লেমন গ্রাস বা থাই পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা।
লেমন গ্রাস নামটা একটু অপরিচিত হলেও আসলে কিন্তু মোটেই অপরিচিত নয়। সাধারণত বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের স্যুপে লেমন গ্রাস ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে লেমন গ্রাসকে আমরা থাই পাতা নামে চিনি। লেমন গ্রাস একটা ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। ঘাসের মতো এই উদ্ভিদও খুব দ্রুত বাড়ে।
ঘরে স্যুপ তৈরীর সময়ে একটু দিয়েই দেখুন না, কি অপূর্ব স্বাদটাই না হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই লেমন গ্রাস খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি শরীরের জন্যে ভীষণ উপকারী।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ম্যাজিকের মতন কাজ করে এটি। এই লেমন গ্রাসে পাওয়া যায় সিট্রোনেলা তেল। যা মশা-মাছি দূর করে। তবে শুধু তেলই নয়, লেমন গ্রাস বাড়িতে লাগালেও তার উগ্র গন্ধে বাড়িতে পোকার উপদ্রব কমে।
লেমন গ্রাস বৈজ্ঞানিক নাম: Cymbopogon ইংরেজিতে: Fresh Lemongrass. নিচে লেমন গ্রাসের পুষ্টি তথ্য দেওয়া হলো- এক আউন্স লেমনগ্রাসে রয়েছে,
- ক্যালোরি: ৩০
- প্রোটিন: ১ গ্রাম
- ফ্যাট: ০ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ৭ গ্রাম
- ফাইবার: ০ গ্রাম
- চিনি: ০ গ্রাম।
লেমনগ্রাসে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন “সি”। আয়রন হিমোগ্লোবিনের একটি অপরিহার্য উপাদান, আয়রন আপনার ফুসফুস থেকে আপনার রক্তে অক্সিজেন স্থানান্তর করে।
লেমন গ্রাসের উপকারিতা
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, লেমন গ্রাস আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী-
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে:
লেমন গ্রাসের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ কমিয়ে দেবার পাশাপাশি সেটা নিয়ন্ত্রণও করে। লেমন গ্রাসের কার্যকারী অ্যান্টি-কোলেস্টেরল উপাদান সরাসরি ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে কোলেস্টেরল শোষণ প্রতিরোধ করে, ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, অধিক কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভোগা রোগীদের নিয়মিত ১৪০ মিলিগ্রামের লেমন গ্রাস অয়েলের ক্যাপস্যুল খাওয়ার ফলে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে গিয়েছে।
তাছাড়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে রোজ এককাপ করে লেমন গ্রাস টি খেলেও ভালো উপকার পাওয়া যায়।
হজমশক্তি বাড়ায়:
লেমন গ্রাস পেট পরিষ্কার রাখে এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে Citral নামক এক উপাদান উপস্থিত যা হজম শক্তিতে সহায়তা করে। এটি বদহজম, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য ইত্যাদি যাবতীয় পেটের রোগের উপশমে ভালো কাজ করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:
লেমন গ্রাস একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপযোগী। এটি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ যা শরীরে প্রস্রাব এর উৎপাদন বৃদ্ধি করে রক্ত সঞ্চালনকে উত্তেজিত করে রক্তচাপ কমায়। এটি লিভারকে শুদ্ধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা কমাতে উপকারী ভূমিকা পালন করে।
ওজন হ্রাস করতে সহায়ক:
লেমন গ্রাস ওজন হ্রাসে সহায়ক। এটি আপনার বিপাককে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে যা হজম শক্তিকে আরও দ্রুত করে। এছাড়া এটি ক্যালরি পোড়াতেও সাহায্য করে। যার ফলে সহজেই ওজন কমে যায়।
ত্বক ও চুলের পক্ষে উপকারী:
লেমন গ্রাস ভিটামিন “এ” ও ভিটামিন “সি” এ ভরপুর, যা ত্বক ও চুলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়েন্ট। তাছাড়া এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে ত্বক কে পরিষ্কার রাখে।
সর্দি, কাশি ও জ্বরে উপকারী:
এটি প্রাচীনকাল থেকেই সর্দি, কাশি ইত্যাদি রোগের নিরাময় রূপে আয়ুর্বেদে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও আন্টিফাঙ্গাল গুনে সমৃদ্ধ যা সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদির সঙ্গে মোকাবিলায় সাহায্য করে এবং এতে উপস্থিত ভিটামিন “সি” ইমিউনিটি শক্তি বাড়ায়। লেমন গ্রাস, তুলসী পাতা ও এলাচের গরম মিশ্রণ সর্দি, কাশি নিরাময়ে দারুন কাজ করে।
কার্যকারী ডিটিক্সিফায়ার:
লেমন গ্রাসের শোধন বৈশিষ্ট্য শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। লেমন গ্রাস একাধারে লিভার, অগ্ন্যাশয়, কিডনি এবং মূত্রথলি পরিষ্কার করার পাশাপাশি সার্বিকভাবে রক্ত চলাচল বাড়ায়। প্রতিদিন, লেমন গ্রাস চা খেলে সেটা রক্তস্রোত থেকে সব ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান বের করে দিয়ে শরীরকে ডিটক্সিফাই করে।
আর্থারাইটিসের ব্যথা নিরাময় করে:
লেমন গ্রাসের মধ্যে অ্যান্টিইনফ্লামেটারি এবং ব্যথা নিরাময়কারী গুণ ভরপুর থাকার ফলে এটা আর্থারাইটিস, রিউমাটিজম, গাউট এবং গাঁটের অন্যান্য ব্যথা-যন্ত্রণার নিরাময় করে। লেমন গ্রাস পেশীকে শিথিল করে এবং সেই কারণে খিঁচুনি এবং মচকানির মতো সমস্যা দ্রুত নিরাময় হয়। দিনে দুবার লেমন গ্রাস চা খেলে, আর্থারাইটিসের ব্যথার হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। লেমন গ্রাস তেল দিয়ে মালিশ করলেও উপকার পাওয়া সম্ভব। নারকেল তেলের সাথে লেমন গ্রাস তেল মিশিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
ক্যান্সারের প্রতিষেধক হিসেবে:
গবেষণায় দেখা গেছে, এক কাপ লেমন গ্রাস চাতে যে পরিমাণ সাইট্রালজাতীয় কেমিক্যাল থাকে তা ক্যান্সার কোষে আত্মঘাতী বিক্রিয়া ঘটায় এবং এতে স্বাভাবিক কোষগুলো অক্ষত থেকে যায়। এছাড়াও লিপিড অক্সিডেশনে ফ্রি-রেডিক্যালের মাত্রা কমানোর কাজে লেমন গ্রাস কার্যকর ভূমিকা রাখে।
অ্যানিমিয়া দূর করে:
রক্তে লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণে দেখা দেয় অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা। এতে ফলিক এসিড, তামা, থায়ামিন, লৌহ, দস্তা ইত্যাদি উপস্থিত থাকায় তা লোহিত কণিকা বাড়াতে সহায়তা করে।
https://www.webmd.com/diet/lemongrass-health-benefits#1