ত্বকের যত্নে নারকেল তেলের ফেসপ্যাক।
সেই প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে আজও ত্বক ও চুলের যত্নে নারকেল তেল অনন্য। যদি ত্বকের যত্নের চাবিকাঠিটা জেনে থাকেন তাহলে তো জানেনই যে, আসল কথাটা হলো— ত্বকের আর্দ্রতা। নারকেল তেল খুবই ভালো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। এটা ত্বককে ভেজা ভেজা রাখতে সহায়তা করে এবং আবহাওয়ার ক্ষতি থেকে বাঁচায়।
ত্বক পরিষ্কার করতেও নারকেল তেল ব্যবহার করুন। এটা শুধু ত্বক থেকে ক্ষতিকর টক্সিনই দূর করে না বরং এর পাশাপাশি ত্বকের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কার্যকর রাখতে সহায়তা করে।
যাঁদের তেলতেলে ত্বক তাঁরা সরাসরি মুখে তেল মাখবেন না। বরং ফেসপ্যাকে উপাদান হিসেবে রাখুন নারকেল তেল। যাঁদের ত্বক শুষ্ক তাঁরা সরাসরি ক্রিমের মতো মুখে নারকেল তেল লাগাতে পারেন।
নিয়মিত নারকেল তেলের ব্যবহার ত্বকের ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া নষ্ট করে ত্বকে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ত্বকে কোনওরকম জ্বালাপোড়া ভাব হলে তা কমাতেও নারকেল তেল যথেষ্ট কার্যকর।
নারকেল তেলে রয়েছে উচ্চা মাত্রার ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন “ই” যা একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এছাড়া তেলটি ত্বকের জল ধারণ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে কোমল রাখে। শুষ্ক ত্বকের জন্য নারকেল তেলের মতো ভালো ময়শ্চারাইজ়ার আর নেই।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ত্বকের যত্নে নারকেল তেলের ফেসপ্যাক আমাদের কি কি উপকার করে-
নারকেল তেল ও দারুচিনি:
১ চা চামচ নারকেল তেল ও ১ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া নিন। এবার দারুচিনি গুঁড়া আর নারিকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্টের মতো করে নিন। এরপর ব্রণের উপর লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে দিন।
আধঘণ্টা পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনবার এটি করতে হবে। নারকেল তেল আর দারুচিনি দুটি উপাদানেই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে যা ব্রণ কমাতে সহায়ক।
নারকেল তেল, হলুদ গুঁড়া, লেবুর রস ও মধু:
৩ টেবিল চামচ নারকেল তেল, আধ চা চামচ হলুদ গুঁড়া, আধ চা চামচ লেবুর রস ও ১ টেবিল চামচ মধু নিন। এবার একটি পাত্রে সমস্ত উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। পরিষ্কার মুখে ফেস মাস্কটি লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এটি করতে হবে। হলুদ ত্বকের দাগছোপ দূর করে উজ্জ্বলভাব আনতে সাহায্য করে, লেবুর অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ত্বক তেলতেলে হতে দেয় না অন্যদিকে মধু আর নারকেল তেল ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
নারকেল তেল ও বেকিং সোডা:
১ টেবিল চামচ নারকেল তেল ও ১ চাচামচ বেকিং সোডা নিন। এবার বেকিং সোডা আর তেল একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্টের মতো করে নিন। ব্ল্যাকহেডসের উপর লাগিয়ে হালকা হাতে মিনিট দশেক ম্যাসেজ করুন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে দুইবার করলেই ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা বিদায় নেবে। এই ফেসমাস্কটি ক্লিনজারের মতো কাজ করে। ত্বকে জমে যাওয়া ধুলোময়লা ও মৃত কোষ সরিয়ে ও রোমছিদ্র পরিষ্কার করে ত্বক উজ্জ্বল রাখতে জুড়ি নেই এই প্যাকটির।
নারকেল তেল, মধু ও বাটার:
১ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ১ টেবিল চামচ কাঁচা মধু ও বাটার নিন। এবার একটি পাত্রে একসঙ্গে নারিকেল তেল আর বাটার নিয়ে আঁচে বসিয়ে গলিয়ে নিন। আঁচ থেকে নামিয়ে তাতে কাঁচা মধু যোগ করুন। ভালো করে মিশিয়ে সারা মুখে ভালোভাবে লাগান।
অন্তত আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসমাস্কটি ক্লিনজারের মতো কাজ করে। ত্বকে জমে যাওয়া ধুলোময়লা ও মৃত কোষ সরিয়ে এবং রোমছিদ্র পরিষ্কার করে ত্বক উজ্জ্বল রাখতে জুড়ি নেই এই প্যাকটির।
নারকেল তেল, হলুদ গুঁড়ো ও কলা:
১ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ১/২ পাকা কলা এবং এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। ত্বক পরিষ্কার করে প্যাকটি লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।
১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। পাকা বা খুব বেশি পাকা কলা হলে ভালভাবে ম্যাশ করা যায়। এপ্যাকটি ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।
নারকেল তেল ও হলুদ:
১ টেবিল চামচ নারকেল তেল এবং এক চিমটি হলুদের গুঁড়ো একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই প্যাকটি মুখ এবং ঘাড়ে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করবে।
নারকেল তেল, টক দই ও জায়ফল:
১ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ১ চা চামচ জায়ফল এবং ১ টেবিল চামচ টকদই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এবার এই প্যাকটি ম্যাসাজ করে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি বা ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বক আদ্র করে বলিরেখা দূর করে থাকে।
নারকেল তেলের এই প্যাকগুলো আপনার ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে ব্রণের দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের কালো দাগও দূর করে থাকে।
নারকেল তেল, জায়ফল গুঁড়ো ও অ্যাভোকাডো:
নারকেল তেল আর অ্যাভোকাডো আপনার ত্বককে ফ্রি রাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে, ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল,
১ টেবিল চামচ পাকা অ্যাভোকাডো ও আধ চাচামচ জায়ফল গুঁড়ো নিয়ে প্রথমে একটি পাত্রে অ্যাভোকাডো চটকে নিন।
তাতে জায়ফল গুঁড়ো আর নারকেল তেল মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করুন। এরপর মুখে প্যাকটি ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার কি তিনবার করলেই ভালো ফল পাবেন।
রেফারেন্স: