গর্ভাবস্থায় পেয়ারা। গর্ভবতী মায়েদের ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ পেয়ারা খাওয়ার উপকারীতা।
পেয়ারা একরকমের সবুজ রঙের বেরী জাতীয় ফল । তবে অন্যান্য বর্ণের পেয়ারাও দেখতে পাওয়া যায়। লাল পেয়ারাকে (Marroonguava) রেড আপেলও বলা হয়।
পেয়ারার বৈজ্ঞানিক নাম Psidiun guajava। পেয়ারার প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতি আছে। পেয়ারার (বৈজ্ঞানিক নাম:Psidium guajava), এরা Myrteae পরিবারের সদস্য। এটি একটি পুষ্টিকর ফল।
এটি ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েডস, ফোলেট, পটাশিয়াম, আঁশ এবং ক্যালসিয়াম প্রভৃতিতে সমৃদ্ধ। একশ’ গ্রাম পেয়ারায় দুইশ’ মি.গ্রা. ভিটামনি সি আছে অর্থাৎ পেয়ারায় কমলার চেয়ে ৪গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে।
পেয়ারা তার প্রাকৃতিক ফর্ম বা আকারে খাওয়া সবচেয়ে ভাল মানে কাঁচা খাওয়া ভালো। এটি অন্যান্য ফলের সাথে একত্রে ফলের সালাদেও খাওয়া হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য জাম, জেলি এবং রস হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়।
অধিক পুষ্টিকর এই ফলটি গর্ভাবস্থায় খাওয়া ভালো এবং কতটুকু নিরাপদ সেই সম্পর্কে আমরা জানবো।
পেয়ারা ব্যতিক্রমী পুষ্টিকর এবং একটি স্বাস্থ্যকর ফল উপলভ্য, যা আপনার দেহের একাধিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তার যত্ন করে।
উচ্চ জলের পরিমাণ এবং চর্বি, শর্করা এবং প্রোটিনের তুলনামূলকভাবে কম উপস্থিতি এটিকে খাবারের একটি আদর্শ অংশ করে তোলে।
গর্ভাবস্থায় পেয়ারার কিছু উপকারিতা নীচে আলোচনা করা হলো:
পেয়ারা ফলের পুষ্টিগুণগুলি গর্ভবতী মহিলার ডায়েটে অপরিহার্য সংযোজন করে তোলে।
গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে:
ফলের রানী পেয়ারা স্বাদে গন্ধে যেমন সকলের মন কেড়ে নেয় তেমনি পুষ্টিগুণেও কোনো তুলনা হয় না।
পেয়ারাতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “সি”। আর ভিটামিন “সি” শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
পেয়ারাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস, অ্যান্টি-টক্সিন যেমন ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “ই”, আইসো-ফ্ল্যাভানয়েডস, ক্যারোটিনয়েডস, পলিফেনল থাকে।
এগুলি দেহে জীবাণু এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এইভাবে গর্ভবতী মাকে অনেক অসুস্থতা থেকে দূরে রাখে।
ফলিক অ্যাসিড এর উৎস:
পেয়ারা কেবল প্রত্যাশিত মহিলাদের সঠিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে না, এটি ভ্রূণকেও সহায়তা করে।
পেয়ারা ফল ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি-৯ এর স্টোরহাউস। এটি একটি ভিটামিন যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সব গর্ভবতীদেরই ডাক্তাররা ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলেন বা ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকেন কারণ এটি বাচচার ব্রেইন ও মেরুদণ্ডের গঠনকে উন্নত করে।
আর সেই সাথে এটি বাচচাদের নিউরোলোজিক ডিজঅর্ডার থেকে দুরে রাখে।
গর্ভবতী মায়ের ক্যান্সার বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
পলিফেনল আছে যা কিনা শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে আর এই এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কমায়।
বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার কমাতে অনেক সাহায্য করে পেয়ারা। আর সেই সাথে পেয়ারা খেলে মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে:
পেয়ারাতে ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে এটি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে আর তাই ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকি কিছুটা কম থাকে।
পেয়ারা খাওয়া রক্তের সুগারকে স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে বজায় রাখে এইভাবে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে:
পেয়ারা শরীরের সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম এর ব্যালান্স বাড়ায়,যা কিনা ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে।
পেয়ারা ট্রাইগ্লিসারাইড এবং LDL নামক একটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় যার ফলে হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
রক্তে চর্বি কম জমে এর ফলে। একই সাথে এই পেয়ারা HDL নামক একটি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় যা কিনা হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
পেয়ারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায়, গর্ভপাত ও অকাল জন্ম, মাতৃমৃত্যু এড়াতে রক্তচাপে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।
কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:
অনেক মহিলা গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের অভিযোগ করেন। পেয়ারা, এর রেচক বৈশিষ্ট্য সহ সহজেই অন্ত্রের গতিবিধিতে সহায়তা করে।
ফলস্বরূপ, এই আশ্চর্যজনক ফল হজম সম্পর্কিত যে কোনও ধরণের সমস্যা প্রতিরোধ করে, যা গর্ভাবস্থায় একেবারে প্রয়োজনীয়।
পেয়ারা একটি ফাইবার জাতীয় ফল আর তাই এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় আর তাই কারো ঠিকমত পায়খানা না হলে পেয়ারা খেয়েই করতে পারেন আপনার সমস্যার সমাধান।
যেহেতু পেয়ারা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড বা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ তাই এটি গর্ভবতী মায়েদের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
এটি অন্যান্য স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি যেমন দাঁতে ব্যথা, রক্তপাত মাড়ি, আলসার, ভাঙা রক্তনালীগুলি এবং গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত অন্যান্য অসুবিধাগুলি দূর করতে সহায়তা করে।
পেয়ারাতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম শরীরের স্নায়ু এবং পেশী শিথিল করতে সহায়তা করে। এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী।
পেয়ারাতে ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে এটি মাংশপেশিকে এবং নার্ভকে রিলাক্স বা শিথিল রাখতে সাহায্য করে।
আর তাই অনেক কাজ শেষে অথবা অনেকে স্ট্রেস নেয়ার পর একটি পেয়ারা খেয়েই আপনি আপনার এনার্জি লেভেলকে পারেন বাড়াতে।
সতর্কতাঃ
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।