গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে পুদিনা পাতা খান। দারুন ফল মিলবে।
এই গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে পুদিনা বা mint বা mentha পাতার কোনো তুলনা হয় না। সবুজ তরতাজা পাতাগুলি, সুগন্ধযুক্ত, মিষ্টি একটা স্বাদ খাবারে যুক্ত করে এবং একটি শীতল আভা সরবরাহ করে।
পুদিনা পাতা দিয়ে আপনি চা, শরবত বা পানীয়, জেলি, সিরাপ, আইসক্রিম এবং ক্যান্ডি তৈরি করে খেতে পারবেন। পুদিনা স্বাদযুক্ত চা ভারতে বেশ জনপ্রিয় এবং আরবীয় এবং আফ্রিকান দেশগুলিতেও এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Mentha spicata.
এই গরমে গর্ভবতী মায়ের সকালের অসুস্থতা বা বমি বমি ভাবের লক্ষণগুলি কমায়। বমি বমি ভাব নিরাময়ের জন্য পুদিনা একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। এটি সকালের অসুস্থতায় ঘটে যাওয়া বমিভাবের নিরাময়ের জন্যও দারুন কার্যকর।
প্রতিদিন সকালে কয়েকটি পাতা খাওয়া বা পুদিনার কিছু পাতার গন্ধ নেওয়া মা হতে চলা এমন মায়ের বমিভাব অনুভূতিটি কাটিয়ে উঠতে এবং আরও ভালভাবে মোকাবেলা করতে সহায়তা করতে পারে।
পুদিনা হল প্রায় এক ডজনেরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতির নাম, Mentha জেনাসের অন্তর্ভুক্ত এবং পেয়ারমিন্ট ও স্পয়ারমিন্ট রয়েছে। এই গাছগুলি শীতল সংবেদনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এগুলি তাজা এবং শুকনো উভয় প্রকারের খাবারে যুক্ত করা যেতে পারে।
বাংলায় পুদিনা পাতা, ইংরেজিতে Spearmint, Lamiaceae পরিবারের এই উদ্ভিদটি স্পেন এবং মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা, পুদিনা মেন্টা হিসাবে পরিচিত। কিছু দেশে বিশেষত পর্তুগালে, পুদিনার প্রজাতি হর্টেলা নামে পরিচিত। অনেক ইন্দো-আর্য ভাষায় একে পুদন্না বলা হয়: হিন্দি: पुदीना, সিন্ধি: ڦউডনো, বাংলা: পুদিনা।
গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে এই পাতার প্রভাব:
প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে পুদিনা পাতা। ঔষধ এর পাশাপাশি এটি রূপচর্চার উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। পুদিনা পাতা এমন একটি উপাদান রয়েছে যা দেহের ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।
পুষ্টির ভান্ডার:
পুদিনাপাতা সুগন্ধযুক্ত, প্রায় একচেটিয়াভাবে বহুবর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। পুদিনায় ভিটামিন “বি”, “ই”, “সি” ও “ডি” থাকে বলে সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন বি মস্তৃষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে মুড ভালো করে দেয়।
শরীর ঠান্ডা রাখে:
এই গরমে এক গ্লাস পুদিনা পাতার রস শরীর ঠান্ডা করতে দারুন কার্যকর। পুদিনা পাতা, পরিমাণমতো পানি লবণ বা বিট লবণ, স্বাদ মতো ভাজা জিরা-গুঁড়া এক চা-চামচ। লেবুর রস এক টেবিল-চামচ। কাঁচা-মরিচ ১টি অথবা স্বাদ মতো। চিনি বা গুড় প্রয়োজনমতো।
এছাড়া পুদিনা পাতায় মেন্থল রয়েছে। ঠাণ্ডা ও কাশিতেও চমৎকার কাজ করে পুদিনার জুস।
ফ্যাট পোড়ায় বা কমায়:
পুদিনা: একটি ঔষধি। হ্যাঁ, পুদিনা পাতা ফ্যাট কমায়। পুদিনা পাতা পিত্তথলি থেকে অতিরিক্ত পিত্তের মুক্তির সূত্রপাত করে, এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শরীরকে ফ্যাট হজমে সহায়তা করে। শরীরের ফ্যাট বা চর্বি কমে। তাই পুদিনা পাতা খেয়ে শরীর হালকা বা ঠান্ডা করুন।
ব্যথা কমায়:
ব্যথা কমাতে পুদিনা পাতার কেরামতি অনেকেই হয়তো জানেন। প্রথমে বলি মাথা ব্যথার কথা। পুদিনা একটি শক্তিশালী অ্যাডাপ্টোজেনিক ঔষধি। ‘হিলিং ফুডস’ বই অনুসারে পুদিনা মাথা ব্যাথা নিরাময়েও সহায়তা করতে পারে। পুদিনার দৃঢ় এবং সতেজ গন্ধ মাথা ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
পুদিনা পাতার রস পেশীর ব্যথা কমায়। পেট ব্যথা ও পেটের সমস্যায় এটি কাজে দেয়। পুদিনার রস বা জুস পিরিয়ডের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয় এবং রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে। ব্যথা কমাতে যে ওস্তাদ তাকে তো শীতলকারক উপাধি দেওয়া যেতেই পারে।
হজমে সাহায্য করে:
পুদিনার শরবত বা জুসে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মেন্থল থাকে যা হজমে সাহায্য করে এবং খিঁচুনি প্রতিরোধ করে।
পুদিনা পাতার জুস ত্বককে শীতল করে। নিয়মিত পুদিনা পাতার জুস খেলে শরীরের ত্বক সতেজ হয়, সজীব ভাব বজায় থাকে। মৃত কোষকে দূর করে মৃসণ করে তোলে ত্বক।
মুখের ভেতরও ঠান্ডা করে:
পেঁয়াজ, রসুন বা অন্যকিছু যেটাই খেয়েছেন, মুখের গন্ধ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন। বাইরে বেরোবেন বা অনেক লোকের সাথে interaction বা কাজ করতে হবে। ভাববেন না, পুদিনা ট্যাবলেট বা কয়েকটি পুদিনা পাতা চিবান। পুদিনা পাতার জীবাণুঘটিত বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিকভাবে আপনার শ্বাসকে সতেজ করতে সাহায্য করতে পারে।
এটি আমাদের সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের জন্যও বিস্ময়কর কাজ করে। এটি মুখের ভিতরে ব্যাকটিরিয়া বৃদ্ধি রোধ করে, এবং দাঁতে ফলকের জমাটি পরিষ্কার করে। এই কারণেই বাজারে টুথপেস্টগুলি পুদিনা বেসে আসে অর্থাৎ পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়।
সতর্কতাঃ
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। পতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।