বাত ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রাকৃতিক উপায়।
অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড জমা হয়ে এ রোগের উৎপত্তি হয়। মূত্রের মাধ্যমে যে পরিমাণ ইউরিক এসিড বেরিয়ে যায়, তার থেকে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড যখন আমাদের যকৃত তৈরি করে অথবা খাবারের মাধ্যমে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড গ্রহণ করলে এবং কিডনি রক্ত থেকে যথেষ্ট পরিমাণে তা ফিল্টার করতে না পারলে বাতের উপসর্গগুলো দেখা দেয়।
বাত সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। এমন কিছু উপায় রয়েছে যেগুলি মেনে চললে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিচে এমন কয়েকটি উপায় দেওয়া হলো –
অতিরিক্ত ওজন কমানো:
ওজন বাতের লক্ষণগুলিতে একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত ওজন জয়েন্টগুলিতে, বিশেষত হাঁটুতে ব্যথা সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত ওজন বহন করার জন্য অস্থিসন্ধিতে পরিবর্তন দেখা দেয়। অস্থির সংযোগ স্থলে বা জয়েন্টে বেশি ওজনের ফলে নতুন অস্থি তৈরি হয়। আকারে পরিবর্তন হয়ে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ নামক রোগটি দেখা দেয়। মেরুদণ্ড, কোমর ও হাঁটুতে ব্যথা বা প্রদাহ বেশি মাত্রায় দেখা দেয়।
পর্যাপ্ত ব্যায়াম:
প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন আর প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করুন অন্তত ৩০ মিনিট ধরে! সেই সাথে আপনি যেখানেই যান না কেন, লিফটের বদলে অভ্যাস করুন সিঁড়ি দিয়ে ওঠার।
এটি বহু আগে থেকেই জানা যায় যে দৌড়াদৌড়ি হাড়ের ভর বৃদ্ধি করে এবং বয়স সম্পর্কিত হাড়ের ক্ষয় রোধেও সহায়তা করে। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিড ফেলসন ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর সাথে একটি সাক্ষাৎকার জানিয়েছেন।
“আমরা যখন দৌড়বিদদের দিকে তাকাই এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের অনুসরণ করি তখন আমরা দেখতে পাই না যে তাদের অস্টিওআর্থারাইটিস হওয়ার ঝুঁকি কম।”
গরম এবং ঠান্ডা থেরাপি ব্যবহার করুন:
গরম এবং ঠান্ডা চিকিৎসা বাতের ব্যথা এবং প্রদাহ থেকে মুক্তি দিতে পারে। বাতের ব্যথা প্রতিরোধে গরম পানি দিয়ে গোসল করার কোনো বিকল্প নেই। আপনি যদি প্রায়ই বা দীর্ঘদিন ধরে বাতের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে গরম পানি দিয়ে নিয়মিতভাবে গোসল করলে বেশ উপকার পেতে পারেন।
ঠান্ডা চিকিৎসা জয়েন্টগুলি ব্যথা, ফোলাভাব এবং প্রদাহ দূর করতে সহায়তা করে। হাঁটুতে বা অস্থিসন্ধিতে বরফের হালকা চাপ দিলে ধীরে ধীরে ব্যথা কমে যাবে। একটা পাতলা তোয়ালে বা কাপড়ে টুকরা টুকরা বরফ নিয়ে সেটা দিয়ে ব্যথার জায়গায় আস্তে আস্তে চাপ দিন। তবে ভুলেও বরফ সরাসরি ব্যথার স্থানে লাগাবেন না। এতে ব্যথা কমে যাওয়ার বদলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে!
স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করুন:
টাটকা ফল, শাকসবজি, শস্যদানা সমৃদ্ধ একটি ডায়েট আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। মিহি চিনি, শস্যদানা, রিফাইন্ড অয়েল এবং ট্রান্স ফ্যাট খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এবং অতিরিক্ত নুন খাওয়া ত্যাগ করতে হবে।
হলুদ:
হলুদ দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদিক এবং চীনা ঔষধে ভূমিকা পালন করেছে। আর্থ্রাইটিস (জয়েন্টে ব্যথা) পশ্চিমা দেশগুলিতে একটি সাধারণ সমস্যা। হলুদে থাকা কারকুমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ। গবেষণায় প্রমাণিত কারকুমিন বাতের (জয়েন্টে ব্যথা) ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
রিউমাটয়েড (rheumatoid) আর্থ্রাইটিসযুক্ত ব্যক্তিদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কারকুমিন একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (ব্যথা নাশক) ঔষুধ এর থেকে বেশি কার্যকর ছিল।
ম্যাসাজ করুন:
ম্যাসেজ জয়েন্টে ব্যথা থেকে স্বস্তি পেতে সহায়তা করতে পারে। যেকোন তেল নারিকেল তেল কিংবা সরিষার তেল একসাথে নিয়ে হালকা গরম করুন। এই তিনটি তেলের মিশ্রণ কুসুম গরম করে সেটি আক্রান্ত স্থানে ১০/১৫ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। দেখবেন, ধীরে ধীরে বাতের ব্যথা কমে যাচ্ছে, আপনি আরামও পাচ্ছেন।
সাঁতার কাটুন:
বাতের ব্যথায় সবচেয়ে ভাল ব্যায়াম সাঁতার। পানির মধ্যে ভারশূন্যতা পেশীর চাপ কমিয়ে দেয়। তাইওয়ানের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সাঁতার হাঁটু এবং নিতম্বের জোর বাড়ায়। শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ব্যথা অনেক কমিয়ে দেয়।