দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়। এক বছর বয়সের নিচের বাচ্চা কি গরুর দুধ খেতে পারবে?

দুধের পুষ্টি উপাদানের কথা বা গুনের কথা কি আর বলবো। মানব শিশু পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হবার পরপরই তার প্রথম ও একমাত্র নিরাপদ খাদ্য হলো মায়ের বুকের দুধ। গুনে মানে অতুলনীয় এই খাদ্যকে বলা হয় পৃথিবীর অমৃত।

আদর্শ খাদ্যের কথা আসলেই আমাদের মনে সবার আগে যে খাবারটির নাম উঁকি দেয় তা হচ্ছে দুধ। দুধ হচ্ছে সাদা তরল পদার্থ যা শুধু স্ত্রী জাতীয় প্রাণীর স্তন হতে নির্গত হয় এবং তাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য পরিপুষ্টি ও জীবন ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

প্রতিবেলার আহারকে একটি আদর্শ আহারে পরিণত করতে প্রয়োজন হয় ছয়টি পুষ্টি উপাদানের। বিস্ময়করভাবে দুধে এই ছয়টি উপাদানই বিদ্যমান।

দুধ আপনার প্রথম খাবার ছিল এবং হাজার হাজার বছর ধরে এটি মানুষের খাদ্যতন্ত্রের অংশ। কেন এটি সহজে দেখা যায়, যেহেতু দুধ পুষ্টিকর, বহুমুখী, সুস্বাদু এবং তুলনামূলকভাবে সহজে পাওয়া যায়। দুধ ক্রমবর্ধমান বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে, তবে গরুর দুধ এখনও আমাদের ডায়েটের প্রাথমিক রূপ।

পুষ্টি উপাদানঃ

দুধ অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এর মধ্যে রয়েছে:

ফসফরাস
ক্যালসিয়াম
ভিটামিন এ
ভিটামিন ডি (ভিটামিন ডি দিয়ে সুরক্ষিত পণ্যগুলিতে)
রিবোফ্লাভিন
ভিটামিন বি 12
পটাশিয়াম
দস্তা
কোলিন
ম্যাগনেসিয়াম
সেলেনিয়াম
পরিবেশন প্রতি পুষ্টি

এক কাপ পুরো দুধে (3.25% মিল্কফ্যাট) রয়েছে:

ক্যালোরি: 149
প্রোটিন: 8 গ্রাম
ফ্যাট: 8 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট: 12 গ্রাম
ফাইবার: 0 গ্রাম
চিনি: 12 গ্রাম

আমরা মোটামুটি সবাই মানবদেহের জন্য দুধের উপকারিতা সম্পর্কে জানি কিন্তু জানেন কি, এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দেরও শেষ নেই।

বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো নিয়ে একেক জনের একেক মতবাদ তবে সঠিক মতবাদ হলো,গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন(যেমনঃক্যাসিন) বিদ্যমান যা হজম করার মতো উন্নত পাচক তন্ত্র শিশুর থাকে না। তাই ১ বছর বয়সের নিচে শিশুদের গরুর দুধ খাওয়ানো ঠিক না।

ঠান্ডা ও গরম দুধ খাওয়া নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন,গরম দুধ খেলে উপকার বেশি। আসলেই কি তাই?

ঠান্ডা দুধ স্থুলতা কমায়। আর ভালো ঘুম বা হজম শক্তি বাড়াতে গরম দুধের প্রয়োজন। এখন কোনটা আপনার জন্য উপকারী সেটা আপনাকে বেছে নিতে হবে।

দুধ কি কাঁচা খাওয়া ভালো নাকি ফুটিয়ে খাওয়া ভালো। এ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে থাকেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে,সরাসরি খামার থেকে আনা দুধ না ফুটিয়ে খেলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শরীরের নানা ক্ষতি করতে পারে। তাই উচ্চতাপমাত্রায় দুধ ফুটিয়ে পান করতে হবে।

আবার দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময় নিয়েও রয়েছে মতভেদ। পুষ্টিবিদরা দুধ খাওয়ার তিনটি উপযুক্ত সময়ের কথা বলে থাকেন। সকালের নাস্তার সময়,বিকালে চারটার দিকে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আধা ঘন্টা আগে। এ তিনটি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে রাতের বেলা।

সেরা সময়- সকাল বা সন্ধ্যা? আয়ুর্বেদ অনুসারে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়টি শোবার আগে। বাচ্চাদের হিসাবে, আয়ুর্বেদ দুপুরে ভোরের ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

দুধ পান করার উপযুক্ত সময় কোনটি?

ভারতের বিকল্প স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আয়ুর্বেদিক ওষুধ অনুসারে, সন্ধ্যায় গরুর দুধ খাওয়া উচিত। এটি কারণ আয়ুর্বেদিক বিদ্যালয়টি দুধকে ঘুম-প্ররোচিত হিসাবে বিবেচনা করে।  এটি সকালের পানীয় হিসাবে অনুপযুক্ত মনে করে।

অনেকেই মনে করেন সর বা ননী তোলা দুধ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্ত গবেষণায় দেখা গেছে যে পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ অতিরিক্ত স্থূল হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
অনেকের ধারণা দুধ খেলে ঠান্ডা বাড়ে। কিন্ত সর্দি,কাশিতে দুধ খেলে মোটেই ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ে না। এটা মূলত মানসিক ব্যাপার।

অনেক গুলো ভ্রান্ত ধারণার মাঝেও কিন্তু এই কথাটি সত্য যে, দুধ আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে অবশ্যই দুধ পান করা উচিত।