“শসা” ওজন কমায়, পানিশুন্যতা ও কোষ্টকাঠিন্য দূর করে।
শসা কে সবাই সবজি হিসেবে বিবেচনা করলেও শসা আসলে একটি ফল। শসাতে প্রচুর পরিমাণ পানি এবং কম পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে। শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে শসা খুবই উপকারী।
এছাড়াও শসাতে দ্রবণীয় আঁশ থাকায় এটি আমাদের পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে যা ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ত্বকের যত্নে ও বিভিন্ন সৌন্দর্য প্রসাধনীতে শসার জুড়ি মেলা ভার।
শসা একটি কম ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার হলেও এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার এন্টিঅক্সিডেন্ট, কিছু পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেলস এবং ফাইবার বা আঁশ।
১০০ গ্রাম শসাতে পানির পরিমাণ ৯৪.৯ গ্রাম এবং ১৫ ক্যালরি বিদ্যমান। শসার বৈজ্ঞানিক নাম Cucumis sativus এবং ইংরেজিতে cucumber.
শসার পুষ্টিগুণ
শসাতে অনেক পুষ্টি উপাদান আছে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দেওয়া হলো –
- ক্যালোরি:৪৫
- ফ্যাট:০
- কার্বোহাইড্রেট:১১গ্রাম
- প্রোটিন:২ গ্রাম
- ফাইবার: ২ গ্রাম
- ভিটামিন সি:১৪% (RDI)
- ভিটামিন কে:৬২% (RDI)
- ম্যাগনেসিয়াম:১০% (RDI)
- পটাসিয়াম:১৩% (RDI)
- ম্যাঙ্গানিজ:১২% (RDI)
শসার উপকারিতা:
নিচে শসার উপকারিতা দেওয়া হলো –
পানিশূন্যতা দূর করে:
শসার উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে আসে পানি শূন্যতা দূর করার কথা। অতিরিক্ত গরমে শরীরের ঘামের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায় এবং দেখা দেয় পানি শূন্যতা।
কখনও কখনও প্রচন্ড গরমে কাজের ফাঁকে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া হয় না অনেকেরই। এই পানির ঘাটতি পূরণের জন্য শসা অতুলনীয়।
কারণ শসার ৯৫ ভাগই পানি। তাই শসা শরীরে প্রয়োজনীয় পানির অভাব দূর করে আমাদের সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করে।
রূপচর্চায় শসা:
রূপচর্চায় শসার ব্যবহার বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক আগে থেকেই রূপচর্চায় শসা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদেও শসার আলোচনা আছে।
ত্বকের পরিচর্যায় শসাকে কাজে লাগানো হয় কেন জানেন? আসলে শসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং সিলিকন।
এই সবকটি খনিজ উপাদান শরীরের উন্নতির পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাই যদি অল্প দিনেই তরতাজা ত্বক পেতে চান, তাহলে আজ থেকেই কাজে লাগানো শুরু করতে পারেন শসাকে।
এটি ত্বকের কালচে দাগ, বয়সের ছাপ কমানোর পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। শসা চোখের পাশের কালো দাগও দূর করতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
আমরা ওজন কমানোর জন্য কতকিছু করি। শসা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে।
শসায় উচ্চমাত্রায় পানি থাকার কারণে অল্প খেলে পেট ভরে যাই, বারবার খাওয়ার প্রবণতাও কমে যায়। ফলে যাঁরা দেহের ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসা আদর্শ খাবার হিসাবে কাজ করবে।
শুধু শসা নয় যেকোনো নিম্নমাত্রার ক্যালরিযুক্ত খাবার ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে কোনো সম্পৃক্ত চর্বি বা কোলেস্টেরল নেই।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে ডায়েট করার ক্ষেত্রে শসা অসাধারণ বন্ধু হতে পারে আপনার।
রক্তের শর্করার মাত্রা হ্রাস করে:
গবেষণায় পাওয়া গেছে যে শসা রক্তের শর্করার মাত্রা হ্রাস করে সেই সঙ্গে ডায়বেটিস সম্পর্কিত সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে:
এটা শসার আরেকটি গুরত্বপূর্ন দিক। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য একটি বড় ঝুঁকির কারণ হল ডিহাইড্রেশন, শসা আপনার পানির ভারসাম্যকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া শসাতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। ফলে যাদের কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা আছে তারা খাবারের তালিকায় শসা রাখতে পারেন।
মুখ পরিষ্কার রাখে:
দুর্গন্ধযুক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত মাড়ির চিকিৎসায় শসা দারুণ কাজ করে। গোল করে কাটা এক স্লাইস শসা জিহ্বার ওপরে আধা মিনিট রাখুন। শসার সাইটোকেমিক্যাল এর মধ্যে বিশেষ বিক্রিয়া ঘটিয়ে আপনার মুখের জীবাণু ধ্বংস করবে। সজীব হয়ে উঠবে আপনার নিঃশ্বাস।
সতর্কতা
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।