এবং প্রোটিন।

সজিনা পাতা চা দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারি। গাছ থেকে ফ্রেশ পাতা ছিড়ে কিংবা পাতা শুকিয়ে চা বানাতে পারেন। পাতা শুকিয়ে হাত দিয়ে ভেঙে ভেঙে গুড়ি করে নিতে হবে। ১ কাপ পানি ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তাতে ১ চামচ গুড়ি করা সজনা পাতা দিয়ে ১-২ মিনিট জ্বাল দিয়ে নামিয়ে দিন। নামিয়ে ছেকে পান করুন মারিঙ্গা চা বা সজনা চা।

মরিঙ্গা চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা

নিচে সজনে চা বা মরিঙ্গা চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো –

রক্তচাপ কমায়:

মরিঙ্গা পাতা থেকে প্রস্তুত মরিঙ্গা চা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেটিভ দক্ষতার কারণে, রক্তচাপ রোগীদের প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে।

প্রদাহের সাথে লড়াই করে:

প্রদাহ ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, বাত এবং স্থূলত্বের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। সজনে পাতা দেহে প্রদাহজনক এনজাইম এবং প্রোটিন দমন করে প্রদাহ হ্রাস করে।

ত্বকের জন্য ভালো:

সজনে পাতার চা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা শরীরের প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি ত্বক এবং চুলের মান উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। তাই সৌন্দর্য্য পিপাসু লোকেরা সজনে পাতার চা নিয়মিত পান করার অভ্যাস করুন।

ওজন কমায়:

এ পাতা মানেই প্রচুর ভিটামিন আর খনিজের সম্ভার। সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তো আছেই। সজনে পাতায় ওজন কমানোর উপাদান যেমন রয়েছে, তেমনি আছে ফ্যাটের বদলে প্রচুর এনার্জি।

লো-ফ্যাটের হওয়ায় বারে বারে এই চা খেলেও কোন সমস্যা হবে না। সিন্থিয়া ট্রেনারের লেখা ‘হাউ টু লো ব্যাক ফ্যাট’ বই অনুসারে, “মরিঙ্গা চায়ে ওজন হ্রাসের প্রভাব দেখা যায়।

সুগার নিয়ন্ত্রণ করে:

রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে সজনে পাতার চা খেতে পারেন। এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রয়েছে যা কফিতে উপস্থিত থাকে। এটি সুগার লেভেল স্বাভাবিক রাখে। এছাড়া সজনে পাতা ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ, যা টাইপ -২ ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে শর্করার এবং রক্তচাপকে হ্রাস করতে দেখানো হয়েছে।

ডায়াবেটিসের কিছু লক্ষণ হ্রাস করতে সহায়তা করে:

এই চা লিপিড এবং গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস এবং ডায়াবেটিস রোগীদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ছিল। যার অর্থ এটি রক্তে শর্করার এবং কোলেস্টেরলকে হ্রাস করে এবং কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা উন্নত করে।

মস্তিষ্কের জন্য ভালো:

সজনে পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নিউরো-বর্ধক। এই জন্য কারণে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং জ্ঞানীয় ফাংশন উন্নত করতে পারে। আলঝাইমার রোগের জন্যও উপকারী হতে পারে।

লিভারকে রক্ষা করে:

মরিঙ্গায় এর পাতা এবং ফুলগুলিতে পলিফেনলগুলির উচ্চ ঘনত্ব রয়েছে যা লিভারকে জারণ, বিষাক্ততা এবং ক্ষতির বিরুদ্ধে রক্ষা করে। মরিঙ্গা লিভারের ক্ষতি এবং ফাইব্রোসিস এবং লিভারের বিপরীত জারণকে হ্রাস করতে পারে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

হ্যাঁ সজনে পাতায় অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি রক্তের এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং হজমেজনিত সমস্যার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলির ত্বকে সংক্রমণের কারণ এবং ছত্রাকগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর ছিল।

রেফারেন্স: