শক্তির ভান্ডার “আখের রস” দাঁত মজবুত করে, টেনশন ও দুঃশ্চিন্তা কমায়, বয়সের ছাপ দূর করে।
এই গরমে আপনাকে পুনরুজ্জীবিত করবে, নবশক্তি সঞ্চার করবে, মুহূর্তেই চাঙ্গা করে তুলবে কোন পানীয়টি? শুধু তাই নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে পুষ্টিতে ভরিয়ে তুলবে। সেটি আর কিছুই নয়। সেটি হলো আখের রস। ইংরেজিতে এটাকে সুগারকেন জুস বলে।
“আখের রস” গোটা পৃথিবীজুড়ে সমান জনপ্রিয়। পুষ্টিকর এই পানীয়টি শুধু আমাদের তৃষ্ণা মেটায় না, শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। সতেজ করে তোলে খুব অল্প সময়ে।
এই পৃথিবীতে ধান এবং গমের পরে সবথেকে বেশি উৎপাদিত খাদ্যশস্য কোনটি? আখ বা ইংলিশে sugarcane। পৃথিবীর বৃহত্তম উৎপাদিত খাদ্যশস্যের মধ্যে একটি হলো আখ।
আখ থেকে চিনি তৈরি হয়। এই চিনি ছাড়া আমাদের একটি দিনও চলে না। চা, কফি, জুস, কেক, চকলেট, পায়েস, দই, সন্দেশ, রসগোল্লা- এমন হাজারো খাবার চিনি ছাড়া ভাবাই যাই না।
একসময় শুধু শহরে বিক্রী হলেও এখন গ্রাম থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্র আখের রস পাওয়া যায়। আসলে এটি বাড়িতে কম তৈরি করা হয়। আমরা বেশিরভাগই রাস্তার পাশের আখের রস বিক্রেতার কাছ থেকে খেয়ে নেই।
কিছুটা অস্বাস্হ্যকর হলেও বেশিরভাগ মানুষ এটাতেই অভ্যস্ত। আসলে এই গরমে খেটে খাওয়া মানুষকে নবজীবন দান করে প্রকৃতি প্রদত্ত এই আখের রস।
আখের রসের উপকারিতা
আখের রস অত্যন্ত পুষ্টিকর। নিচে আখের রসের কিছু উপকারিতা আলোচনা করা হলো।
শক্তির পাওয়ারহাউস:
আঁখের রস শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করে। Dehydration বা পানিশুন্যতা দূর করার কার্যকরী উপায় হিসাবে কাজ করে আখের রস।
আখের রসে সিম্পল সুগার সুক্রোজ বিদ্যমান। সুক্রোজ খুব সহজেই শরীরে শোষিত হয় এবং প্রচুর শক্তি উৎপন্ন করে।
গর্ভকালীন সময়ে ভালো:
গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে প্রচুর পুষ্টি ও শক্তির দরকার হয়। সেজন্য আখের রস তাদের জন্য অতি উত্তম একটি খাদ্য হিসাবে বিবেচিত।
ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আইরন, ম্যাগনেসিয়াম একদিকে যেমন তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে অন্যদিকে ন্যাচারাল সুগার ফ্রুক্টোজ তাদের শক্তির যোগানদাতা হিসাবে কাজ করবে।
ওজন কমায়:
দ্রবণীয় আঁশ বা Soluble ফাইবার আখের রসে বিদ্যমান। এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে। এতে থাকা ন্যাচারাল সুগার আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
এর সুগার ক্ষারীয় প্রকৃতির যেটা আমাদের চর্বি দহন করে অর্থাৎ চর্বি কমায়।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে:
অনেক ডাক্তার তাদের রোগীদেরকে আখের রস খাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। কারণ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স-এর নীচের দিকে আখের রসের অবস্থান।
এতে রয়েছে ন্যাচারাল সুগার ফ্রুক্টোজ যেটা রক্তে সুগারের পরিমান বৃদ্ধি করে না। খুব সহজেই ধীরে ধীরে শরীরে শোষিত হয়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস-এর রোগীদের উচিত তাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খাদ্য তালিকায় আখের রস অন্তর্ভুক্ত করা। কারণ এটা তাঁদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
টেনশন ও দুশ্চিন্তা কমায়:
উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ধকল বা কঠিন চাপ কমাতে সাহায্য করে আখের রস। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে অফিস ও সাংসারিক কাজের চাপের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত থাকি।
নানা রকম দুশ্চিন্তা করলে অর্থাৎ মন ভালো না থাকলে শরীরও ভালো থাকে না। আখের রস হরমোন লেভেলের সাম্যবস্থ্যা বজায় রাখে এবং ঘুম বৃদ্ধি করে।
এতে বিদ্যমান ট্রিপ্টোফ্যান, ম্যাগনেসিয়াম ও কিছু অ্যামিনো এসিড দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
কিডনি পাথর দূর করে:
মূত্রনালীর গতিপ্রবাহ ঠিক রাখার পাশাপাশি মূত্রনালীর ইনফেকশন দূর করে। আখের রস ডিউরেটিক nature-এর অর্থাৎ মূত্রবর্ধক হওয়ায় কিডনি ভালো রাখে ও কিডনি পাথর দূর করে।
হার্ট ভালো রাখে:
আখের রসে প্রচুর পটাসিয়াম রয়েছে। পটাসিয়াম হার্টের স্বাস্থ্যর জন্য ভালো। এজন্য এটি হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
বয়সের ছাপ দূর করে:
আখের রস আমাদের ত্বকের জন্য ভালো। আখের রসে বিদ্যমান এন্টি oxidizing এজেন্ট যেটা flavonoids ও phelonic এসিডে ভরপুর।
এই উপাদানগুলো আমাদের চামড়ার তারুণ্য ধরে রাখে। ত্বক আদ্র করে ত্বকের ন্যাচারাল উজ্জ্বলতা বজায় রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
আঁখের রসে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, আইরন এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকে। এই উপাদানগুলো বেশি থাকার কারণে এটি alkaline গুণসম্পন্ন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে বিশেষ করে প্রস্টেট ও ব্রেস্ট ক্যান্সার।
দাঁত মজবুত করে:
আখের রস শুধু দাঁতের ক্ষয় রোধ করে তা নয় মুখের দুর্গন্ধও দূর করে। আখের রসে প্রচুর মিনারেল থাকায় এটি দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। এতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁতের এনামেল মজবুত করে।
আখের রসের সতর্কতা
অতিরিক্ত কোনো কিছু খাওয়া ঠিক নয়। সবকিছু পরিমাণমতো খেতে হবে। আখের রস খেয়ে এলার্জিক প্রব্লেম দেখা দিলে খাওয়া বাদ দিন। একেবারে অল্প খাবেন। ডায়বেটিস রোগীরা আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।