ভাতের মাড় শক্তিদায়ক, ডায়রিয়া প্রতিরোধী ও ত্বককে সুন্দর করে।
ভাত ছাড়া বাঙালির এক বেলাও চলে না। কিন্তু সেই ভাত রান্না করার সময় আমরা এর মাড় ফেলে দিই। ভাতের মাড় হলো চালের নির্যাস। ভাতের মাড়ে থাকে হরেক রকম পুষ্টি উপাদান।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভাতের মাড়ে উল্লেখযোগ্য হারে ভিটামিন “বি” এবং ভিটামিন “ই” রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে আমিষ, শর্করা, আয়রন, ফসফরাস ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভাতের মাড়ের পুষ্টি উপাদান:
আসুন দেখে নিই, ভাতের মাড়ে কি কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে-
- ক্যালরি: ২১৬%
- আমিষ: ১৫%
- শর্করা: ১০%
- আয়রন: ৫%
- ফসফরাস: ১৬%
- আয়োডিন: ৪০%
- নায়াসিন: ২৩%
- ক্যালসিয়াম: ৫০%
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ভাতের মাড়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ, ভিটামিন “ই” সহ আরও বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ভাতের মাড়ের মধ্যে আরো একটি প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যাকে বলে Oryza Sativa Linn।
এতে আরও আছে স্টেরয়েড। প্রাকৃতিক স্টেরয়েড আমাদের দেহের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে। এখন বাজারে এই স্টেরয়েড পরিপূরক পাওয়া যায়। খেলোয়ার ও ক্রীড়াবিদরা তাদের মাংসপেশীকে শক্তিশালী ও অধিক কার্যক্ষম করতে এই পরিপূরক নিয়ে থাকেন। এতে কারো কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু ভাতের মাড় খেলে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না।
ভাতের মাড়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা
কাপড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অর্থাৎ কাপড়কে মসৃণ ও নতুনের মতো করে তুলতে ভাতের মাড়ের তুলনা হয় না। নিচে ভাতের মাড়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে:
ডায়রিয়া হলে প্রচুর তরল খেতে হয়। এই সময় আমাদের এমন তরল খাবার বেছে নিতে হবে যেটা আমাদের শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে এবং ভিতর থেকে শক্তি দেবে। ভাতের মাড় ঠিক এমনই একটি তরল। ডায়রিয়া হলে এক গ্লাস ভাতের মাড় নিয়ে তাতে এক চিমটি লবণ ভালো ভাবে মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত ও কার্যকরী ভাবে ডায়রিয়া নিরাময় করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:
ভাতের মাড়ে প্রচুর ফাইবার থাকে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ২ গ্লাস করে ভাতের মাড় খাওয়ার অভ্যাস করলে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম ঘটতে শুরু করে।
এনার্জি বুস্টার:
ভাতের মাড় এনার্জি লেভেল বাড়ায়ে দেয়। এতে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট আছে যা শক্তির চমৎকার উৎস। আমাদের শরীর কার্বোহাইড্রেট ভেঙ্গে এনার্জি উৎপন্ন করে। সকালে এক গ্লাস ভাতের মাড় খেলে দুর্বলতা বা মাথা ঘুরানো ভাব অনুভব করবেন না।
ভাইরাস ইনফেকশন প্রতিকার করে:
জ্বরে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে এবং বমি বন্ধ করতে ভাতের মাড় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। পুষ্টির ঘাটতি পূরণে এবং নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে ভাতের মাড়।
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:
ভাতের মাড় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রীষ্মের তাপদাহ প্রতিরোধ করার জন্য ডাক্তাররা ভাতের মাড় পান করার পরামর্শ দেন। ভীষণ গরমে ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি দেয় ভাতের মাড়। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে শরীর ঠাণ্ডা রাখতেও সাহায্য করে এটি।
ত্বককে সুন্দর করে:
দামী দামী প্ৰসাদনীর ব্যবহার না করে ভাতের মাড় ব্যবহার করতে পারি। কারণ ভাতের মাড় প্রাকৃতিক টোনার হিসাবে কাজ করে। প্রতিদিন মুখে ভাতের মাড় লাগিয়ে ম্যাসেজ করলে ত্বকের ছিদ্র ছোট হয়, সেই সঙ্গে স্কিনের উপরি অংশে জমে থাকা মৃত কোষের আবরণ সরে যায়। ফলে স্বাভাবিকবাবেই ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে।
ব্রণের প্রকোপ কমায়:
প্রতিদিন দুবার করে ভাতের মাড় ভাল করে মুখে লাগালে ব্রণ কমতে শুরু করে। কারণ এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা হ্রাস করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রণ কমে যায়।
হেয়ার মাস্ক হিসেবে:
লম্বা, সিল্কি ও চকচকে উজ্জ্বল চুলের জন্য ভাতের মাড় চমৎকার ভাবে কাজ করে। আপনার চুলে ও মাথার তালুতে ভালো করে মাড় লাগান ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন তারপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। মাড়ের প্রোটিন চুলকে শক্তিশালী করে ও মসৃণ করে।
চর্মরোগ প্রতিরোধ করে:
ত্বকের যেখানে চর্ম রোগ রয়েছে সেখানে ঠাণ্ডা ভাতের মাড় লাগাতে হবে। এভাবে নিয়মিত লাগালে লক্ষনীয় পরিবর্তন চোখে পড়বে। ভাতের মাড়ের শ্বেতসার জাতীয় পদার্থ চর্মরোগ প্রতিরোধের জন্য খুবই কার্যকর।
সতর্কতা:
আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।