কারিপাতা দাঁতের জন্য ভালো, রক্তাল্পতা দূর করে ও এন্টিক্যান্সার প্রভাব রয়েছে।

নিম পাতার মতো দেখতে তাই কারিপাতা মিষ্টি নিম কিংবা বারসুঙ্গা নামেও পরিচিত। অনেকে বলে কারিপাতা তেজপাতার মতো দেখতে কিন্তু আকারে কিছুটা ছোট। তাই অনেকের কাছে এটি ভারতীয় তেজপাতা হিসাবে পরিচিত।

কারিপাতা ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এটি কেবল খাবারে সুগন্ধযুক্ত করে না, পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

বারসুঙ্গা বা কারিপাতার ইংরেজিতে: Curry Leaves এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Murraya koenigii অথবা Bergera koenigii. ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রোর অন্ত্রের ব্যাধি ইত্যাদির চিকিৎসার জন্য কারিপাতা ঔষধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

আয়ুর্বেদ ইউনানী এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসায় কারিপাতা ব্যবহার খুঁজে পাওয়া গেছে।

অনেক আগে থেকে করিপাতার ডাল মৌখিক স্বাস্থ্যবিধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন আসছে। আগেকার দিনে দাঁত পরিষ্কার করার জন্য দাঁত ও মাড়িকে শক্তিশালীকরণ এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া থেকে রক্ষা করার জন্য কারিপাতার ডাল প্রাকৃতিক ব্রাশ হিসাবে ব্যবহৃত হত।

আজকালকার আধুনিক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় করিপাতার গুঁড়া বা কাঁচা পাতা মুখের স্বাস্থ্যের জন্য দাঁত মাজন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

পুষ্টি গুনে সমৃদ্ধ কারি পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারের। কারি পাতা শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না।রূপচর্চাতেও এর জুড়ি মেলা ভার।চকচকে সবুজ কারি পাতা কোলেস্টেরল এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রার পরিমান  ঠিক রাখে। লিভারের জন্য কারি পাতা বেশ উপকারি। এবং হজমেও সহায়তা করে।

কারিপাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

নিচে কারিপাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

শক্তিশালী উদ্ভিদ যৌগিক সমৃদ্ধ:

কারিপাতা হল ক্ষারক উদ্ভিদের উপাদান যেমন ক্ষারক, গ্লাইকোসাইড এবং ফেনলিক যৌগগুলি সমৃদ্ধ, যা এই সুগন্ধযুক্ত ভেষজকে শক্তিশালী স্বাস্থ্য সুবিধা দেয়।

গবেষণায় দেখা গেছে যে কারিপাতাতে লিনলুল, আলফা-টারপিনিন, মরিসিন, মহানিম্বাইন, কেরিওফিলিন, মুরারিয়ানল এবং আলফা-পিনিন সহ অনেকগুলি যৌগ রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলি যৌগিক আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।

হার্ট সুস্থ রাখে:

কারিপাতা উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড স্তরের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড স্তরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে এলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, কারিপাতার নির্যাস উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে।

মস্তিষ্কের জন্য ভালো:

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কারিপাতা আপনার মস্তিষ্ক সহ স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা করতে পারে। আলঝাইমার ডিজিজ একটি প্রগতিশীল মস্তিষ্কের রোগ।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কারিপাতায় এমন উপাদান রয়েছে যা আলঝাইমার রোগের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ অবস্থার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

এন্টিক্যান্সার প্রভাব থাকতে পারে:

টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কারিপাতার নির্যাস স্তন ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি পরিবর্তন করার সাথে সাথে কোষের কার্যক্ষমতার হ্রাস করে। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে কারিপাতায় একটি ক্ষারীয় যৌগ রয়েছে যা কোলন ক্যান্সার কোষের মৃত্যুকে প্ররোচিত করে।

রক্তাল্পতা দূর করে:

শরীরে আয়রনের ঘাটতি রক্তাল্পতার কারণ হয়। কারিপাতা রক্তের হিমোগ্লোবিন এবং লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি প্রাকৃতিক রক্ত পরিশোধক হিসাবে কাজ করে। প্রতিদিন সকালে একটা খেজুরের সঙ্গে ২টা কারি পাতা খেলেই উপকার পাওয়া যায়।

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে:

কারিপাতার হাইপোগ্লাইসেমিক শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণা প্রমাণ করেছে যে কারিপাতার নির্যাস উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে এবং স্নায়ুর ব্যথা এবং কিডনির ক্ষয় সহ ডায়াবেটিস সম্পর্কিত লক্ষণগুলি থেকে রক্ষা করতে পারে।

দাঁতের যত্নে:

কারিপাতাতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা মুখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পাতায় উপস্থিত অত্যাবশ্যকীয় তেল মাড়ি এবং দাঁতকে শক্তিশালী করে, দুর্গন্ধ দূর করে এবং সংক্রমণ থেকে দাঁত ও মাড়িকে সুরক্ষা দেয়।

আগেকার দিনে দাঁত পরিষ্কার করার জন্য দাঁত ও মাড়িকে শক্তিশালীকরণ এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া থেকে রক্ষা করার জন্য কারিপাতার ডাল প্রাকৃতিক ব্রাশ হিসাবে ব্যবহৃত হত।

এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব রয়েছে:

কারিপাতাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ রয়েছে। প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে যে কারি পাতার নির্যাস প্রদাহজনিত জিন এবং প্রোটিন হ্রাস করতে সহায়তা করে।

লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

প্রাকৃতিক এ পাতাটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ক্ষতিকর টক্সিনের হাত থেকে লিভারকে রক্ষা করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে লিভারের উপর অ্যালকোহলের কুপ্রভাবও পরে কম।

রেফারেন্স: