মানুষের বেঁচে থাকার আশা যেমন নিরন্তর তেমনি ধন সম্পত্তি অর্জনের আশা মানুষের শেষ হয় না। আর সম্পত্তির কথা বলতে গেলে প্রথমে আসে ভূমি বা জমির বিষয়। কারণ এই জমির উপরেই মানুষ গড়ে তোলে সম্পদের পাহাড়।
বর্তমানে প্রতিটা পরিবারের আশা একখণ্ড জমির মালিক হওয়া এবং খাই বা না খাই নিজের জমিতে নিজের একটা বাড়ি থাকবে।
আর জমিজমা কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের জমির কাগজপত্র ভালো করে যাচাই বাছাই করে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে কবলা দলিল, আমমোক্তারনামা দলিল, বায়নাপত্র দলিল, দানপত্র দলিল ইত্যাদি।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় জাল দলিল পত্রের মাধ্যমে জমি কেনাবেচা করে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে যান। তাই জমি কেনার পূর্বে কোন দলিলের বিষয়ে সন্দেহ হলে কিভাবে দলিলটি জাল না সঠিক সেটি নির্ধারণ করবেন তা নিচে আলোচনা করা হলো –
১। কোন দলিল জাল কিনা সেটি যাচাইয়ের জন্য প্রথমে দলিলের উপরের দিকে একটু ভালো করে খেয়াল করুন। দেখবেন দলিলের বাঁদিকে একটি নাম্বার লেখা এবং ডান দিকে একটি নাম্বার লেখা। বাঁদিকের নাম্বারটি কে দলিলের সিরিয়াল নাম্বার বলা হয় আর ডানদিকের নাম্বারটি হলো দলিল নাম্বার। দলিলের বাঁদিকে সিরিয়াল নাম্বার সব সময় দলিল নাম্বার থেকে বড় হয়। তাই কোন দলিলের সিরিয়াল নাম্বার দলিল নাম্বার থেকে যদি ছোট হয় তাহলে বুঝবেন দলিলটি জাল।
২। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে লেখা হয়ে থাকে। কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সাল, দাতা গ্রহীতার নাম, দিয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। এজন্য নির্দিষ্ট ভাবে দরখাস্ত করে আপনি দেখতে পারেন।
৩। খেয়াল রাখতে হবে, অনেক আগের দলিলে আগের চিহ্নিত কিছু সীল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আগের দলিলে সীল যদি নতুন হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে দলিলটি জাল হতে পারে।
৪। দলিলে নামজারি কেস উল্লেখ থাকলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস হতে নামজারী সম্পর্কে খোজ নিতে হবে। নামজারীতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না তা যাচাই করতে হবে।
৫। দলিল রেজিস্ট্রি তারিখ যদি কোনো সরকারি বন্ধের দিনে হয়ে থাকে তাহলে সেই দলিলটি জল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, তাই দলিলের রেজিস্ট্রি তারিখটি যাচাই করে নিন।
৬। অর্পিত সম্পত্তির গেজেট প্রকাশের পর থেকে অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় এর উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই কোন দলিলের সম্পত্তি যদি অর্পিত তালিকাভুক্ত সম্পত্তি হয়ে থাকে তাহলে সেই দলিল জল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৭। সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া কোনো বিক্রীত দলিলের দলিল লেখকের নাম ঠিকানা জেনে সরেজমিনে কথা বলে দলিলের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।
৮। দলিলের দাগ নাম্বারের সাথে খতিয়ান নাম্বার ঠিক আছে কিনা যাচাই করবেন এবং কোন খাজনা রশিদ থাকলে সেটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস/ তহসিল অফিসে যাচাই করবেন।
এছাড়া একটা দলিল বেশ কয়েক ভাবে জাল হতে পারে। যেমন দলিলের দাতা যদি অনেক কয়জন হয় এবং তাদের ভিতর যদি কোন রেজিস্ট্রি বাটোয়ারা না থাকে। সে ক্ষেত্রে স্বাক্ষর জালিয়াতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া কাটাছেঁড়া, ঘষা, দলিলে থাকতে পারে। তাছাড়া দুইটা দাগ থেকে জমি বিক্রয় হবার কথা বলে ৪, ৫ টি দাগ দলিলে ঢুকিয়ে দেওয়া এভাবেও দলিল জাল হয়ে থাকে।