সুপারি বা গুয়া বা বেটেল নাট সিজোফ্রেনিয়া, গ্লুকোমা কমায় ও হজমে উন্নতি করে।

ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, দৈনন্দিন অভ্যাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে পান ও সুপারি। অতিথি আপ্যায়ন থেকে খাওয়ার পর মুৎসুদ্দি— পান সুপারী না হলে যেন গোটা বিষয়টাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এ দেশে এখনও ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাসকে ক্ষতিকর নেশা হিসাবে বিবেচনা করে অপরাধ বলে মনে করা হয়। তবে সুপারি প্রায় সকলের কাছেই মুৎসুদ্দি বা হজমে সহায়ক হিসাবে গ্রহনযোগ্য।

আমরা শুধুমাত্র পান পাতা আর ক’জনই  চিবিয়ে খাই! সুপারি, জর্দা (তামাক), চুন আরও কত কী পানের সঙ্গে দিয়ে খাই আমরা।সুপারি আর পান যেনো একে অপরের পরিপূরক।

সুপারি, বা গুয়া (বিকল্প বানান সুপারী) (সংস্কৃত: গুবাক, ইংরেজি: Betel nut) এরিকাসিয়া পরিবারের এরিকা গণের একটি ফল। এদের গোলাকৃতি পাথরশক্ত বীজ পানের সাথে কুচি করে খাওয়া হয় বা অনেকে শুধু একটু কুঁচানো সুপারি খাওয়ার পরে খেয়ে থাকেন। এটি নিয়মিত বেশি পরিমানে খেলে ক্ষতিকর ও নেশা উদ্রেককারী দ্রব্য। কিছু লোক শুধু সুপারি খেতে ভালোবাসে।

সুপারি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। সুপারির জন্ম সম্ভবত ফিলিপাইন বা মালয়েশিয়ায়। ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীন, প্রভৃতি দেশে সুপারি চাষ করা হয়। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষ করে বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি জেলায় প্রচুর সুপারি জন্মে। উত্তরবঙ্গের রংপুরেও সুপারির চাষ হয়। বাগান আকারে, বাড়ির আশেপাশে বা পুকুর ধারে সাধারণত সুপারি গাছ লাগানো হয়।

বর্ষাকালে বীজ পুঁতে সুপারির চারা তৈরি করা হয়। লোনা নয় এরকম মাটিতে এক বছর বয়সী চারা ৩ মিটার দূরে দূরে গর্ত করে লাগালেই সুপারি বাগান দাঁড়িয়ে যায়। অন্য গাছপালার মধ্যে বা ছায়া জায়গায় লাগালে সুপারি গাছ ভাল হয়। প্রখর রোদ সুপারি গাছ সইতে পারে না। চারা লাগানোর পর ৬-৭ বছরের মধ্যেই ফল ধরা শুরু করে। তবে বেশি ফল ধরে ১০-১২ বছরের পর থেকে। স্থানভেদে বছরের নভেম্বর-মার্চ পর্যন্ত সুপারি সংগ্রহ চলে।

সুপারি বা বেটেল নাট- এর কিছু উপকারিতা:

সিজোফ্রেনিয়া রোগে সহায়ক:

আরেকা বা সুপারি সিজোফ্রেনিয়া( schizophrenia)নামক মানসিক ব্যাধিতে ভালো কাজ করে। প্রাথমিক গবেষণা সুপারিশ করে যে, সুপারি সিজোফ্রেনিয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে। সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত কিছু রোগী যারা সুপারি খান তাদের কম মারাত্মক লক্ষণ দেখা গেছে।

গ্লুকোমা কমায়:

সুপারি গ্লুকোমা নামক চোখের ব্যাধির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। একটি হালকা উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে।

হজমে সহায়তা করে:

সুপারি হজমে সহায়তা করে। সুপারির নির্যাস তৈলাক্ত ভাব কাটিয়ে খাবার হজমে সাহায্য করে।

স্ট্রোক:

প্রাথমিক গবেষণাটি সুপারিশ করে যে, সুপারি নিষ্কাশন যুক্ত একটি দ্রবণ গ্রহণ করলে স্ট্রোক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কথা বলা , শক্তি এবং মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা উন্নত হতে পারে।কাঁচা সুপারি চিবালে উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। সুপারিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার সাইকোএকটিভ এলকালয়েড। এ কারণেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কাঁচা সুপারি চিবালে শরীরে গরম অনুভূত হয়, এমনকি শরীর ঘামিয়ে যেতে পারে।

কিছু লোক সুপারি বা বেটেল নাটকে ড্রাগ হিসাবে ব্যবহার করে কারণ এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (সিএনএস) গতি বাড়িয়ে তোলে। কাঁচা সুপারিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার সাইকোঅ্যাকটিভ এলকালয়েড যা শরীরে প্রচণ্ড উত্তেজনার সৃষ্টি করে। সুপারি চিবোলে গরম লাগতে থাকে, এমনকি শরীর ঘেমেও যেতে পারে।

ভেটেরিনারি মেডিসিনে, গবাদি পশু, কুকুর এবং ঘোড়াগুলিতে কৃমি বহিষ্কারের জন্য অ্যারাকের একটি নির্যাস ব্যবহার করা হয়।  প্রাণীদের অন্ত্র; বিশেষ করে ঘোড়াগুলির অন্ত্রের চিকিৎসার জন্য।

সতর্কতাঃ

কাচা সুপারি খেলে অনেক সময় মাথা ঘোরে। কাচা সুপারিতে ০.১-০.৫/ অ্যালকালয়েড থাকে, যার কারণে মাথা ঘোরে। প্রতি ১০০ গ্রাম সুপারিতে আছে ২৮৯ ক্যালরি শক্তি যোগানোর ক্ষমতা। ‘আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সী’র মতে, সুপারি এক ধরনের কার্সিনোজেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সুপারিসহ পান দীর্ঘদিন খেলে মুখের ক্যন্সার হতে পারে।  কাঁচা সুপারি চিবালে শরীরে গরম অনুভূত হয়, এমনকি শরীর ঘেমে যেতে পারে। সুপারি খেলে তাৎক্ষণিক যেসব সমস্যা দেখা যায় সেগুলো হল-হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে ও হাইপারটেনশন বা রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

সূত্রঃ

www.rxlist.com/betel_nut