ত্রিশের পরে মা হতে চান? সহজ নাকি কঠিন?
ত্রিশ বছরের আগে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা একটা মেয়ের বা নারীর জন্য ভালো একটি পদক্ষেপ। অনেকেই ত্রিশ এর মধ্যে সন্তান লাভ করে থাকেন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। ক্যারিয়ার, ক্যারিয়ার শুধুই ক্যারিয়ার গঠনের চিন্তা। ওদিকে আর্থিক সুরক্ষা আর সম্পর্ক দৃঢ় করা।
জীবনের লক্ষ্যগুলির চেয়ে ক্যারিয়ারের লক্ষ্যগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া এবং সন্তানের প্রয়োজনীয়তা পূরণে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, এরকম বিভিন্ন কারণে জীবনের পথচলায় অনেক সময় মেয়েদের বয়স ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ পেরিয়ে যায়। ফলে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে নানারকম ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। অনেক মা মারাও যায়।
প্রযুক্তির প্রতি ধন্যবাদ, গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের প্রক্রিয়ায় বিপ্লব ঘটেছে, যা পুরুষ এবং মহিলাদের সন্তানের জন্ম দেওয়ার ইচ্ছা পূরণে সহায়তা করে। এর জন্য আপনাকে হয়তো অনেকটা খরচ করতেও হয়। সুতরাং, যদিও অনেক লোক দেরী করে বাচ্চা নিতে চাইলেও বিশেষজ্ঞদের মতে এটি জটিল গর্ভাবস্থার ঝুঁকিতে পড়ে।
সিডিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ বছরের বেশি বয়সে প্রচুর মহিলা তাদের প্রথম সন্তান জন্ম দিয়েছেন। ভারতেও প্রায় ২০-৩০ শতাংশ মহিলারা দেরীতে মাতৃত্বের পক্ষে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন থেকে শুরু করে রানী মুখার্জি পর্যন্ত সেলিব্রিটি মায়েরাও রয়েছেন, যাদের ৩৫ বছরের পরে প্রথম সন্তান হয়েছিল। বাংলাদেশেও এমনটা শুরু হয়েছে।
হ্যাঁ, আপনার ৩৫ বছর বয়সের পরে একটি শিশু হতে পারে। প্রশ্নটি হল, আপনার এটি উচিত কিনা?
জেনে রাখা ভালো কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়:
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানসিক প্রতিবন্ধকতা সহ গর্ভপাত ও অস্বাভাবিকতার ঝুঁকি বাড়ছে। বয়স যত বাড়ে, সন্তান ধারণের ক্ষমতা তত কমতে থাকে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, মায়ের বয়স যত বেশি হবে, বিশেষত ৩৫ বছরের পরে যাঁরা মা হচ্ছেন তাঁদের বাচ্চাদের ডাউন সিনড্রোম বা বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি নিয়ে বাচ্চা হওয়ার শতকরা হার বেড়ে যায়।
আসলে প্রকৃতি আমাদের কিছু নিয়মকানুন ঠিক করে দিয়েছে। প্রকৃতির কথা বললে, ২৪ থেকে ৩৪ বছর বয়সের মহিলাদের ডিমগুলিতে ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা ৩৪ বছরের বেশি বয়সীদের তুলনায় অনেক কম হয়। মহিলাদের উর্বরতা সাধারণত ২৪ থেকে ৩৪ বছর বয়সের মধ্যে সবথেকে ভালো থাকে।
উর্বরতা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩৫ বছর বয়স এর পর থেকে ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা অর্থাৎ উর্বরতার হার কিছুটা হ্রাস পেয়ে থাকে। ৩০ বছরের বা তারও বেশি বয়সী মায়ের জন্য, ক্রোমোসোমালি অস্বাভাবিক ভ্রূণ হওয়ার পরিমাণ ৩১ শতাংশের বেশি এবং ৪৪-এর বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে এটি ১০০ শতাংশে উঠতে পারে।
৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত একজন মহিলার ডিম জিনগতভাবে স্থিতিশীল এবং স্বাস্থ্যকর বাচ্চা উৎপাদন করতে সক্ষম।
তা ছাড়া আপনার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড হরমোন সমস্যা হতে পারে এবং সেই কারণে গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিভিন্ন জটিলতার কারণে অপরিপক্ব শিশুর জন্মহার বেড়ে যায়। এই বয়সী মায়েদের অনেকেরই বিলম্বিত প্রসব বা রক্তক্ষরণজনিত জটিলতার কারণে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের পরিবর্তে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার হার অনেক বেড়ে যায়।
আরেকটি বিষয় হলো, প্রথম সন্তান যদি ত্রিশের পর হয় তবে দ্বিতীয়টি নেওয়ার আগে ২-৩ বছরের বিরতির সময়টা কমে আসে যা মায়ের শরীর এবং মনের ওপর চাপ বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় বা পরে সাইকিয়াট্রিক বিভিন্ন সমস্যা (যেমন দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা ইত্যাদি) হতে পারে।
করণীয় বা যেটা মনে রাখতে হবে:
ত্রিশের পরে মা হতে চাইলে, আগেই গর্ভপূর্ববর্তী চেকআপ করিয়ে একজন প্রসূতিবিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে তাঁর পরামর্শমতো গর্ভধারণ করতে হবে।
ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারের দিকে নজর দিন। ডাক্তারের পরামর্শ মতো আপনার গর্ভবতী হওয়ার আগে শিশুর জন্য ভাল কিছু শুরু করার জন্য আপনার ফলিক অ্যাসিডের পাশাপাশি মাল্টিভিটামিন পরিপূরক গ্রহণ করতে পারেন।
স্থূলত্ব পরীক্ষা করুন।
গর্ভাবস্থার আগে ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশনের জন্য পরীক্ষা করুন এবং আগেই যত্ন নিন, প্রাক-গর্ভাবস্থার চিনির মাত্রা ভ্রূণের অস্বাভাবিকতা, প্রধানত হার্টের ত্রুটি এবং কঙ্কালের বিকৃতি বৃদ্ধি করে। উচ্চ রক্তচাপ যে কোনও গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষত ৩০ এর পরে।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড সমস্যা, অ্যানিমিয়া স্ক্রিনিং করুন। সমস্যা থাকলে চিকিৎসা নিন।বাচ্চার ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটি দেখার জন্য ১২-১৩ সপ্তাহে ডাউন স্ক্রিনিং এবং ২০-২২ সপ্তাহে অ্যানোমেলি স্ক্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্রঃ
indianexpress.com, indiatoday.in