মহিলাদের কি পুরুষদের তুলনায় বেশি ঘুমের প্রয়োজন এবং কেন?

আমাদের সবাইকেই সারাদিন কত না কাজ করতে হয়। কেউ শারীরিক পরিশ্রম করেন, তো কেউ মানসিক। তবু সব পরিশ্রমেই ক্লান্তি আসে। আর সেই ক্লান্তি দূর করার সবচেয়ে ভালো ওষুধ ঘুম। শরীরকে সুস্থ আর এনার্জির জন্য প্রত্যেক মানুষের দিনে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। এমনটাই বলে থাকেন চিকিৎসকেরা।

কিন্তু তা বলে কি এই ব্যস্ত জীবনে ঘুমের পিছনে এত সময় দেওয়ার মতন সময় আছে কারও কাছে? তবে এটা কি জানেন, কাদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয় পুরুষ নাকি মহিলা?

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি পরিশ্রম করেন। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের বাড়ি এবং বাইরে উভয় জগতেই কাজ করতে হয়। ফলে তাঁদের শরীরে এনার্জির পরিমানও কমে তাড়াতাড়ি। তাই কম ঘুম মহিলাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

কম ঘুমের ফলে মহিলাদের হৃদরোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি হতে পারে ডায়াবেটিসও। তাই চিকিৎসকেরা বলেন যে, সারাদিন পরিশ্রমের পর অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়।

পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের আরও বেশি ঘুমের প্রয়োজন থাকতে পারে এমন অনেকগুলি কারণ রয়েছে। পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের ঘুমের বেশি প্রয়োজন হওয়ার কারণ হল হরমোন। আমাদের ঘুম ৬ টি হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই হরমোনগুলি আমাদের ঘুমাতে প্রভাবিত করে যখন আমরা ক্লান্ত বোধ করি। এই হরমোনগুলি মহিলাদের বেশি ঘুমাতে প্রভাবিত করে।

আসুন জেনে নেওয়া যাক, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের কেন বেশি ঘুমের প্রয়োজন?

মানসিক ক্লান্তিটা বেশি হয়:


গবেষকদের মতে, সারাদিন মহিলারা যে পরিমান মেন্টাল এনার্জি খরচ করেন, পুরুষরা সেই পরিমাণ করে না। তাই মানসিক ক্লান্তিটা মহিলাদের বেশি হয়। সেই কারণেই তো মহিলাদের বেশি সময় রেস্টের প্রয়োজন পরে।

পিরিয়ডের কারণে:


পিরিয়ডের সময় মহিলাদের শরীরের ভিতর এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। সেই সঙ্গে হরমোনাল চেঞ্জের কারণেও মহিলাদের ঘুমের সময় কমে যায়। তাই তো এসময় মহিলাদের বেশি বেশি করে ঘুমানোর প্রয়োজন পরে।

sleeping-file-photo

এক সঙ্গে অনেক কাজ করতে হয়:


মহিলাদের এক সঙ্গে অনেক কাজ করতে হয়। ফলে মাল্টি টাস্কিং-এর কারণে শরীর এবং ব্রেনের উপর মারাত্মক চাপ পরে। এই চাপ কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন। ব্রেনের গঠনের দিক থেকেও মহিলা এবং পুরুষদের মস্তিষ্কে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। আর সে কারণে ঘুমের সময়ের মধ্যেও কম বেশি হওয়াটা নির্ভর করে।

মানসিক অবসাদের কারণে:


গবেষণায় দেখা গেছে- মহিলারা বেশিরভাগেই মানসিক অবসাদের মতো রোগের শিকার হয়ে থাকে। এই দুই রোগের কারণেও ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মহিলাদের বেশি সময় ঘুমের প্রয়োজন পরে।

গর্ভাবস্থায়:


গর্ভাবস্থায় মহিলাদের সবথেকে বেশি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে থাকে। এই সময় মহিলাদের শরীরের ভিতর এমন হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে যে ঘুম আসতেই চায় না। এই সময় মহিলাদের পায়ে ক্র্যাম্প ধরার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। সেই কারণেও ঠিক মতো ঘুম হতে চায় না। তাই একটু বেশি সময় ঘুমের দরকার পরে।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যে মহিলারা দৈনিক ৭ ঘন্টার কম সময় ঘুমান, তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটে থাকে। তাই কোনও ভাবেই ৭ ঘন্টার কম সময় ঘুমোনো যাবে না।

এছাড়া মহিলাদের ঘুম কম হলে ওজন বৃদ্ধি পায় খুব তাড়াতাড়ি। কারণ, ঘুম কম হলে, স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের নিঃসরণ বেশি পরিমাণে হয়। এর ফলে খিদে বেড়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে ওজনও। সারা দিনের নানা কাজের ফাঁকে অনেক সময়েই নিজের কথা ভুলে যান মহিলারা। সংসার সামলে, চাকরি সামলে প্রয়োজনীয় ঘুমের সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কমে যায়। এর ফলে, নারীরা অনেক সময়েই বেশ খিটখিটে হয়ে যায়।

রেফারেন্স: