নিয়মিত আনারস খান এবং ওজন কমান ও হাড়ের ক্ষয়রোধ করুন।
পাতায় মোমের প্রলেপ, হালকা ধারালো কাঁটা, শক্ত পুরু আবরণ– টক মিষ্টি স্বাদ। বলুনতো ফলটির নাম কি ? গাছের মধ্যস্থান থেকে উৎপত্তি হয়ে গাছের মাথায় মুকুটের মতো শোভা পায়। এখন অনেকটাই সহজ হয়ে গেলো। হ্যা বন্ধুরা আনারস। আমাদের সকলের পছন্দের আনারস।আনারস একটি সুস্বাদু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের খুব পছন্দের এই ফলটি শুধুমাত্র অনন্য স্বাদের জন্যই নয়, বরং তার অলৌকিক বা রহস্যময় স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য আজও সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
“ananas comosus”-এর বৈজ্ঞানিক নাম। এটি bromeliaceae পরিবারের অন্তর্গত। ১৪৯৩ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস আনারসের সন্ধান পান গুয়াডেলুপ দ্বীপে। একটি আনারস এক ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং একটি গাছ সর্বোচ্ছ ৩০টি পর্যন্ত ফল দিতে পারে। ফলটিতে ৯০ শতাংশ জল রয়েছে। মালয়েশিয়ার কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ণ ইনস্টিটিউট (এমআরডিআই)-এর মাধ্যমে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, আনারস কলা এবং কমলার পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রীস্মমন্ডলীয় ফল।
প্রতিদিন এক কাপ আনারসের রস আমাদের হাড় ও চোঁখের স্বাস্থ্যের উন্নতি, হজমে উন্নতি এবং ওজন কমাতে দারুন কার্যকর। এটি স্বভাবতই প্রদাহনাশক এবং কাশি ও ঠান্ডা নিরাময় এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করে।এই বর্ষাকালেরই একটি ফল হলো আনারস। সুমিষ্ট, সুগন্ধ, ভিটামিন ও মিনারেলে পরিপূর্ণ এক কথায় অসাধারণ। জুন-জুলাই মাসে এটি বেশি পাওয়া যায়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় এই ফলটি এখন সারাবছর পাওয়া যায়। বর্ষাকালের এই ফল আনারস বর্ষাকালের এই জ্বর সারাতে দারুন কার্যকর।
ইউএসডিএ জাতীয় পুষ্টি ডেটাবেজ অনুসারে, এই ফলটিতে ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “এ”, বিটা ক্যারোটিন, থিয়ামিন, ভিটামিন B৫, ভিটামিন B৬ ও ফোলেট রয়েছে। ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, তামা, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থগুলো আনারসে পাওয়া যায়। ফলটিতে ক্যালোরি কম। পানি ৯০ শতাংশ। ফাইবারও রয়েছে প্রচুর। তারমানে আনারস খেলে ওজন হ্রাস পাবে ও হজমে উন্নতি হবে।
আনারসের স্বাস্থ্য সুবিধা :
রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান:
আনারসে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এই সময়ের জ্বরে এই সময়ের আনারসতো খেতেই হবে। সুমিষ্ট স্বাদের আনারস মুখের অরুচী দূর করার পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “সি” থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আমাদের প্রতিদিনের গ্রহণকৃত খাবার থেকে আইরন শোষণে সহায়তা করে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্য যে কোনো কারণে জ্বর হোক না কেনো, ঔষুধতো আমরা খাবো। তবে এর পাশাপাশি জ্বর হলে যেহেতু ডাক্তাররা প্রচুর তরল ও সাহজপাচ্য খাবার খেতে বলে সেহেতু এই জ্বরে আনারসের জুস সর্বোত্তম একটি খাবার। আনারসে ভিটামিন “এ” এবং ভিটামিন “বি” ও রয়েছে। ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি চোখের জন্য ভালো এবং ভিটামিন “বি” মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে:
একটু অন্যভাবে বা মজা করে বলি। আনারস বলছে, আমি অন্য অনেক ফল অপেক্ষা শ্রেষ্ট। কারণ আমার ভেতর রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “সি”। পেয়ারা বলছে, আমার ভেতরেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন “সি”। লেবুতে রয়েছে। আমলকিতে এদের সবারথেকে বেশি রয়েছে। তাহলে আনারসের কি মূল্য থাকলো। কিন্তু না। আনারসের ভেতরে এমন কিছু আছে যা অন্য ফলে নেই। কিছু স্বতন্ত্র উপাদান এক একটি ফলকে একে অপরের থেকে আলাদা করেছে। যেমন আনারসে রয়েছে “ব্রোমেলিন” নামক একটি এনজাইম। এটি প্রোটিনকে সহজে ভেঙ্গে দেয়। কেন জানিনা প্রোটিনের সাথে ব্রোমেলিনের এতো ভাব। এতো ভালোবাসে প্রোটিন, ব্রোমেলিন নামক এনজাইমকে, সংস্পর্শে আসামাত্র মিলেমিশে একাকার। এই এনজাইম আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। জ্বর হলে পেটের সমস্যা, বমি, ডায়রিয়া খুবই সাধারণ একটা ঘটনা। তাই আনারস খান এবং পেটের সমস্যা দূর করুন।
হাড়ের ক্ষয়রোধ করে :
স্বতন্ত্র একটি উপাদান যেটা আনারসে বেশি পরিমানে পাওয়া যাই, সেটা কি ? সেটি হলো ম্যাংগানিজ। আনারসে বিদ্যমান ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়াম হাড়ের বৃদ্ধি ঘটায় ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
আমরা অনেকেই হাড়ের ক্ষয়রোগে ভুগছি। বয়স ৫০ বা ৬০ পেরোনো arthritis রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই শত শত বাড়ছে। এছাড়া ছোটবেলা থেকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ-এর অভাবজনিত কারণে হাড়ের গঠন ঠিকঠাক না হওয়া, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটা বড় সমস্যা।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে :
আনারস সরাসরি মুখের, গলা এবং বুকের ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। কারণ এটি ভিটামিন “এ”, বিটা-ক্যারোটিন, ব্রোমেলাইন, ফ্ল্যাভোনিয়েডস এবং ম্যাঙ্গানিজ সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ।
মঙ্গলালাতন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ব্রোমেলাইন এন্টি ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং সেল ধংস করার ক্ষমতা রয়েছে।
নেপলস বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিচালিত আরও গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রোমেলাইন কোলোরেকটাল ক্যান্সারের সহায়ক হতে পারে।
ফোলা বা ব্যাথা কমায় :
আনারসকে অন্য ফল থেকে আলাদা বৈশিষ্ঠ্য এনে দিয়েছে ব্রোমেলিন নামক বিরল একটি এনজাইম। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ভিটামিন “সি”। ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণও বেশি।এই উপাদানগুলি ফোলা বা প্রদাহ ও ক্ষয়রোধে খুবই কার্যকর।
ওজন কমায় :
ক্যালোরি কম। ফাইবারও আছে ভালো পরিমানে। ওজন কমায়।
Arthritis ব্যাথা কমায় :
আনারসের পেশীপ্রদাহ ও জয়েন্টগুলোর প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা রয়েছে বিশেষ করে যারা অর্থরিটিসে ভুগছেন। এতে ব্রোমেলাইন নামক একটি বিরল এনজাইম রয়েছে, যা প্রাথমিকভাবে জটিল প্রোটিনগুলি ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে এবং এর ব্যাথা কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। যুক্তরাজ্যের সাউথ হ্যামপটন, সাউথ হ্যামপটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সারাহ ব্রায়ান পরিচালিত গবেষণার পর্যালোচনা অনুযায়ী, ব্রোমেলাইন অস্টিওআর্থারাইটিসের ঝুঁকি প্রতিরোধেও সহায়তা করতে পারে।
সতর্কতাঃ
- গর্ভাবস্থায় আনারস না খাওয়াই ভালো। গর্ভপাত হতে পারে। এ বিষয়ে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- দুধ ও আনারস একসঙ্গে খাবেন না। বিষক্রিয়া হতে পারে।
- আনারস খেয়ে কারো এলার্জি জনিত সমস্যা হলে খাবেন না। অল্প খাবেন। আস্তে আস্তে শরীর মানিয়ে নিবে।