শিশুকে তাড়াতাড়ি ঘুম পড়ানো যায় কিভাবে।

পারেনটিং বা চাইল্ড কেয়ারিং অর্থাৎ শিশু প্রতিপালন একেবারে সহজ কোনো বিষয় নয়। বলতে পারেন এটি একটি শিল্প।

একটি শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও বুদ্ধিভিত্তিক উন্নতিসাধন বাল্যকাল থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত। তাই প্যারেন্টিং- খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

অনেক বাবা-মা মনে করেন তারা এই বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞ কিন্তু শিশু প্রতিপালনের ক্ষেত্রে, শিশুকে বড়ো করে তোলার জন্য তাদের এইটুকু জ্ঞান যথেষ্ট নয়।

সন্তানকে সঠিকভাবে লালন পালনের জন্য বাবা-মায়ের কি করণীয়? প্যারেন্টিং বা শিশু প্রতিপালন সম্পর্কে হাজারো বিষয় রয়েছে।

যারা নতুন বাবা মা হয়েছেন তাদের এই বিষয়গুলো জানা আরও বেশি দরকারী।

প্যারেন্টিং- এর বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো বাচ্চার ঘুমের দিকে নজর দেওয়া। আপনি আপনার শিশুকে যেভাবে অভ্যাস করাবেন সে কিন্তু সেভাবে বড়ো হবে।

বর্তমান সময়ের বাবা-মায়ের একটি কমন প্রশ্নঃ বাচ্চাকে কিভাবে তাড়াতাড়ি ঘুম পড়াবো? রাত ১টা -২টা বেজে যাই তবুও বাচ্চা ঘুম পড়ে না।

আমার বাচ্চা সারারাত জেগে থাকে। চলুন বন্ধুরা জেনে নেই কিছু উপায় যেটা আপনাকে সাহায্য করবে বাচ্চাকে তাড়াতাড়ি ঘুম পড়াতে ———

১. ঘুমের জন্য ভয় দেখাবেন না:

শিশুকে ঘুমানোর জন্য ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকুন। অনেকেই ভয় দেখিয়ে শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে থাকেন। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো নইলে ভূত তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে।

শেয়াল এসে তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে। চোর, ডাকাত, পুলিশ আরও কতো কি বলে ভয় দেখাই। যেকোনো ভয় বাচ্চাদের মনে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট তৈরী করে।

তাই এইসব ভয়ভীতিপূর্ণ কথা বাদ দিয়ে পজিটিভ কিছু বলুন। তাকে মজার-ভালো কোনো গল্প বলুন।

বাচ্চারা গল্প শুনতে পছন্দ করে। গল্প শোনার জন্য চুপ করে শুয়ে থাকলে দেখবেন আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়েছে।

২. সময়মতো খাওয়ানো:

ঘুমাতে যাওয়ার ৩০ মিনিটে থেকে ১ ঘন্টা আগে বাচ্চাকে পরিমিত খাওয়ান। বিকাল বা সন্ধ্যার পরে ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াবেন না।

চিপস, চকলেট, কেক, কোল্ড ড্রিঙ্কস, আইস-ক্রিম, অধিক চিনি জাতীয় খাবার ও বাইরের খোলা খাবার কমিয়ে দিন।

এগুলো বেশি খেলে নানা রকম শারীরিক সমস্যাসহ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ অর্থাৎ পুষ্টিকর খাবার খেলে ঘুম ভালো হয়।

৩. রাতে ঘুমানোর জন্য নির্দিষ্ট সময়:

একটা নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন করুন। ধরুন, আপনি ২৫ দিন থেকে ১ মাস আপনার বাচ্চাকে রাত ৯টা -১০ টার মধ্যে প্রতিদিন ঘুম পড়ানোর চেষ্টা করছেন।

২৫ দিন আপনি সফল বাকি ৫ দিন এদিক সেদিক হয়েছে। তার মানে আপনি সফল। এটা আপনার বাচ্চার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।

এর পর থেকে দেখবেন ঠিক ওই সময়টায় সে ঘুমিয়ে পড়ছে।

৪. শান্তিপূর্ণ ঘুমের পরিবেশ:

ঘুমানোর জন্য সবথেকে বেশি জরুরী শান্তিপূর্ণ ঘুমের পরিবেশ। বাচ্চা ঘুমাচ্ছে না আপনি তাকে বকাবকি করছেন। অথচ বেডরুম দেখা যাচ্ছে কোলাহলপূর্ণ।

আপনি হয়তো বেডরুমে বসে টিভি দেখছেন বা অন্য কোনো সমস্যা। শিশুর ঘুমের জন্য নির্জন ও আরামদায়ক বিছানা তৈরী করতে হবে।

মশার উপস্থিতি আছে কিনা খেয়াল করুন। রুমের তাপমাত্রা সহনীয় করুন। ঠান্ডা তাপমাত্রায় ঘুম ভালো হয়। ঘুমানোর রুম কখনোই একেবারে অন্ধকার রাখবেন না।

মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখুন। একেবারে অন্ধকার রুম হলে শিশুর অন্ধকার ভীতি তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে।

৫. শিশু ঘুমিয়ে পড়লেও খেয়াল রাখুন:

প্রায় সব বাচ্চাদেরই ঘুমের মধ্যেও নিজের মা-বাবাকে খোঁজার প্রবণতা থাকে। অনেক মা বাবা বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।

বাচ্চা হয়তো দুই তলায় ঘুমাচ্ছে আর আপনি নিচ তলায় রান্না করছেন। বাচ্চা কোনো কারণে জেগে কান্না-কাটি করছে আপনি জানেনই না।

সাথে সাথে তার কাছে গেলে ঘুমিয়ে পড়তো।