যে সব সতর্কতা অবলম্বন করে কম্পিউটার চালালে চোখ ভালো থাকবে।

কম্পিউটার, ল্যাপটপ এখন আমাদের জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আমাদের দৈনন্দিন কাজে, অফিসে বা লেখাপড়া করতে জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই কম্পিউটার, ল্যাপটপ ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই যন্ত্রটি পৃথিবীতে আমূল পরিবর্তন এনে মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে তবে এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। দীর্ঘক্ষন ধরে কম্পিউটার, ল্যাপটপ একটানা ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যারা কম্পিউটার স্ক্রীন প্রতিদিনের কাজের জন্য ব্যবহার করেন তাদের 50% থেকে 90% মানুষের কোন না কোন চোখের সমস্যার লক্ষণ আছে।

একটানা কম্পিউটার ব্যবহারে ডিজিটাল আই স্ট্রেইন বা কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।

মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, চোখে পানি ঝরা বা শুষ্কতা, ফোকাস নষ্ট হওয়ার বিষয়গুলো ডিজিটাল আই স্ট্রেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

তবে আশার কথা হচ্ছে, মার্কিন চিকিৎসকেরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন যা কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম বা এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

বেশি বেশি পলক ফেলুন:

কাজ করার সময় বেশি বেশি পলক ফেলুন। চোখের পলক স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি মিনিটে ১২ থেকে ১৪ বার পড়ে।

কিন্তু আমরা যখন কম্পিউটার এর মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন চোখের পলক পড়ার হার অনেক কমে আসে।

এজন্য কম্পিউটার ব্যবহার কারীদের চোখের পানি ঠিকমত চোখের উপরিভাগে কর্ণিয়া ও কনজাংটিভাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে না।

চোখের পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়, ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। একারণে চোখে জ্বালা পোড়া করে ও চোখে ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে কম্পিউটারে কাজ করার সময় ঘন ঘন চোখের পলক ফেলা উচিত।

আপনি চোখের একটি ব্যায়াম করতে পারেন প্রতি ২০ মিনিট অন্তর অন্তর ১০ বার করে আস্তে আস্তে চোখের পলক ফেলুন যাতে মনে হয় আপনি ঘুমিয়ে যাচ্ছে এতে করে আমাদের চোখ ড্রাই হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

আই গ্লাস:

কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য এক প্রকার আই গ্লাস বা কম্পিউটার গ্লাস কিনতে পাওয়া যায়। সেটা ব্যবহার করতে পারলে চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

চোখের এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম:

একটানা স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ নিয়ন্ত্রনকারী পেশীগুলো ক্লান্ত হয়ে যায়।

এ থেকে বাঁচার জন্য প্রতি ২০ মিনিটে একবার বাইরে তাকাতে হবে। আনুমানিক ২০ফিট দুরে কোনো কিছু দেখুন কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য।

এটাকে ডাক্তার ২০-২০-২০ রুল বলেন। অর্থাৎ প্রতি ২০ মিনিট পর আপনার ২০ ফিট দূরে কি ঘটছে তা দেখার জন্য ২০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করতে হবে।

অন্য দিকে তাকানোর ফলে আমাদের চোখের মাসল রিল্যাস্কড হয়।

আরেকটি এক্সারসাইজ হচ্ছে, দুরের কোন কিছুর দিকে ফোকাস করা (১০ থেকে ১৫) সেকেন্ড আবার কাছে কোন কিছুকে ফোকাস করা (১০ থেকে ১৫ মিনিট) এভাবে ১০ বার করতে হবে।

কাজে বিরতি নিতে হবে:

সাধারণত দেখা যায় আমরা যারা কম্পিউটারের কাজ করি, তারা মাত্র দুইবার কাজে বিরতি নিয়ে থাকি।

কিন্তু একটি গবেষণা বলা হচ্ছে যে, ৫ মিনিট করে দিনে চারবার বিরতি দেওয়া উচিত এতে করে চোখে সমস্যা কম হবে।

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ পরিবর্তন:

আলোর ব্যবহার, কম্পিউটার এর দূরত্ব, ঘরের ভিতরের সাজসজ্জা পরিবর্তন এবং গাছ লাগাতে পারেন। এতে করে আমাদের চোখ অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবে।

কালার টেম্পারেচার:

এটি টেকনিক্যাল একটি বিষয় যা আলোর বর্ণালী বিবরণ দেয়। নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম এবং এটি অন্যতম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের চেয়ে চোখের উপর চাপ ফেলে বেশী।

কম্পিউটারের ডিসপ্লে এর কালার টেম্পারেচার কমিয়ে দিলে আমাদের চোখের উপর চাপ পড়বে কম।

ডিসপ্লে সেটিং:

কম্পিউটারের ডিসপ্লে সেটিংস এর সামঞ্জস্যতা আমাদের চোখের সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে পারে। ডিসপ্লের ব্রাইটনেস আমাদের কাজের জায়গায় আলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

খেয়াল করুন যাতে আমাদের ডিসপ্লেকে অতিরিক্ত আলোর উৎস মনে না হয় কিংবা অন্ধকার।

লেখার আকার ও বৈসাদৃশ্য- আমরা যখন লিখবেন কিংবা পড়বে তখন লেখার সাইজ ঠিক করে নিন। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর কাল লেখা সবচাইতে ভালো।

ডিসপ্লে পরিবর্তন

সিআরটি(cathode ray tube or CRT) মনিটর এর পরিবর্তে এলসিডি(liquid crystal display or LCD) মনিটর ব্যবহার করুন। যেগুলো সাধারণত ল্যাপটপের থাকে।

এলসিডি মনিটর চোখের জন্য আরামদায়ক এবং এর সার্ফেসে সাধারণত রিফ্লেকশন কম হয়।

তাছাড়া আর সিআরটি মনিটর এর কার্যপ্রণালী থেকে লক্ষ্য করা যায়, এটিতে ইমেজ বারবার নতুন করে তৈরি করার হার এলসিডি এর চেয়ে অনেক বেশি।

এটা চোখের জন্য ক্ষতিকর। বড় ডিসপ্লে ব্যবহার করুন যার আকার কমপক্ষে ১৯ ইঞ্চি।

চাকচিক্য থেকে দূরে:

চকচকে ফার্নিচার উজ্জ্বল আলো এবং কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে প্রতিফলিত আলো আমাদের চোখের সমস্যার আসল কারণ হতে পারে।

“এন্টি-গ্লেয়ার” স্কিন কম্পিউটারের জন্য ইনস্টল করে নিতে পারেন এবং ঘরের দেওয়ালে যেকোনো গাড়ো রং এর জায়গায় সাদা রং ব্যবহার করুন।

এতে প্রতিফলন হবে কম এবং চোখের ওপর প্রেসার পড়বে কম। যদি চশমা ব্যবহার করি তাহলে অবশ্যই এন্টি-রিফ্লেক্সশন গ্লাস ব্যবহার করতে হবে। এটি আপনার চোখের সামনের আলোকে কম প্রতিফলিত করবে।

সঠিক আলোর ব্যবহার

আমরা যে রুমে কম্পিউটার ব্যবহার করবো, সে রুম সঠিক আলো থাকা খুবই জরুরী।

বাইরে সূর্যের আলো থেকে যদি ঘরের আলো কম বেশি হয় সেক্ষেত্রে চোখের ওপর প্রেসার পড়বে এবং কাজ করার সময় চোখে ব্যথা সৃষ্টি হবে।

ঘরের ভেতরে অধিক আলো জ্বালিয়ে রাখলে কিংবা বাইরে থেকে অধিক আলো এলে কাজের সময় কম্পিউটারের স্ক্রিনে সেটা প্রতিফলন হয়ে চোখে লাগে এবং চোখের ওপর প্রেসার সৃষ্টি করে। তাই সঠিক আলোর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কম্পিউটারের স্কিন পরিষ্কার রাখুন

কম্পিউটারে ধুলো, ময়লা কিংবা আঙুলের ছাপ পড়তে দেওয়া যাবে না। ধুলা জমা স্ক্রিন দীর্ঘদিন ব্যবহারের অভ্যাসের ফলে ‘ক্রনিক হেডেক’ দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন তাই একবার করে কম্পিউটারের স্ক্রিন পরিষ্কার করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

সহজে পাঠ্য যোগ্য ফন্টের ব্যবহার

কম্পিউটার স্ক্রিনে পড়ার জন্য খুব ছোট ফন্ট ব্যবহার করবেন না। চোখের কষ্ট হয় এমন ফন্ট বাদ দিয়ে চোখের জন্য আরামদায়ক ফন্ট নির্বাচন করুন।

চোখ পরীক্ষা করা:

যারা কম্পিউটারের কাজ করেন তাদের প্রতি বছর অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

চোখের ডাক্তারের সাথে রুটিন চেক আপ করাতে হবে। চোখ পরীক্ষা সময় কতক্ষণ আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করি সেটা চিকিৎসক কে জানাতে হবে।