গরীবের আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট অবহেলার ‘কচুশাকের’ উপকারীতা।
গ্রামাঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় কচু শাক। কারণ বাড়ির উঠানে, বাগানে, রাস্তার পাশে, বিলের ধারে, জমিতে যেখানে সেখানে বিনা যত্নে জন্মে ও বেড়ে ওঠে। সহজলভ্য এই শাকটি তাই গ্রামে-গঞ্জে কিনে খেতে হয় না।
কচুশাককে ইংরেজিতে Arum Spinach বলা হয়ে থাকে। এটি Araceae পরিবারের একটি সবজি। পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ায় এটি ভালো জন্মে।
কচুশাককে আগে অবহেলার চোখে দেখা হতো। কিন্তু বর্তমানে অধিক আঁশ সমৃদ্ধ এই শাকটিকে অবহেলা করা মানে বড় একটা বোকামি করা।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কচুশাক এখনও খুবই জনপ্রিয়। কচুশাকের গোড়া, ডগা, পাতা তিনটিই সবজি হিসাবে খাওয়া যায়। পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা-পাঁকা ঝাঁল, নারকেল কোরা আর নামানোর আগে একটু চিনি বা গুড়। আর কিছু লাগবে না। শুধু কচুশাক দিয়ে কয়েক প্লেট ভাত ম্যাজিকের মতো উধাও।
এখানে আর একটি কথা না বললেই নয়। সেটি হলো ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচু শাক। খাবারের এই পদটি দুই বাংলাতেই (বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া) সমান জনপ্রিয়।
ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুশাক রান্না করলে গামলাভর্তি ভাত মুহূর্তেই শেষ। কচুশাক চিংড়ি মাছ দিয়ে খেতেও খুব ভালো লাগে।
কচুশাকের স্বাস্থ্য সুবিধা :
কচুশাককে কচুশাক না বলে আয়রনের পাওয়ার হাউজ বলা যায়। গর্ভবতী মায়েরা থেকে শুরু করে সব বয়সী মায়েদের শরীরে আইরন-এর ঘাটতি একটি কমন সমস্যা। নিয়মিত কচুশাক খেয়ে আমরা সহজেই এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারি। নিচে কচুশাকের স্বাস্থ্য সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হল–
আয়রনের চাহিদা পূরণ করে :
মানব শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রন সরবরাহ করার জন্য কচুশাকের মতো দ্বিতীয়টি আর নেই। এতে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও অন্যান্য পুষ্টি। মানব দেহের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য এ পুষ্টি উপাদান গুলো খুবই কার্যকরী।
হজমের জন্য ভালো :
আঁশযুক্ত খাবার হজমের জন্য ভালো। আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে ক্ষুধা কম লাগে। ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আঁশযুক্ত খাবার আমাদের হজমের উন্নতি ঘটায় এবং বার বার খাওয়ার প্রবণতা দূর করে। কচুশাক আঁশযুক্ত হয় এটি আমাদের হজমের জন্য ভালো
দেহের বৃদ্ধি ও কোষ গঠনে সাহায্য করে :
এতে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন রয়েছে, যা মানুষের দেহের বৃদ্ধি এবং কোষ গঠনে অবদান রাখে। ভিটামিন কোষ পুনর্গঠন সাহায্য করে। কচু শাকের পাতা রক্তে আয়রনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ফলে রক্তে অক্সিজেন সঞ্চালনের পরিমান বেড়ে যায়।
কোষ্টকাঠিন্য দূর করে :
আমরা সবাই জানি, আঁশ বা ফাইবার যুক্ত খাবার মানে, কোষ্ঠকাঠিন্যের উন্নতি। পাচনতন্ত্রের শান্তি অর্থাৎ প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার পাচনতন্ত্রে আটকে থাকে না। সহজেই মল হয়ে বেরিয়ে যায়। কচুশাকে প্রচুর আঁশ রয়েছে। তাই কচুশাক কোষ্টকাঠিন্য দূর করে।
হাড় শক্ত করে :
ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠন, দাঁতের গঠনে কাজ করে এবং এদের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। কচুশাকে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।