“মূলা-শাক” মূত্রবর্ধক, কোষ্টকাঠিন্য দূরীকারক ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রক।

আপনি হয়তো মূলা শাক খেয়েছেন বা নাও খেয়ে থাকতে পারেন। বিশ্বাস করুন বা না করুন, মূলা শাকে মূলার থেকে বেশি পুষ্টি বিদ্যমান।

এগুলি এমন বৈশিষ্ট্যযুক্ত যা আপনাকে কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে।

স্বাদে একটু মজা কম হলেও কাজে বা পুষ্টিগুণে মূলা শাক অন্য অনেক শাককে ছাড়িয়ে যাবে। আপনি হয়তোবা কখনো চিন্তাও করেননি তিক্ত স্বাদের এই শাকের রয়েছে এত গুণাবলী।

যখনই মূলার কথা আসে, আমরা এর পাতাগুলি মোটেই বিবেচনা করি না। মূলা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা ডায়াবেটিসের চিকিৎসা থেকে বিভিন্ন বাতজনিত সমস্যা পর্যন্ত।

এটিতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে এবং এটি ডিটক্সাইফিং এজেন্ট হিসাবেও কাজ করে। মূলা পাতার উচ্চ আয়রন এবং ফসফরাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ক্লান্তি হ্রাস করে।

এটিতে ফাইবার রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। মূলা (Radish) শীতকালীন সবজি হলেও এখন প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলার চেয়ে এর শাক বেশি উপকারী। এতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ যেমন- আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড, ফসফরাস এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে।

সবজি ও শাক দুটাই পাওয়া যায় এই মূলা থেকে। ছোট অবস্থায় শাক হিসাবে খাওয়া যায়।

তবে মূলা শাকের উপকারীতা ও পুষ্টিগুণ প্রচুর। এই শাক সাধারনত ভাজি করে খাওয়া হয়। তবে এটি খেতে একটু তিতা তিতা লাগে।

অনেকেই পছন্দ করে আবার সামান্য তিতা হওয়ায় অনেকেই কম পছন্দ করে। এটি অন্য শাকের মত বার মাস পাওয়া যায় না।

এটি শীতকালীন শাক হিসাবে পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে শীতের আগেও এই শাক পাওয়া যায়।

মূলা শাকের উপকারিতা

সম্মানিত পাঠক আসুন এবার জেনে নেই মূলা শাকের উপকারিতা সম্বন্ধে বিস্তারিত ভাবে—-

প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজে পূর্ণ:

মূলার সবুজ অংশে পুরো মূলার চেয়ে বেশি পুষ্টি থাকে।

এ শাকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন: আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন “সি” এবং ফসফরাস রয়েছে যা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়।

ভিটামিন “সি”:

মূলা শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি” রয়েছে। ভিটামিন “সি” অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে দেহের রোগ প্রতিরোধ করে।

তাছাড়াও এতে পটাসিয়াম, মলিবডেনাম, ভিটামিন “বি” কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ ফলিক এসিড রয়েছে।

মূলা শাকে ভিটামিন “সি” থাকায় আমদের শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান এ শাক থেকে পেয়ে থাকে। এতে বলা যায় মূলা শাকের উপকারীতা অনেক।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্লান্তি হ্রাস করে:

মূলা পাতার উচ্চ আয়রন উপাদান ক্লান্তির জন্য আদর্শ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।

মূলা পাতায় আয়রন এবং ফসফরাস জাতীয় খনিজগুলি প্রচুর পরিমাণে থাকে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

এগুলিতে ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “এ”, থায়ামিনের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজও রয়েছে যা ক্লান্তি মোকাবেলায় সহায়তা করে।

রক্তাল্পতা এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম রোগীরা মূলা পাতা খাওয়ার ফলে উপকার পেতে পারেন, কারণ পাতায় উপস্থিত আয়রন তাদের দ্রুত রোগমুক্ত হতে সাহায্য করবে।

মূত্রবর্ধক:

মূলা পাতার রস একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক। এটি পাথর দূর করতে এবং মূত্রথলি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। মূলা শাক এবং মূলা-এই দুটোই মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।

এতে শক্তিশালী রেচক বৈশিষ্ট্যও প্রদর্শন করে যা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ফুলে যাওয়া পেটে আরাম পেতে সহায়তা করে।

কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:

মূলা শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

এর সাথে আমাদের পাকস্থলী ভালো রাখে। তাছাড়া মূলা শাকের জুস প্রাকৃতিকভাবে ইউরিনারি ব্লাডার পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে:

মূলা শাকে বিদ্যমান ফাইবার দেহের ব্লাড সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

এই শাকের পাতাগুলিতে অনেক গুণ রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিকের রোগী যারা তারা এই শাকটি রোগ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন অনায়াসে।

অ্যালার্জি:

এই শাকটিকে অ্যান্টিক্যান্সার সমৃদ্ধ সবজির তালিকায় ব্রকলি এবং কপির পাশাপাশি অবস্থান দেওয়া যেতে পারে। মূলা শাক গ্রহণ করলে অ্যালার্জি ও হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।

তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিত্‍সকের পরামর্শ অনুযায়ী এটা গ্রহণ করতে হবে।

হাটুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণ:

হাঁটুর ব্যথা কমাতে মূলা শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এর জন্য এ শাককে ভালোভাবে পিষে তাতে সম পরিমাণে চিনি আর সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে।

তারপর আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে লাগাতে হবে। তাহলে হাঁটুর ব্যথায় আরাম পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া শরীর থেকে টক্সিন বের করতেও মূলা শাক বিশেষ ভূমিকা রাখে।

চর্মরোগ সারাতে:

মূলা শাক স্কার্ভি নামক চর্মরোগ সারাতে সাহায্য করে। মূলা শাকে মুলার চেয়ে বেশি এন্টিসারব্যাটিক বৈশিষ্ট্য আছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মূলা শাক পাইলসের ব্যথা সারাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

তাছাড়া পাইলসের প্রদাহ সারাতেও এই শাক যতেষ্ট ভূমিকা রাখে। মূলা শাক জন্ডিসের চিকিৎসাতেও কাজে লাগানো হয়। জন্ডিস রোগীরা এই শাকের জুস প্রতিদিন খেলে উপকার পাওয়া সম্ভব।

সতর্কতা :

মূলা শাকে অক্সালেট রয়েছে। অধিক পরিমাণে মূলা শাক গ্রহণ করার ফলে অক্সালেট জমাট বেধে শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া ক্যালসিয়াম শোষণে অক্সালেট বাধা সৃষ্টি করে থাকে।

যারা কিডনি বা পিত্তথলির বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের মূলা শাক এড়িয়ে চলা উচিৎ।