বাঁশ
চিরহরিৎ উদ্ভিদ বাঁশ। বাঁশ (Bamboo) আসলে ঘাস পরিবারের সদস্য। বাঁশ ঘাস পরিবারের সব থেকে বড় সদস্য। বাঁশ গাছ সাধারণত একত্রে গুচ্ছ আকারে জন্মায়। একটি গুচ্ছে ১০-৮০ টি বাঁশ থাকে। যাকে আমরা বাঁশ ঝাড় হিসাবে চিনি।
বাঁশঝাড়ে কত বছর পর পর ফুল ধরে?
এক এক প্রকার বাঁশঝাড়ে এক এক সময়ে ফুল ধরে। কোনোটিতে প্রতিবছর, কোনোটিতে ৩ বছর পর পর, কোনোটিতে ৫০ বছর পর পর, কোনোটিতে আবার একশো-সোয়াশো বছর পরেও।
ভারতের নিজোরাম রাজ্য, বার্মার চিন আর বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে মেলোকানা বাকিফেরা (Melocanna baccifera) নামে একপ্রকার মুলি বাঁশ জন্মে যাতে ৪৮ বছর পরে ফুল ধরে।
কেন এমন হয়, এর সঠিক কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো অনুসন্ধান করে চলেছেন। এই ফুল থেকে ফল হয়, অন্য বাঁশের তুলনায় বেশ বড়সড় ফল।
বাঁশ কি কি কাজে লাগে?
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। বাঁশ গৃহের অবকাঠামো নির্মাণ, মঞ্চ নির্মাণ, মই, মাদুর, ঝুড়ি, হস্তশিল্পসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
উষ্ণমন্ডলীয় এলাকার দেশসমূহে কাগজ তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে বাঁশ ব্যবহৃত হয়। বাঁশ ঝাড় ভূমি ক্ষয়রোধ করে। কচি বাঁশ মুখরোচক সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। বাঁশের কচি ডগা স্থানীয়ভাবে বাঁশ কোরাল নামে পরিচিত।
গৃহস্থালির কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয় বিধায় বাঁশকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারুবৃক্ষ বলা হয়। বাঁশের অধিকাংশ প্রজাতিই ফুল প্রদানের পর মৃত্যুবরণ করে।
২-৩ বছরের মধ্যে পরিপক্ক বাঁশে পরিণত হয়। পরিপুষ্ট বাঁশের রং ধূসর বা হলুদ।
প্রায় ১২০ রকম বাঁশ চিহ্নিত হয়েছে। মুলি, তল্লা, বরাক, ভুদুম, বাইজ্জা, বেথুয়া, ফারুয়া, ওরা, লতা মিরতিঙ্গাসহ দেশি প্রায় ২৫ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে।
মুলিবাঁশ
মুলিবাঁশ সাধারণ বাঁশের ঘনিষ্ঠ একটি প্রজাতি Melocanna baccifera। মুলিবাঁশ বয়স অনুপাতে ১০-২০ মি লম্বা ও ১.৭-৭.৫ সেমি চওড়া হয়ে থাকে। পাতা হালকা সবুজ, লম্বা, বল্লম আকৃতির। কচি বাঁশ সবুজ, বয়স্ক বাঁশ হলদে। নানা ধরনের কুটির শিল্প, আসবাবপত্র তৈরিতেও মুলিবাঁশ কাজে লাগে। এটি কাগজ ও মন্ড শিল্প এবং রেওনের কাঁচামাল।
তল্লা বাঁশ
তল্লা বাঁশ এক প্রকার বাঁশ যা বিশেষভাবে বাংলাদেশে জন্মে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ব্যাম্বুসা পলিমরফা (ইংরেজি: Bambusa Polymorpha)। এই বাঁশ অনেকাংশে নলাকার, ভেতর ফাঁপা, উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। চিকণ বাঁশ পাতার বর্ণ সবুজ, পাতা একে অপরের ঠিক বিপরীতে গজায়। বেলে মাটি থেকে কাদা মাটি নানা রকম মাটিতে তল্লা বাঁশ জন্মে। তল্লা বাঁশের ভার বহনের ক্ষমতা বেশি, সহজে ভেঙ্গে পড়ে না।
ঘটি বাঁশ
দূর থেকে দেখলে মনে হবে, একটির পর একটি কলসি জোড়া দেওয়া হয়েছে। কাছে গেলে বোঝা যায়, এটি আসলে ঘটি বাঁশ। উচ্চতা প্রায় ১০ ফুট। দেখতে সুন্দর হওয়ার কারণে অনেকে এটা বাগানে লাগাতে পারেন।
চট্টগ্রামের বাঁশ উদ্যানে গিয়ে দেশি প্রজাতির ভুদুম বাঁশের কাণ্ড দেখলে অবাক হয়ে যাবেন। এর একটি বাঁশের ব্যাস প্রায় দুই ফুট। ভুদুম বাঁশঝাড়ের উচ্চতা ১৩০ ফুট।
এছাড়া রয়েছে চীনা প্রজাতির ব্র্যান্ডেসি ও দেশি প্রজাতির ফারুয়া বাঁশ। এই দুই বাঁশের উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। ঝাড়ের নিচে দাঁড়ালে মনে হবে আকাশ ছুঁয়েছে।
গুনাগুণ
বাঁশ পাতার রস কাশি কমায়।