পেটের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি কমানোর প্রাকৃতিক উপায়।

পেটের চর্বি মারাত্মক ক্ষতিকারক। অসংখ্য হরমোন পেটে চর্বি জমাতে ভূমিকা রাখে। পেটে অতিরিক্ত মেদ জমে গেলে দেখতে ভালো দেখায় না। তখন আমরা মেদ বা চর্বি কমানোর উপায় খুঁজতে থাকি। বেশি করে টক খাই, শসা খাই, সকালে উষ্ম গরম পানিতে লেবু ইত্যাদি।

পাশাপাশি আমাদের দুশ্চিন্তা কমাতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুম পড়তে হবে ও প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।

অনেকেই পেটে চর্বি জমার সমস্যা নিয়ে বিব্রত। পেটের মেদ বা চর্বি কমাতে ওজন হ্রাস করা সব থেকে কার্যকরী উপায়। পেটে বেশি চর্বি থাকলে শুধু খারাপই দেখায় না, মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। যেমন হার্টের রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য জটিল সমস্যায় ভোগাতে পারে।

এবার পেটের চর্বি কমানোর কিছু কার্যকর উপায় সম্পর্কে জেনে নিন-

গ্রিন টি পান করুন:

গ্রীন টি আমাদের শরীরের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়। এতে ক্যাফিন এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এপিগেলোকটচিন গ্যালেট (EGCG) রয়েছে, যা পেটের মেদ ঝরাতে সহায়তা করে।

নিয়মিত গ্রীন টি পান করলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ক্যালরী কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রীন টি শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে বিশেষ করে তল পেটের চর্বি।

ফাইবারযুক্ত খাবার খান:

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার পূর্ণতা বোধ করতে সহায়তা করতে পারে যা ওজন হ্রাস করার জন্য উপযুক্ত। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকায় ফাইবার বৃদ্ধির ফলে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ হ্রাস করে ওজন হ্রাস পায়।

দ্রবণীয় ফাইবার পেটের মেদ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। ১,১০০ এরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের একটি পর্যবেক্ষণ গবেষণায় দেখা গেছে যে, দ্রবণীয় ফাইবার গ্রহণের ফলে পেটের চর্বি হ্রাস পেয়েছিল।

ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন:

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পেটের চর্বি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

খুব বেশি অ্যালকোহল পান করবেন না:

অ্যালকোহল স্বল্প পরিমাণে পান করা ভালো তবে বেশি পরিমাণে পান মারাত্মক ক্ষতিকর। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে অত্যধিক অ্যালকোহল সেবনের ফলে পেটের মেদ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ডায়েট:

প্রোটিন ওজন পরিচালনার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। উচ্চ প্রোটিন খাবার ক্ষুধা হ্রাস করে এবং বেশ সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে। প্রোটিন বিপাকের হারও বাড়ায় এবং ওজন হ্রাসের সময় পেশী ভর ধরে রাখতে সহায়তা করে। প্রোটিনের ভাল উৎস মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, মটরশুটি ইত্যাদি।

মানসিক চাপ কমান:

স্ট্রেস কর্টিসল তৈরি করতে, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলি ট্রিগার করে পেটের চর্বি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে যা স্ট্রেস হরমোন নামেও পরিচিত। গবেষণায় দেখা যায় যে উচ্চ কর্টিসলের মাত্রা ক্ষুধা বাড়ায় এবং পেটে ফ্যাট জমা করে।

তাই পেটের চর্বি কমাতে আনন্দদায়ক কাজের সাথে নিজেকে জড়িত রাখুন। যোগ ব্যায়াম বা ধ্যান করুন এতে মানসিক চাপ অনেকটা কমে যাবে।

প্রচুর মিষ্টি খাবার খাবেন না:

চিনিতে ফ্রুকটোজ থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বেশ কয়েকটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে হার্টের রোগ, টাইপ-2 ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। পর্যবেক্ষণ গবেষণায় উচ্চ মাত্রায় চিনি গ্রহণ এবং পেটের ফ্যাট বৃদ্ধি এর মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে।

ব্যায়াম করুন:

নিজেকে সুস্থ্য রাখতে ও ফিট রাখতে ব্যায়ামের কোন বিকল্প হয় না। ব্যায়াম ক্যালোরি বার্ন করে নিজেকে ফিট রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে পেটের মেদ হ্রাস করার জন্য ব্যায়াম অন্যতম কার্যকর ফর্ম।

শাকসবজি খান:

শাকসবজি খাওয়া আমাদের শরীরকে সর্বদা ফিট এবং শক্তশালী রাখে। আপনি কি অতিরিক্ত চর্বিতে ভুগছেন? তাহলে আপনাকে শাকসবজি বেশি পরিমানে খেতে হবে। কারণ শাকসবজি খেলে চর্বি হ্রাস হয়।

ডায়েটে নারকেল তেল রাখুন:

নারিকেল তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ক্ষুধা হ্রাস করতে এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এতে ওজন হ্রাস পাই। LCTs তুলনায় MCTs পেটের চর্বি হ্রাস করতে বিশেষভাবে কার্যকর। পেটের স্থূলতাজনিত ৪০ জন মহিলার মধ্যে ১২-সপ্তাহের গবেষণায়, যারা প্রতিদিন ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল খান তাদের কোমরের পরিধি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছিল। এছাড়া স্থূলতায় আক্রান্ত ২০ জন পুরুষ নিয়ে চার সপ্তাহের গবেষণায়, প্রতিদিন ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল গ্রহণের পরে কোমরের পরিধি কমেছিল।

চিনি-মিষ্টিযুক্ত পানীয়গুলি এড়িয়ে চলুন:

চিনি-মিষ্টিযুক্ত পানীয় তরল ফ্রুকটোজ দিয়ে বোঝায়, যা আপনাকে পেটের মেদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা যায় যে চিনিযুক্ত পানীয় লিভারে ফ্যাট বাড়ায়। ১০-সপ্তাহের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ব্যক্তিদের পেটের মেদ বৃদ্ধি পেয়েছে তারা উচ্চ ফ্রুকটোজ পানীয় গ্রহণ করেছিলেন। সুগারযুক্ত পানীয় উচ্চ চিনিযুক্ত খাবারের চেয়ে খারাপ বলে মনে করা হয়।

পর্যাপ্ত ঘুমান:

শরীরচর্চা ছাড়াই পেটের চর্বি কমানোর একটি বিস্ময়কর উপায় হলো প্রতিরাতে যথেষ্ট ঘুমানো। ওজন কমাতে নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। ৬৮,০০০ এরও বেশি মহিলাদের জড়িত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতি রাতে ৫ ঘন্টারও কম ঘুমাতেন তাদের ক্ষেত্রে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা ছিল বেশি যারা রাতে প্রতি ঘন্টা ৭ ঘন্টা বা তার বেশি ঘুমিয়েছিলেন তাদের তুলনায়।

ডায়েটে আপেল সিডার ভিনেগার যুক্ত করুন:

বেশ কয়েকটি অধ্যয়ন দেখায় যে ভিনেগার পূর্ণতার অনুভূতি বাড়াতে পারে। এটি আপনাকে কম ক্যালোরি খেতে এবং ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর ভিনেগার খেলে দিনের পরবর্তী সময়ে সহজে ক্ষুধা লাগে না।

স্থূলতায় আক্রান্ত ১৭৫ জনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিনের আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণের ফলে পেটের মেদ এবং ওজন হ্রাস পায়। প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করা নিরাপদ।

টক দই খান:

যারা ওজন কমানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তারা তাদের ডায়েটে দই অন্তর্ভুক্ত করুন। দইতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় দই স্থূলত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। আমাদের শরীরের চর্বি আমাদের মোটা করার সাথে সাথে অনেক অসুখও বহন করে নিয়ে আসে। চর্বিতে থাকা কর্টিসল হরমোনটি স্থূলতা বাড়ায় ও আমাদের শরীরে ডেকে আনে বহু রোগ। ক্যালসিয়াম কর্টিসল হরমোন তৈরিতে বাধা দেয় যা শরীরকে ওজন বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায় না। সঠিক পরিমাণে দই নিয়মিত সেবন করলে ওজন কমাতে এবং ফিটনেস বাড়াতে সহায়তা করে।

মাঝে মাঝে উপবাস করার চেষ্টা করুন:

হ্যাঁ উপবাস চর্বি কমাতে পারে। কিছু গবেষণা দেখায় যে, মাঝে মাঝে উপবাস থাকার ফলে ৬-২৪ সপ্তাহের মধ্যে পেটের চর্বি ৪-৭% হ্রাস পেয়েছিল। একটি পর্যালোচনা অনুসারে, উপবাসের ফলে ৩-২ সপ্তাহের মধ্যে শরীরের ওজন ৮% পর্যন্ত হ্রাস এবং শরীরের মেদ ১৬% পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছিল।

রেফারেন্স: