আমাদের হার্ট প্রতিনিয়ত রক্ত পাম্প করতে থাকে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এটি প্রতিদিন প্রায় এক লক্ষ বার পাম্প করে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত ধমনীর মধ্যে দিয়ে সমগ্র শরীরে পৌঁছে দেয়।
রক্ত ধমনীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বাধাপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু রক্ত ধমনীর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশি বাধাপ্রাপ্ত হয় তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে।
দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হার্টের নানা রকম সমস্যা হতে পারে।
সাধারণত স্বাভাবিক রক্তচাপ বলতে আমরা 80 mmHg থেকে 120 mmHg বুঝি। রক্তচাপ যদি 120 mmHg থেকে 140 mmHg এর মধ্যে হয় তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপের পূর্ব অবস্থা বলা হয়। রক্তচাপ যদি 140 mmHg এর বেশি হয় তখন তাকে আমরা উচ্চ রক্তচাপ বলি।
উচ্চ রক্তচাপের কিছু ফ্যাক্টর আছে যেগুলো আমরা কন্ট্রোল করতে পারি না যেমন বয়স, জেনেটিক ইত্যাদি।
কিন্তু কিছু ফ্যাক্টরি আছে যা আমরা চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি যেমন শরীর চর্চা, খাদ্য। আসুন কিছু খাবার সম্পর্কে জেনে নিই যেগুলো উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে উপকারি খাবার:
সবুজ শাকসবজি
অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে লবণে বিদ্যমান সোডিয়াম শরীরের পানি ধরে রাখে যা আমাদের রক্তের ধমনীতে চাপ সৃষ্টি করে এবং আমাদের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।
শরীরের অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে আমাদের পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, ব্রকলি ইত্যাদি সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
কারণ পটাশিয়াম আমাদের শরীরের অতিরিক্ত সোডিয়ামকে ইউরিন এর সাথে বের করে দেয়। এর জন্য পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য উপকারী।
কলা
কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একটি ফল। কলাতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকায় শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খুবই কার্যকরী। কলা যেহেতু সহজলভ্য এবং সারা বছর পাওয়া যায় তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা নিয়মিত কলা খেতে পারেন।
বিভিন্ন ধরনের জাম
বিভিন্ন ধরনের জাম যেমনঃ ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি এবং ব্লাকবেরি তে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই অ্যান্থোসায়ানিন আমাদের রক্তের ধমনীকে প্রশস্ত করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
চিনি ছাড়া দই অথবা দুধ
ক্যালসিয়াম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার জন্য খুবই উপকারী। কারণ ক্যালসিয়াম আমাদের ধমনীকে দৃঢ় করে। এ জন্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন চিনি ছাড়া লো-ফ্যাট দই বা দুধ খুবই উপকারী।
ওমেগা-3 সমৃদ্ধ মাছ
ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ যেমন ইলিশ, স্যামন ইত্যাদি হার্টের জন্য খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে যে ওমেগা 3 সমৃদ্ধ মাছের তেল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে।
লাল বিটস
বিট হলো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার আর পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খুবই উপকারী। বিট এর মূল আমরা জুস তৈরি করে খেতে পারি। তিন ভাগ বিটের জুস এর মধ্যে এক ভাগ অ্যাপেল জুস মিশিয়ে খেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ কমতে শুরু করে।
রসুন
রসুনে বিদ্যমান নাইট্রিক অক্সাইড রক্তের ধমনীকে বড় ও প্রশস্ত করে। রক্তের ধমনী যত প্রশস্ত থাকে হার্টকে ততো কম চাপ প্রয়োগ করতে হয়। এজন্য রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খুবই কার্যকরী।
পেস্তা বাদাম
কাজুবাদাম ও আখরোট এই দুইটা বাদাম আমাদের হার্টের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য পেস্তা বাদাম খুবই কার্যকরী।
ডালিম
নিয়মিত ডালিম অথবা ডালিমের জুস খাওয়ার অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
জলপাই তেল
অলিভ অয়েল তথা জলপাই তেলে রয়েছে পলিফেনোল। পলিফেনোল খুবই উপকারী একটা এন্টি অক্সিডেন্ট যা রক্তের ধমনীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ধমনী গুলোকে স্থিতিস্থাপক রাখে। এজন্য অলিভ অয়েল তথা জলপাই তেল উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য ভালো।
কালো চকলেট
দেখা গেছে কালো চকলেটে বিদ্যমান ফ্লাভানল রক্তের ধমনীকে প্রশস্ত করে এবং রক্ত প্রবাহকে স্বাভাবিক করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ হার্টের বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী। উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। এজন্য উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বিষয়টিকে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।