গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ডাবের পানি।

ডাবের পানি একটি সতেজ, শক্তিযুক্ত, মিষ্টি এবং পরিষ্কার পানীয় যা শরীরকে পুনরায় ইলেক্ট্রলাইট করতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি নিরাপদ। আপনি গর্ভাবস্থায় আর থেকে বেশি নিরাপদ পানি আর খুঁজে পাবেন না। তবে আমরা সবাই জানি অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো নয়।

তাই আমরা পরিমান মতো ডাবের পানি খাব। কারণ ডাবের পানিতে পটাসিয়াম থাকে। অতিরিক্ত পটাসিয়াম গ্রহণ গর্ভাবস্থায় ভালো নয়।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ডাবের পানি গর্ভকালীন সময়ে অতি নিরাপদ একটি পানীয়। পাঁচটি প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইটস- মিনারেলস, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ডাবের পানিতে বিদ্যমান। এই উপাদানগুলি দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে শরীরকে পুষ্টিতে ভরিয়ে তোলে। যার ফলে গর্ভাবস্থার ১ম তিন মাস সময়টায় প্রাতঃকালীন দুর্বলতা দূর হয়।

গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ প্রায়শ দেখা যায় যেমন: গ্যাস বা অম্বল, বুকজ্বালা, কোষ্টকাঠিন্য ও বদহজম। ডাবের পানিতে বিদ্যমান ফাইবার পাচনতন্ত্রের উন্নতি করে অর্থাৎ হজমশক্তি বাড়ায়।

এছাড়া রক্তের PH লেভেল ঠিক রাখে এবং কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। আর তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন এক গ্লাস তাজা ডাবের পানি পান করা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডাবের পানির পুষ্টির উপাদান

  • ক্যালরি: ৫.৪৫ গ্রাম
  • শর্করা: ১.৩ গ্রাম
  • সোডিয়াম: ৩০ মিলিগ্রাম
  • ফ্যাট: ৬০ মিলিগ্রাম
  • পটাসিয়াম: ১৭% (RDI)
  • ক্যালসিয়াম: ৬% (RDI)

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ডাবের পানি

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে-

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে:

কোষ্ঠকাঠিন্য গর্ভাবস্থায় একটি প্রচলিত সমস্যা। ডাবের পানিতে প্রতি ১০০ গ্রামে ২.৬ গ্রাম ফাইবার আছে। তাই ডাবের পানি নিয়মিত পান করলে কোষ্টকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

বুক জ্বালাপোড়া কমায়:

বুক জ্বালাপোড়া করা গর্ভাবস্থায় খুব প্রচলিত একটি সমস্যা। ডাবের পানি এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে অনেকটা সাহায্য করে। ডাবের পানি পান এসিডের মাত্রাকে কমায়। এতে হজমের সমস্যা ও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর হয়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:

গর্ভবতী মহিলাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ডাবের পানি বেশ কার্যকর। কারণ এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ও ভিটামিন “সি” যা ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রন করে। তাই গর্ভবতী মহিলারা যদি ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রনে রাখতে চান তাহলে ডাবের পানি খান।

ডিহাইড্রেশন দূর করে:

এটি ডাবের পানির প্রথম উপকারি দিক। গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই আপনি সহজেই পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করতে পারেন ডাবের পানির মাধ্যমে। গর্ভাবস্থায় অনেক সময় বমি হয়। তখন শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়।

ডাবের পানি এই ডিহাইড্রেশন দূর করতে সাহায্য করে। আর বমি হলে রক্তে পটাশিমের পরিমান কমে যায়। ডাবের পানির মধ্যে থাকা পটাশিয়াম এটা পূরণ করতে পারে। এমনকি স্যালাইনের সুবিধা নেই এমন এলাকায় ডাবের পানিকে চিকিৎসকরা স্যালাইন হিসাবে ব্যাবহার করে থাকে।

ওজন ঠিক রাখে:

গর্ভকালীন সময় নারীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা সঠিক ওজন ধরে রাখা। কারোর ওজন বেড়ে যায়, আবার কারোর ওজন কম থাকে। ডাবের পানি সঠিক ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে থাকে। ডাবের পানিতে জিরো ফ্যাট এবং কোলেস্টেরেল আছে, তাই এটি পানে ওজন বৃদ্ধি হবার কোন ভয় নেই। তাই নির্ভয়ে আপনি প্রতিদিন এটি পান করতে পারেন।

ইলেক্ট্রোলাইট যোগান দেয়:

গর্ভবতী নারীদের প্রচুর পরিমাণ ইলেক্ট্রোলাইটের প্রয়োজন পরে। কার্যকরভাবে এবং সঠিকভাবে পানিশূন্যতা দূর করার জন্য ইলেক্ট্রোলাইটের প্রয়োজন হয়। পানির মধ্যে যদি খনিজ উপাদান থাকে তখন তাকে ইলেক্ট্রোলাইট বলা হয়। ডাবের পানিতে রয়েছে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম এবং ক্যালসিয়াম তাই এটি একটি ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়।

ভ্রূণের বিকাশের জন্য:

শিশুর বিকাশের জন্য ভিটামিন এবং খনিজ গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মহিলাদের তাদের ডায়েটে ডাবের পানি অন্তর্ভুক্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল ডাবের পানি ক্রমবর্ধমান শিশুর হাড় এবং দাঁত গঠনে সহায়তা করে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম থাকে এবং ভ্রূণের সঠিক হাড়ের বিকাশের জন্য এই খনিজগুলি প্রয়োজনীয়।

সতর্কতা

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো ডাক্তারের তত্বাবধানে থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ করেন তাহলে খাবার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স: