আঙ্গুর না কিসমিস কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী?

আঙ্গুর এমন একটি ফল যা খেতে খুবই সুস্বাদু, এটি মিষ্টি এবং সরস ফল। এটি সকলের প্রিয় ফল। বাচ্চা-বৃদ্ধ সকলেই এই ফল খেতে পছন্দ করেন। আঙ্গুর শুকিয়ে কিসমিসে পরিণত হয়। কিসমিস একটি খুব জনপ্রিয় শুকনো ফল।

একটি কাঁচা, অন্যটি শুকনো। পার্থক্য বলতে এই যা! দুটো খাওয়ার মধ্যে তেমন কোনও পার্থক্য নেই বলে অনেকেই মনে করেন। আঙ্গুর শুকানোর সময়ই এর পুষ্টিগুণ বদলে যায়। তাই কারও জন্য আঙ্গুর ভালো আবার কারও জন্য কিসমিস।

আঙ্গুর সকলের প্রিয় একটি ফল। শরীর ভালো রাখতে এবং দূষিত বস্তু শরীর থেকে বের করে দিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অত্যন্ত প্রযোজনীয়। কিসমিসে আঙ্গুরের চেয়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ক্ষমতা প্রায় তিনগুণ বেশি। আবার এনার্জি বুস্টার হিসেবে পরিচিত কিসমিস।

এটি পটাশিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়ামে ভরপুর। এর থেকে আঙ্গুরে পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ আলাদা। তাই কারও স্বাস্থ্যে কিসমিস ভালো তো কারও পক্ষে আঙ্গুর। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এ দুটির মধ্যে কোনটি বেশি ভালো?

আঙ্গুরে ৮০% পানি থাকে, আর কিসমিসে থাকে ১৫%। তবে কিসমিসে আঙ্গুরের চেয়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমান প্রায় তিনগুণ বেশি ভিটামিন বেশি থাকে। আঙ্গুরে ভিটামিন “কে”, ভিটামিন “ই”, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “বি ১” এবং ভিটামিন “বি ২” তে সমৃদ্ধ। তবে কিসমিসের তুলনায় আঙ্গুর স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী।

আঙ্গুর এবং কিসমিস বিভিন্ন ধরণের পাওয়া যায়। ভারতে সাধারণত সবুজ, কালো এবং লাল আঙ্গুর পাবেন। রেসভেরট্রোল একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা প্রচুর পরিমাণে লাল আঙ্গুর মধ্যে পাওয়া যায়। এই যৌগ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

ভারতীয় উপমহাদেশে বেশির ভাগই সোনালি, সবুজ এবং কালো এর কিসমিস পাওয়া যায়। সোনালি কিসমিসগুলি স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয় কারণ সোনালি কিসমিসে অন্য কিসমিসের চেয়ে বেশি ফ্লেভোনয়েড রয়েছে।

ফল ডায়েটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আঙ্গুরে খুব কম ক্যালোরি থাকে এবং ফাইবার থাকে। ফাইবার ক্ষুধা প্রতিরোধ করে দীর্ঘসময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখে। এছাড়া আঙ্গুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন “সি”তে পূর্ণ। এই দুটি পুষ্টিই ত্বকের কোষগুলিকে তরুণ রাখতে সহায়তা করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী অতিবেগুনী বিকিরণ থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করে।

raisins

অন্যদিকে কিসমিস ফাইবার, পটাসিয়াম, আয়রন এবং প্রয়োজনীয় খনিজগুলির একটি ভাল উৎস। কিসমিসে টারটারিক অ্যাসিড (tartaric acid) নামে একটি যৌগ থাকে, যার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে টারটারিক অ্যাসিড অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে এবং অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, আঙ্গুর না কিসমিস কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?

ডায়েটে:

ডায়েটের দিক থেকে বিবেচনা করলে আঙ্গুর। আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায় এবং খুব কম ক্যালোরি থাকে। যা আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে অনেক সাহায্য করে, আপনি আঙ্গুর খাওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘকাল ক্ষুধা অনুধাবন করতে পারবেন না।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:

শরীর ভালো রাখতে, দূষিত বস্তু শরীর থেকে বের করে দিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অত্যন্ত প্রযোজনীয়। আঙ্গুরের চেয়ে কিসমিসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘনত্বও প্রায় ৩ গুণ বেশি। সেই বিচারে কিসমিস অনেকটাই এগিয়ে।

মিষ্টি:

আঙুর শুকালে তাতে চিনির পরিমাণ অনেক ঘন হয়। তাই কিসমিসে আঙুরের চেয়ে বেশি চিনি থাকে। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকারক। ফলে তাদের জন্য আঙ্গুরই বেস্ট।

ক্যালোরি:

আঙ্গুরের চেয়ে কিসমিসে ক্যালোরির পরিমান বেশি থাকে। কারণ কারণ কিসমিস শুকনা ফল। শুকনা ফলে ক্যালোরি ঘন হয়। তাই, চিনির মতোই ক্যালোরির ক্ষেত্রেও আঙ্গুরের চেয়ে অনেক এগিয়ে কিসমিস। কিসমিস আঙ্গুরের চেয়ে বেশি ক্যালোরি বহন করে। আধা কাপ কিসমিসে প্রায় ২৫০ ক্যালোরি থাকে, আর একই পরিমানে আঙ্গুরে ৩০ ক্যালোরি থাকে।

কোনটি ভালো?

Grapes and Raisins

কিসমিস না আঙ্গুর, কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর? সাধারণত এটা নির্ভর করে কোনও ব্যক্তির প্রয়োজনের ওপর। যদি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টকে বেশি গুরুত্ব দেন, তাহলে কিসমিস সবচেয়ে ভালো। আবার যদি চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া নিয়ে সমস্যা থাকে, তাহলে আঙ্গুর খাওয়া শ্রেয়।

নিচে কিসমিস এবং আঙ্গুর এর পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো –

 

কিসমিস (প্রতি ১০০ গ্রাম)

আঙ্গুর (প্রতি ১০০ গ্রাম)

পানি

১৫.৪৩%

৮০.৫৪%

ক্যালরি

২৫০ গ্রাম

৩০ গ্রাম

কার্বোহাইড্রেট

৭৯.১৮ গ্রাম

১৮.১০ গ্রাম

ফাইবার

৩.৭০ গ্রাম

০.৯০ গ্রাম

সুগার

৫৯.১৯ গ্রাম

১৫.৪৮ গ্রাম

ভিটামিন “সি”

২.৩০ গ্রাম

৩.২০ গ্রাম

রেফারেন্স: