জার্মানি লতা রক্ত পড়া বন্ধ করে এবং ভেষজগুন সম্পন্ন হওয়ায় নানাবিধ রোগে উপকারী।

আমার বাংলাদেশ। সোনা ফলা বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে, ঝোপ জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মুক্তো মানিক। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমরা এগুলোকে পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে যাই, কখনো ভেবে দেখিনা এগুলো কোন উপকারে আসবে কিনা।

রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে,বনে, বাগানে হাজারো উপকারী গাছপালা, লতাপাতা আছে যা আমাদের প্রাকৃতিক সুরক্ষা দেয়,পাশাপাশি অনেক স্বাস্থ্যসুবিধাও দিয়ে থাকে।

জার্মানি লতা বা ফিরিঙ্গি লতা বাংলাদেশের সকল বাগান, বন-জঙ্গলে সবসময় আমাদের চোখের সামনে থাকলেও আমরা কিন্তু অনেকেই এই গাছটিকে চিনি না বা এই গাছটির ভেষজ গুণ সম্পকে জানি না। অঞ্চল ভেদে এই লতানো গাছটিকে মানুষ অনেক নামে চেনে বা ডেকে থাকে।

তিক্ত লতা, ক্লাইম্বিং হেম্প ভাইন বা আমেরিকান দড়ি নামে পরিচিত। জার্মানি লতা আবার কেউ বলে জাপানি লতা বা অনেকে একে ফিরিঙ্গি লতা হিসেবেও চেনে।

এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল বহুবর্ষজীবী লতা যা উচ্চ আর্দ্রতা, আলো এবং উর্বর মাটিতে সবচেয়ে ভাল জন্মায়। যদিও এটি কম উর্বর মাটিতে মানিয়ে নিতে পারে। পালকের মতো বীজ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। একটি বৃন্ত প্রতি মৌসুমে ২০ থেকে ৪০ হাজার বীজ উৎপাদন করতে পারে।

Mikania

জার্মানি লতা একটি দ্রুত বর্ধনশীল লতা যা মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয়। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে বেশ কয়েকটি দেশে প্রবর্তন করা হয়েছিল এবং তখন থেকে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি প্রধান আগাছায় পরিণত হয়েছে এবং এখনও এর পরিসর প্রসারিত করছে। তবে আফ্রিকায় এটি এখনও তেমন পাওয়া যায় না।

আপনার শরীরের যে কোন স্থান কেটে গেলে আপনি যদি জার্মানি লতার পাতা রস করে লাগিয়ে দেন তাহলে আপনার কাঁটা জাইগা থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে ও কাটা জোড়া লেগে যাবে । ইহা এক মহা ঔষধি লতা যা বিপদে আপনার বন্ধু হতে পারে।

Mikania micrantha জার্মান লতার বৈজ্ঞানিক নাম। Mikania micrantha Asteraceae পরিবারের একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় উদ্ভিদ।

Mikania micrantha কি হুমকির মুখে?

 

ব্যাপকহারে বাগান, বন-জঙ্গল ধ্বংসের ফলে Mikania micrantha হল শীর্ষ 100টি সবচেয়ে খারাপ আক্রমণাত্মক প্রজাতির একটি যা প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতির ফলে আজ বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির খাতায় নাম লিখিয়েছে।

কেমন করে ব্যবহার করবেন?

 

কতকগুলি পাতা ছিড়ে পাটার উপর রেখে সুন্দর ভাবে পিশে শরীরের কাটা স্থানে ঐ পিশা পাতা লাগিয়ে কাপুর দিয়ে জড়িয়ে রাখুন। আনুমানিক ৪/৫ ঘণ্টা বাদ খুলে দেখবেন আপনার কাটা জোড়া লেগে গেছে। লাগানর সাথে সাথে আপনার কাটা জাইগা থেকে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে।

জার্মান লতা অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। নিন্মে কিছু নাম উল্লখ করা হলোঃ

  • জার্মান লতা
  • বিকাশ লতা
  • জাপানী লতা
  • ফিরিঙ্গি লতা
  • আসাম লতা
  • রিফুজি লতা
  • বুড়ি পান লতা

ডাক্তারের কাছে তো আমরা অবশ্যই যাবো তবে প্রাকৃতিক ভাবে অর্থাৎ ঔষধি গাছ দিয়ে যদি রোগের সমাধান করা যায় বা রোগ প্রতিরোধ করা যায় তাহলে আমরা প্রথমেই ডাক্তারের কাছে না গিয়ে নিজেরাই অনেক রোগ প্রতিকার করতে পারবো।

জার্মানি বা ফিরিঙ্গি লতায় রয়েছে প্রচুর ভেষজ গুন। আসুন জেনে নেই সেইগুলো কি কিঃ-

 

শীতকালে হাতের তালুতে চামড়া উঠে খসখসে হয়ে গেলে জার্মানি বা ফিরিঙ্গি লতা লাগালে খুব উপকার পাওয়া যায়। কিডনি এবং পাকস্থলিতে পাথর হলে জার্মানি বা ফিরিঙ্গি লতা নিয়ম করে চিবিয়ে খেলে পাথর অপসারণ করতে ভালো কাজ করে।

জন্ডিস বা লিভারের যে কোনও সমস্যা হলে জার্মানি বা ফিরিঙ্গি লতার রস অনেক কার্যকর এবং মূত্রথলি জনিত রোগের জন্যও এই লতার রস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ইউনানী গবেষকরা কাটা ক্ষত, রক্তপড়া,গ্যাষ্ট্রিক ও বিষক্রিয়া দূর করতে জার্মানি বা ফিরিঙ্গি পাতার রস বহুকাল ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।

প্রতিদিন খালি পেটে চার চা-চামচ জার্মানি লতার রস ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে সাতদিন খেলে রক্ত দূষণ ভালো হয়।