ভালো ঘুম কেন শরীরের জন্য দরকারী।
আমরা যেমন মোবাইল টর্চ লাইট চার্জে দিই। ঠিক তেমনি আমাদের শরীরে চার্জ হলো ঘুম। হ্যাঁ পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুম আপনাকে পরের দিনের জন্য রেডি করে রাখে। ভালো ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভালো ঘুম আসলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং ব্যায়াম করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কথায় আছে পেট ঠিক তো জগৎ ঠিক। ঠিক তেমনি রাতে ভালো ঘুম মানে সারাদিনটা ফুরফুরে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘুম দামি ওষুধের মতো কাজ করে। একথায় ভালো ঘুম = ভালো স্বাস্থ্য। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো আবশ্যক। ঘুম শরীরকে সুস্থ্য রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত ঘুম ছাড়া মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
ভালো ঘুম আমাদের শরীরে জন্য কেন দরকারি তা দেওয়া হলো –
হার্টকে সুস্থ রাখে:
ঘুমের সময় শরীর হরমোন নিঃসরণ হয় যা হার্ট এবং রক্তনালীগুলিকে সুস্থ্য রাখে। ঘুমের অভাব রক্তচাপ এবং হার্টের কার্যকারিতা খারাপ হয়।
স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করে:
ঘুম স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক আট ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। একটা চমৎকার ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে অধিক কার্যকরী করে তোলে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্বল্প ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অ্যালকোহলের নেশার মতো খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:
ঘুম শরীরের হজম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানের ঘুমের অভাব হজমের স্বাস্থ্য এ প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো গ্লুকোজের (চিনি) মাত্রার ওঠানামা।
কম ঘুম রক্তে শর্করাকে প্রভাবিত করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা হ্রাস করে। সুস্থ যুবকদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পরপর ৬ রাত ৪ করে ঘন্টা করে ঘুমানোর জন্য ডায়াবেটিসের উপসর্গ দেখা দেয়। তাই আমাদের প্রতিদিন নিয়ম করে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম পড়তে হবে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
যারা প্রতি রাতে কম ঘুমায় তাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অল্প ঘুম স্থূলতার অন্যতম ঝুঁকির কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, কম ঘুমের সময়কাল শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যথাক্রমে ৮৯% এবং ৫৫% স্থূলতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কম ঘুম পরে এমন ব্যক্তিদের ক্ষুধা বেশি থাকে এবং বেশি ক্যালোরি খাওয়ার প্রবণতা থাকে।
শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে:
ঘুম আপনাকে সর্বোত্তম শারীরিক ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঘুমের অভাব স্বল্পমেয়াদী অঙ্গবিন্যাস স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করে। এমনকি যদি এটি হালকা হয়, তবে শারীরিক অস্থিরতা ব্যায়াম এবং খেলাধুলার সময় আপনার দিনের শারীরিক কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রদাহ কমায়:
ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। কম ঘুমানোর ফলে বা দীর্ঘদিন ঠিকমতো না ঘুমানোর ফলে শরীরে বড় ধরণের প্রদাহ দেখা দেয়। আবার দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ শরীরের ক্ষতি করে এবং আলসার, ডিমেনশিয়া, হৃদরোগ এবং আরও অনেক বড় স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায়।
ক্রীড়াবিদ কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে:
বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুম স্পিড, নির্ভুলতা, প্রতিক্রিয়া সময় এবং মানসিক সুস্থতার উন্নতি করতে পারে। অন্যদিকে কম ঘুম ক্রীড়াবিদদের দুর্বল করে দেয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে:
ঘুমের ঘাটতি আমাদের দুর্বল করে দিতে পারে। সুস্থ্য প্রাপ্ত বয়স্কদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি রাতে যেসব লোকেরা ৬ ঘণ্টারও কম ঘুমাতেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হলে খাবারের পাশাপাশি ঘুমের দিকেও নজর দিতে হবে।
পুষ্টি এবং ব্যায়ামের পাশাপাশি, ভাল ঘুম স্বাস্থ্যের অন্যতম বিষয়। ভালো ঘুমের জন্য দরকার ভালো খাবার।