করোনা মহামারিকালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন “সি” নিয়মিত চাই।
করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। কেন এতো আলোচিত? কারণ প্রাণঘাতী এই দৈত্যের নির্মূলকরণে এখনও কোনো কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি।
প্রায় ছয় লক্ষ মানুষকে মেরে ফেলে নিজের পেট ভরিয়ে এগিয়ে চলেছে করোনা ভাইরাস নামক দানবটি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যেসব খাবারের প্রস্তাবনা আনা হয়েছে তার মধ্যে ভিটামিন সি সবার উপরে।
আর সব থেকে আনন্দের বিষয় হলো এই ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ খাবার আমরা সারাবছর খুব সহজে অল্প খরচে সংগ্রহ করতে পারি।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি রাখলেই দৈনিক চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
ভিটামিন সি কি?
ভিটামিন “সি” যা এসকরবিক অ্যাসিড নামেও পরিচিত, এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।।
ধমনী, টিস্যু এবং কারটিলেজ বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের কাজ করে।
ভিটামিন “সি” একটি জল-দ্রবণীয় ভিটামিন যা স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশকে সমর্থন করে এবং আপনার শরীরকে আয়রন শোষণে সহায়তা করে।
আপনার শরীর ভিটামিন সি উৎপাদন বা সঞ্চয় করে না বলে আপনার ডায়েটে ভিটামিন সি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী।
বেশিরভাগ লোকের জন্য কমলা, পেয়ারা, আমলকি, আমড়া, কাগজী লেবু, আম, কাঁচা মরিচ দিনের জন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন “সি” সরবরাহ করে।
ভিটামিন সি-দৈনিক পরিমান:
মানুষের দেহে ভিটামিন সি উৎপাদন করার ক্ষমতা নেই, তাই এটি খাদ্য এবং অন্যান্য পরিপূরকের মাধ্যমে গ্রহণ করা দরকার। প্রতিদিনই নির্দিষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি খেতে হয়। যেমন:
- শিশুদের(১-৩ বছর) ১৫ মিলিগ্রাম,
- শিশুদের(৪-৮বছর) ২৫ মিলিগ্রাম।
- কিশোরকিশোরীদের(৯-১৩বছর) ৪৫ মিলিগ্রাম।
- টিনেজার(১৪-১৮বছর ) ৬৫-৭৫ মিলিগ্রাম।
- প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ(বয়স ১৯ এবং এর বেশি) ৯০ মিলিগ্রাম,
- প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা(বয়স ১৯ এবং এর বেশি) ৭৫ মিলিগ্রাম,
- গর্ভবতী মায়েদের(বয়স ১৯ এবং এর বেশি) ৮৫ মিলিগ্রাম ও
- বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের(বয়স ১৯ এবং এর বেশি) ১২০ মিলিগ্রাম।
এবার জেনে নেওয়া যাক, কোন ফল ও শাকসবজিতে (প্রতি ১০০ গ্রামে) কী পরিমাণ ভিটামিন সি (মিলিগ্রাম) পাওয়া যাবে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল:
ফল (প্রতি ১০০ গ্রামে) | ভিটামিন সি (মিলিগ্রাম) |
আমলকি | ৪৬৩ |
পেয়ারা | ২২৮ |
করমচা | ১৩৫ |
জাম্বুরা | ১০৫ |
আমড়া | ৯২ |
ডেউয়া | ৬৬ |
কাগজি লেবু | ৬৩ |
পাকা পেঁপে | ৬২ |
কালোজাম | ৬০ |
মাল্টা | ৫৪ |
বরই | ৫১ |
মুসাম্বি | ৫০ |
লেবু | ৪৭ |
পাকা আম | ৪১ |
কমলা | ৪০ |
জলপাই | ৩৯ |
আতা | ৩৮ |
পাকা তাল | ৩৫ |
আনারস | ৩৪ |
লিচু | ৩১ |
বেদানা | ২৬ |
বাঙ্গি | ২৬ |
তরমুজ | ২৪ |
জামরুল | ২২ |
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শাক:
শজনেপাতা (২২০ মিলিগ্রাম), নটেশাক (১৭৯), ধনেপাতা (১৩৫), ডাটাশাক (৮৩), গাজরপাতা (৭৯), করলাশাক (৭৮), বিটশাক (৭০), মুলাশাক (৬৯), পুঁইশাক (৬৪), কালো কচুশাক (৬৩), ছোলাশাক (৬১), শর্ষেশাক (৬০), বরবটিপাতা (৫৭), পাটশাক (৫৪), মেথিশাক (৫২), লাউশাক (৪৮), সবুজ কচুশাক (৪৮), হেলেঞ্চাশাক (৪৩), লালশাক (৪৩), বতুয়াশাক (৪১), মিষ্টিকুমড়াশাক (৩৭), কলমিশাক (৩০), পালংশাক (৩০) ইত্যাদি।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সবজি:
কাঁচামরিচ (১২৫), উচ্ছে (৯৬), করলা (৯১), কাঁচা আম (৯০), ফুলকপি (৭৩), শজনে (৭০), ওলকপি (৫৩), ডাঁটা (৩৬), মিষ্টি আলু (৩৫), মুলা (৩৪), কাঁচা টমেটো (৩১), চালকুমড়া (৩১), পাকা টমেটো (২৭), পেঁয়াজকলি (২৭), মিষ্টিকুমড়া (২৬), শালগম (২৫), অড়হড় (২৫), ফরাসি শিম (২৪), কাঁচা কলা (২৩), কাঁচা পেঁপে (১৯), আলু (১৯), পটল (১৯), চিচিঙ্গা (১৯), ঢেঁড়স (১৮), মুলা (১৭), কলার মোচা (১৬), বাঁধাকপি (১৬), বিট (১৫), এঁচোড় (১৪), লাল শিম (১২), পুঁই ডাঁটা (১১) ইত্যাদি
এছাড়া শুকনা মরিচ (৪৭), পুদিনাপাতা (২২) ও থানকুনিপাতায়ও (২৪) ভিটামিন সি রয়েছে।
কম তাপমাত্রায় খাবার রান্না করাও গুরুত্বপূর্ণ। অধিক তাপে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। সর্বোচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি ধরে রাখতে ভাপে এবং ঢাকনা দিয়ে ঢেকে খাবার রান্না করা ভালো।