গম কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে ও স্থূলতার ঝুঁকি হ্রাস করে।
গম পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শস্যের মধ্যে একটি। গম বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের সমৃদ্ধ উৎস।
এর আদি উত্পত্তি মধ্যপ্রাচ্যের লেভান্ট অঞ্চলে, কিন্তু এখন গম সারাবিশ্বে চাষ করা হয়। বিশ্বব্যাপী গম এখন প্রোটিনের নিরামিষ উত্স হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গম হল এক ধরণের শস্য যা প্রায়শই রুটি, পাস্তা বা নুডলস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Triticum aestivum এবং ইংরেজি নাম Wheat. এটি পোয়াসি পরিবারের ট্রিটিকাম গণের তৃণ।
গমের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান থাকে যা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, প্রোটিন, ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন “বি”৯, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ এবং সেলেনিয়াম।
এছাড়া গমে থাকা ভিটামিন “ই”, ফাইবার এবং সেলেনিয়াম শরীরে ক্যান্সারের কোষ জন্ম নিতে দেয় না। সেই সঙ্গে টিউমারের সম্ভাবনাও কমায়।
গ্লুটেনযুক্ত খাবার যেমন গম এবং বার্লি সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। গ্লুটেন হল গমের মধ্যে উপস্থিত একটি প্রোটিন।
গমের পুষ্টিগুণ
নিচে গমের পুষ্টি তথ্য দেওয়া হলো- গম হতে যে আটা হয় তার প্রতি ১০০ গ্রাম আটায়,
- প্রোটিন বা আমিষ: ১৩.২ গ্রাম
- ক্যালরি: ৩৪০
- কার্বোহাইড্রেট: ৭২ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ৪৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন “বি”: ১০.৪৯ মিলিগ্রাম
- ফাইবার: ১০.৭ গ্রাম
- আস্ত গমে জলীয় অংশ: ১১% থাকে
গমের উপকারিতা
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে গমের উপকারিতা সম্পর্কে-
কার্বোহাইড্রেট এর উৎস:
অন্যন্য খাদ্যশস্যের মতো, গম কার্বোহাইড্রেট এর উৎস। উদ্ভিদের মধ্যে স্টার্চ হল প্রধান কার্বোহাইড্রেট, যা গমের মধ্যে ৯০% এরও বেশি রয়েছে। স্টার্চ স্বাস্থ্যের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে তা মূলত কতটা হজম হল তার উপর নির্ভর করে।
বেশি হজম হলে রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।
সাদা ভাত এবং আলুর মতোই, সাদা এবং আস্ত গম উভয়ই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনুপযুক্ত।
কিছু প্রক্রিয়াজাত গমের পণ্য যেমন পাস্তা আস্তে আস্তে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না।
ফাইবারের উৎস:
আস্ত গম ফাইবারের দুর্দান্ত উৎস। গমের প্রধান ফাইবার হল অ্যারাবিনোক্সিলান (arabinoxylan)। বাকিটা বেশিরভাগই সেলুলোজ দিয়ে তৈরি।
গমের মধ্যে থাকা ফাইবার মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখে। গম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ থাকে দূরে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস:
আস্ত গম হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। গমের অন্যতম উপাদান ফাইবার “খারাপ” কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে পাশাপাশি রক্তচাপ হ্রাস পায়। প্রতিদিন আস্ত গম খাওয়ার অভ্যাস স্ট্রোকের ঝুঁকি ১৪% কমিয়ে আনতে পারে।
স্থূলতার ঝুঁকি হ্রাস:
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে। গম স্থূলত্বের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। প্রতিদিন যেকোন ৩টি আস্ত শস্য খাওয়ার অভ্যাস স্থূলতার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে।
কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ:
আস্ত গম কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্য বেশি খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪০% কমিয়ে দিতে পারে। গম ফাইবারে সমৃদ্ধ উৎস এবং বেশ কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
শরীরকে দূষন থেকে রক্ষা করে:
এতে থাকে শক্তিশালী এনজাইম ও বায়োকেমিক্যাল যা দূষিত টক্সিন, ভারী ধাতু এমনকি রেডিয়েশন থেকেও আপনার শরীরকে রক্ষা করে।
গাটের ব্যাথা কমায়:
যে বয়সই হোক না কেন গাঁটের ব্যাথাকে কমানোর ক্ষেত্রেও একে কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন ভালো উপকার পাবেন।
সতর্কতা
অনেক সময় গম খাওয়ার জন্য পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ডায়রিয়া, জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। এমনকি এলার্জির সমস্যাও হতে পারে।