পাইলস বা অর্শের সমস্য গর্ভকালীন সময়ে। কেন হয়ে থাকে ও পরিত্রাণের উপায়।
প্রতিটি মায়ের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো তার গর্ভকালীন সময়। অনেকে মনে করেন, মেয়ে হয়ে জন্মেছো, সন্তান ধারণ তো করতেই হবে। আর এটা তো স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এতে ভয়ের কিছু নেই।
ভয়ের কারণ নেই। স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে উড়িয়ে দিবেন না। সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে গর্ভবতী মাকে দশমাস দশদিন যে কষ্ট, ব্যথা-যন্ত্রণা ভোগ করে সন্তান জন্ম দিতে হয় তা মা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। তার উপর অযত্ন, অবহেলা ও অপুষ্টিতে অনেক মায়ের মৃত্যুও ঘটে।
সন্তান মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে মায়ের শরীরের উপর ও নিচ দুদিকেই চাপ সৃষ্টি হয়। মাজায়, পিঠে ব্যথা, নিঃশ্বাসে কষ্ট, মলদ্বারের শিরাতে চাপ ও রক্তচাপ বৃদ্ধি।
গর্ভাবস্থায়, আপনার মলদ্বারের শিরাগুলির উপর চাপ বৃদ্ধির ফলে হেমোরয়েডস বা অর্শ হতে পারে। এটি আপনার জরায়ু বৃদ্ধি, আপনার ক্রমবর্ধমান শিশুর চাপ এবং রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে হতে পারে। এই সমস্ত ঘটনা গর্ভাবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে আপনার মলদ্বারের চারপাশের শিরাগুলির উপর চাপ বাড়ায়।
এছাড়া হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গর্ভাবস্থায় পাইলস হতে পারে যা শিরাগুলি শিথিল করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়। মলত্যাগের সময় স্ট্রেনের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে পাইলস হতে পারে। এটি মলদ্বারের মধ্যে এবং তার চারপাশে টিস্যুর ফুলে ওঠা এবং প্রসারিত হওয়ার কারণে হতে পারে।
অর্শ্বরোগ নিম্ন মলদ্বারে চাপ বৃদ্ধির কারণে হতে পারে: মলত্যাগের সময় স্ট্রেনিং। টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য।
পাইলস কি আমার অনাগত শিশুর ক্ষতি করতে পারে?
পাইলস আপনার শিশুকে প্রভাবিত করবে না।পাইলস আপনার জন্য বিরক্তিকর হতে পারে।
হেমোরয়েডস হল শরীরের নিচের অংশ অর্থাৎ আপনার মলদ্বারের শিরা ফুলে যাবে এবং চুলকানি, জ্বলন, ব্যথা বা রক্তপাত হতে পারে। গর্ভাবস্থার Third trimestar বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকে এই সমস্যাটি অনেক গর্ভবতী মায়েরই হতে পারে। আপনার রক্তপাত হলে বা খুব বেশি ব্যথা হলে আপনার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় হেমোরয়েডের কারণ:
আপনার ক্রমবর্ধমান শিশুটি আপনার জরায়ুর পিছনের বড় শিরাগুলিতেও চাপ দেয়।
এছাড়া বাজে খাদ্যাভাস বা জীবনাচরণ যেকোনো কারণে হোক না কেনো কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকেরই থাকে। অনেকদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে মলত্যাগের সময় চাপ দিতে দিতে শিরাগুলি ফুলে যায়।
হেমোরয়েড সাধারণত আপনার শিশুর জন্মের পরপরই চলে যায়। গর্ভাবস্থায় হেমোরয়েডের জন্য বাড়িতে-যত্ন নিতে হয়। বাড়িতে অর্শ্বরোগের ব্যথা, চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া কমানোর কয়েকটি উপায় রয়েছে:
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না। এটি আপনার শরীরের নীচের শিরাগুলির উপর চাপ দেয়। আপনি যখন বসবেন, আপনার নীচে একটি বালিশ ব্যবহার করুন। একটি রকিং চেয়ার বা রিক্লাইনার আরও আরামদায়ক হতে পারে।
কেগেল ব্যায়াম(Kegel exercises):
কেগেল ব্যায়াম (Kegel exercises) হলো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য পেলভিক পেশি বা শ্রোণি মেঝের পেশির একটি কার্যকরী ব্যায়াম- যা নিম্নাঙ্গের অংশ বিশেষত পেলভিক পেশি, জননাঙ্গ ও পায়ুপথের পেশি প্রভৃতি শক্তিশালী ও কার্যকর করতে সাহায্য করে।
কেগেল ব্যায়াম শ্রোণি মেঝের পেশিকে দৃঢ এবং শক্তিশালী করে যা জরায়ু, মূত্রথলি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। আপনি প্রায় যে কোনো সময়ে শুয়ে বা বসে কেগেল ব্যায়াম করতে পারেন। এমনকি গর্ভবতী অবস্থায়ও করা যেতে পারে।
কেগেল ব্যায়াম (পেলভিক ফ্লোর ব্যায়ামও বলা হয়) আপনার পেলভিক ফ্লোর পেশী শক্তিশালী করার জন্য করা হয়। কেগেল ব্যায়াম শুধুমাত্র আপনার প্রস্রাব বের হওয়া থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে না, তবে দুর্ঘটনাজনিত মল (মল) বা গ্যাস নিঃসরণ রোধ করতে সাহায্য করতে পারে এবং এমনকি আপনার যৌন উত্তেজনা উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করুন:
উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খান। আমরা সবাই জানি, ফাইবারযুক্ত খাবার মলকে নরম করে এবং মল সহজে বেরিয়ে যায়। শাকসবজি, ফলমূল, বীজ ফাইবারের জন্য সবথেকে ভালো পছন্দ।
আপনার ডাক্তারের চিকিৎসা পরিকল্পনা আপনার লক্ষণগুলি কতটা গুরুতর তার উপর নির্ভর করবে। জীবনধারা পরিবর্তন করতে পারলে ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে হালকা হেমোরয়েড উপসর্গ ঠিক হয়ে যায়।
প্রচুর পানি পান করুন:
গর্ভবতী মায়েদের বলছি আপনার যদি ১২ আউন্স বা ৩৪০.১৯ গ্রাম অর্থাৎ প্রায় ৩৫০ গ্রাম মাপের গ্লাস বা মগ থাকে তাহলে ওই গ্লাসের আট গ্লাস পানি অর্থাৎ প্রায় পোনে তিন কেজি পানি আপনাকে খেতে হবে। কম বেশি আপনার শরীর ও পরিবেশ অনুযায়ী আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিবেন।
এটি আপনার অন্ত্রকে নরম রাখতে এবং আপনার পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে মসৃণভাবে চলতে সাহায্য করবে। কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে সাহায্য করার জন্য আপনার দৈনিক খাদ্য গ্রহণকে পাঁচ বা ছয়টি ছোট খাবারে ভাগ করার চেষ্টা করুন।
একটি উষ্ণ স্নান চেষ্টা করুন:
ব্যথা উপশম করতে আপনার মলদ্বার কয়েক ইঞ্চি গরম জলে দিনে কয়েকবার ভিজিয়ে রাখুন। ফোলাভাব কমাতে দিনে ৪ বার ১০ মিনিটের জন্য বরফের প্যাক বা কোল্ড কম্প্রেস প্রয়োগ করুন।
স্টুল সফটনার বা হেমোরয়েড ক্রিম:
আজকাল পাইলস বা অর্শের রোগীদের ব্যবহারযোগ্য অনেক ধরণের ক্রিম ঔষধের দোকানে পাওয়া যায়। ব্যথা উপশমকারী বা স্টুল সফটনার বা হেমোরয়েড ক্রিম ব্যবহার করার বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
আপনি যদি হেমোরয়েড ক্রিম ব্যবহার করতে চান বা স্টুল সফটনার নিতে চান বা আপনার রক্তপাত হয় বা গুরুতর মলদ্বার ব্যথা অনুভব করেন তবে আপনার ডাক্তারকে জানান।