শিরা এবং ধমনীর কিছু সমস্যা।
ধমনী এবং শিরা আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধমনীগুলি হার্ট থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সহ রক্ত বহন করে।
অনেক সময় দেখা যায় আপনার ধমনী বা শিরা সংকীর্ণ বা অবরুদ্ধ হয়ে যায় তখন ধমনী বা শিরার মধ্য দিয়ে রক্ত সহজে প্রবাহিত হতে পারে না।
রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হলে অঙ্গগুলিকে তাদের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং পুষ্টি পেতে বাধা দেয়। যদি রক্তনালী প্রবাহ খুব ধীর গতিতে চলে তাহলে এটি জমাট বাঁধতে পারে।
শিরা এবং ধমনীর কিছু সমস্যা
শিরা এবং ধমনীর কিছু সমস্যা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল:
করোনারি আর্টারি ডিজিজ:
করোনারি আর্টারি ডিজিজ হলে আপনার করোনারি ধমনীর দেয়ালে প্লাক নামক আঠালো চর্বি জমা হয়। এই প্লেক ধমনী সংকুচিত করে এবং হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহকে ধীর করে।
যখন প্লেকের একটি টুকরো ভেঙে যায় এবং ধমনীতে জমা হয় তখন এটি আমাদের রক্ত প্রবাহকে সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ করতে পারে এবং এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD):
পেরিফেরাল ধমনীগুলি বাহু এবং পায়ে রক্ত প্রেরণ করে থাকে। PAD ধমনীর দেয়ালে প্লাক তৈরি হতে পারে।
করোনারি ধমনী রোগের মতো, প্লেক ধমনীকে সরু করে দিতে পারে ফলে রক্ত প্রবাহের জন্য জায়গা কম থাকে।
পা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং পুষ্টি না পায় তাহলে হাঁটার সময় ব্যথা বা ক্লান্ত বোধ করতে পারেন। PAD থাকলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার ঝুকি বেড়ে যায়।
ক্যারোটিড ধমনী রোগ:
ক্যারোটিড ধমনীগুলি ঘাড়ের উভয় পাশে সঞ্চালিত হয়।
এটির মাধ্যমে মস্তিষ্ক, মুখ এবং ঘাড়ে রক্ত সরবরাহ হয়। ক্যারোটিড ধমনী রোগ থাকলে প্লেক তৈরি হয় এবং ধমনীগুলো সংকুচিত হয় ফলে কম রক্ত প্রবাহিত হয়।
যদি এটি মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত প্রবাহকে বাধা দেয় তাহলে এটি স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
সেরিব্রোভাসকুলার রোগ:
আমাদের মস্তিষ্কের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ প্রয়োজন।
রক্তের সরবরাহ ছাড়া মস্তিষ্কের কোষগুলি মারা যায়। সেরিব্রোভাসকুলার রোগ মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ হ্রাস করে। যার ফলে স্ট্রোকের ঝুকি বাড়ে।
ভ্যারিকোজ শিরা:
আপনার পায়ে যদি মোটা, বাঁকানো, নীল বা মাংসের রঙের শিরা দেখা যায় তাহলে আপনার ভেরিকোজ শিরা থাকতে পারে।
শিরাগুলির ভিতরের ভালভগুলি আপনার হৃদয়ের দিকে রক্ত প্রবাহিত করে এবং পিছনে যেতে বাধা দেয়। যখন আপনার শিরা দুর্বল হয়ে থাকে তখন ভালভগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং আপনার শিরাটি ফুলে যেতে পারে।
ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (DVT):
এটি সাধারণত আপনার পায়ে হয়ে থাকে। আপনির ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হতে পারেন যদি আপনি অসুস্থতা বা অস্ত্রোপচারের পরে বেডরেস্টে থাকেন।
আপনি যদি একটি বিমান বা গাড়িতে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকেন তাহলে এটি হতে পারে।
অনেক সময় ধরে শুয়ে থাকা বা বসে থাকা আপনার রক্ত প্রবাহকে ধীর করে দিতে পারে এবং রক্ত একত্রে জমাট বাঁধতে পারে। ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের ঝুঁকি হল এটি জমাট মুক্ত হয়ে ফুসফুসে যেতে পারে।
পালমোনারি এমবোলিজম (PE):
এর ফলে আপনার পায়ে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে এবং ফুসফুস পর্যন্ত যেতে পারে এটিকে পালমোনারি এমবোলিজম বলা হয়।
এই জমাট ফুসফুসে রক্তের প্রবাহকে বাধা দিতে পারে। ফুসফুস রক্ত ছাড়া সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
পালমোনারি এমবোলিজমের ফলে বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এটি আপনার জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
অ্যানিউরিজম:
অ্যানিউরিজমের ফলে একটি ধমনীর প্রাচীর দুর্বল হয়ে যায় এবং বেলুনের মতো বেরিয়ে আসে। অ্যানিউরিজম মস্তিষ্ক, বুক এবং পেট সহ বিভিন্ন রক্তনালীতে হতে পারে।
যদি ধমনী বেশি প্রসারিত হয়ে থাকে তাহলে এটি ফেটে যেতে পারে এবং শরীরের ভিতরে বিপজ্জনক রক্তপাত হতে পারে।