তোকমা শরীর ঠান্ডা রাখতে, রক্তস্বল্পতা দূর করতে, ত্বক সুস্থ্য রাখতে ও পেটের সমস্যায় দারুণ কার্যকরী।
তোকমা আসলে কি? এটা কোন গাছের বীজ জানেন কি? এটা আসলে এক ধরণের তুলসী গাছের বীজ। এটাকে বিলাতি তুলসী বলা হয়। এই তুলসী গাছের বীজ কে বলা হয় তোকমা।
যাই হোক তোকমা খুবই পুষ্টিকর ও খুবই মজার একটি খাবার। এটি তোকমা নামে জনপ্রিয় হলেও সাবজা এবং তোকমারিয়া বীজ সহ আরও অনেক নাম রয়েছে।
তুলসী বীজ (Basil Seed) বা তোকমা (tokma) আয়ুর্বেদিক, উনানী এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চায়নিজ মেডিসিনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক উপাদান। ছোট কালো রঙের একটি বীজ তোকমা। দেখতে একেবারেই সাদামাটা।
তোকমাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, ফাইবার এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরি। তোকমার বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে শরবত তৈরি করে খাওয়া হয়।
ফালুদার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো তোকমা। প্রচন্ড গরমে এক গ্লাস তোকমার শরবত আপনার শরীরকে ঠান্ডা করতে যথেষ্ট।
কোষ্টকাঠিন্যতা ও রক্তসল্পতা দূর করতে, বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে ওজন ঠিক রাখতে তোকমা দুর্দান্ত।
তোকমার পুষ্টি উপাদান
তোকমার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান নিচে দেওয়া হলো –
- ক্যালরি: ৬০
- ফ্যাট: ২.৫ গ্রাম
- ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড: ১,২৪০ মিলিগ্রাম
- কার্বস: ৭ গ্রাম
- ডায়েটারি ফাইবার: ৭ গ্রাম
- প্রোটিন: ২ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ১৫% (RID)
- আয়রন: ১০% (RID)
- ম্যাগনেসিয়াম: ১০% (RID)
তোকমার উপকারীতা
তোকমার বৈজ্ঞানিক নাম: Hyptis suaveolens. নিচে তোকমার উপকারীতা দেওয়া হলো –
আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের উৎস:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের পুষ্টির লেবেলের উপর ভিত্তি করে, ১৩ গ্রাম তোকমাতে ১৫% ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন ১০% রয়েছে।
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্য এবং পেশীগুলির ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য।
অন্যদিকে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের জন্য আয়রন অত্যাবশ্যক।
যারা মাংস বা দুগ্ধজাত খাবার খায় না এমন লোকেদের জন্য তোকমা আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে।
ওজন কমাতে ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে:
অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফাইবার। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয় যে, ফাইবার অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে পারে।
পাশাপাশি তোকমা পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে। ১ টেবিল চামচ তোকমা বা তুলসী বীজে ৭ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।
ফাইবার ক্ষুধা কমিয়ে বার বার খাওয়ার প্রবণতা কমায় ফলে ওজন কমে।
রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে:
তোকমা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি এক মাস ধরে খাবার খাওয়ার পরে ৩/৪ টেবিল চামচ তোকমা পানিতে ভিজিয়ে রেখে নিয়মিত খাই তাহলে তাদের খাবারের পরে রক্তে শর্করা কম থাকে।
কোলেস্টেরল এর মাত্রা ঠিক থাকে:
নিয়মিত তোমাকে ভিজিয়ে খেলে কোলেস্টেরল এর মাত্রা ঠিক থাকে।
তোকমাতে থাকা পেটকিন অন্ত্রে কোলেস্টেরল শোষণকে বাধা দিয়ে রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাস করতে পারে।
দেখা গেছে, যে লোকেরা এক মাস ধরে প্রতিদিন ৭ চা চামচ তোকমা ভিজিয়ে খেতেন তাদের মধ্যে মোট কোলেস্টেরল ৮% হ্রাস পেয়েছিল।
শরীর ঠান্ডা রাখতে:
তোকমা গরমকালে দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। আর এ কারণে গরম আবহাওয়ার দেশগুলোতে বহু মানুষ তোকমার শরবত পান করে।
এছাড়া ঘর্মগ্রন্থিকে সচল রাখে। যাদের মূত্রনালির সমস্যা আছে তারা নিয়মিত তোকমা ভিজিয়ে খেলে মূত্রনালির সমস্যা দূর হয়ে যায়।
ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অন্যান্য পলিফেনল সমৃদ্ধ:
তোকমা ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অন্যান্য পলিফেনল সহ উদ্ভিদ যৌগগুলিতে সমৃদ্ধ।
ফ্ল্যাভোনয়েডস অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, এর অর্থ তোকমা কোষকে ফ্রি র্যাডিকাল দ্বারা ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এছাড়া এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।
বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণমূলক স্টাডিজে দেখা গেছে রোগের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য উচ্চতর ফ্ল্যাভোনয়েড গ্রহণ করা দরকার।
অন্য একটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, তোকমা ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়াকে মেরে ফেলে এবং ক্যান্সারের কোষের মৃত্যু ঘটায়।
ত্বক সুস্থ্য রাখতে:
ত্বকের নানা সমস্যায় তোকমা ব্যবহার করা যায়। যেমন তোকমা পানিতে ভিজিয়ে ফোঁড়ার মুখের চার পার্শ্বে লাগিয়ে দিলে শীঘ্রিই ফোঁড়া পেকে যায়।
এছাড়া রূপচর্চার কাজে ও ব্যবহার করা হয়। এজন্য কিছু তোকমা গুঁড়ো করে তা নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগানো যেতে পারে। এটি নানা চর্মরোগ নিরাময়ে কাজ করে।
এসিডিটি দূর করে:
তোকমা এসিডিটি দূর করতেও কার্যকর। এটি পেটের এসিড নিয়ন্ত্রণ করে জ্বালাপোড়া দূর করে।
এজন্য পানিতে সামান্য তোকমা ভিজিয়ে রেখে পান করতে হবে। তোকমা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক।
কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:
কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকর তোকমা। নিয়মিত তোকমা পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।
পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পাকস্থলীর যেকোনো সমস্যা দূর করে। পাইলস রোগীদের জন্য ও উপকারী।
সতর্কতা
গর্ভবতী নারীদের দেহের ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে তোকমা। তাই গর্ভবতী নারী ও শিশুদের তোকমা খাওয়া উচিত নয়।
এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
সূত্র: Healthline