মাছের ডিম চোখ, হার্ট ভালো রাখে এবং হাড় ও দাঁত মজবুত করে।

বাচ্চাদের খুব পছন্দের একটি খাবার হলো মাছের ডিম বা Fish Roe. ইলিশ, রুই, কাতলা, মৃগেল, ট্যাংরা, পার্সে, সামুদ্রিক মাছ-কোনটা রেখে কোনটা বলি। শুধু কি ছোটদের প্রিয়, ছেলে বুড়ো সবারই পছন্দের খাবারের একটি আইটেম হলো মাছের ডিম।

মাছের ডিম খেতে কার না ভাল লাগে। অনেকে তো আবার মাছই কেনেন মাছের ডিম খাওয়ার জন্য। গরম ভাত আর ডালের সঙ্গে মাছের ডিম ভাজা খেতে খুবই সুস্বাদু। কিন্তু জানেন কি, মাছের ডিমের কত উপকারিতা? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজই জেনে নিন মাছের ডিমের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে।

দেখা যাচ্ছে যে, মাছের ডিম বা ক্যাভিয়ার বা ফিশ রো বেশ নরম টেক্সচারের সাথে ছোট ছোট গোল এবং ক্লাস্টারযুক্ত অবিশ্বাস্য খাবার যা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এগুলি প্রকৃতপক্ষে সুস্বাদু এবং অনেক ধরণের রেসিপির উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

ক্যাভিয়ার বা মাছের ডিম বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছের ডিমে মানসিক স্বাস্থ্য এবং মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ। অন্যান্য সামুদ্রিক খাবারের মতো এটিতেও প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম রয়েছে, এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং সামান্য কিছুটা ক্যালসিয়াম রয়েছে।

অনেক আগেও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির লোকেরা জানত যে, মাছের ডিম কতটা শক্তিশালী। মাছের ডিম অন্যতম শক্তিশালী সুপারফুডস” এবং বহু সংস্কৃতি তাদের গর্ভবতী মহিলাদের খাওয়ানোর জন্য মাছের ডিম দিতেন। এখন, এমনকি ইউএসডিএ (USDA) পরামর্শ দিচ্ছে যে, বাবা-মা এটি তাদের বাচ্চাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করুন।

মাছের ডিমের পুষ্টি উপাদান:

  • ক্যালোরি: ৪২
  • ফ্যাট: ৩ গ্রাম
  • সোডিয়াম: ২৪০ মি.গ্রা
  • কার্বোহাইড্রেট: ০.৬ গ্রাম
  • প্রোটিন: ৪ গ্রাম

মাছের ডিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা

মাছের ডিম আমাদের সকলের খুব পছন্দের। নিচে মাছের ডিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো –

চোখ ভালো রাখে:

মাছের ডিমে থাকা ভিটামিন “এ” চোখ ভালো রাখে। চোখ এমন একটি ইন্দ্রিয় যা আপনার চারপাশের সমস্ত সৌন্দর্য দেখতে দরকারী। চোখের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ছোট বেলা থেকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া গর্ভাবস্থায় ভিটামিন “এ” খুব প্রয়োজন। তবে এখন গবেষণাও প্রমাণ করেছে যে, মাছের ডিমে ভিটামিন “এ” আছে যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।

রক্তাল্পতা নিরাময়ে সহায়তা করে:

মাছের ডিমে থাকা স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলো রক্ত পরিষ্কার করে এবং হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে তোলে যা অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি পেতে খুবই সহায়ক।

রক্তচাপ ঠিক রাখে:

মাছের ডিমে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন-ডি হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করে। মাছের ডিমের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না এবং প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে, যা উচ্চ রক্তচাপের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।

স্তন ক্যান্সার:

স্তন ক্যান্সার মহিলাদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এই ক্যান্সার দ্বিতীয়, তৃতীয় স্টেজে চলে গেলে নিরাময় করা সত্যিই খুব কঠিন। জেনেটিক কারণগুলি ছাড়াও স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী অস্বাস্থ্যকর খাদ্যে।

স্যামন, সার্ডিন, টুনা-সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-১২, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। তাই এখন থেকে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে মাছের ডিম খাওয়ার চেষ্টা করুন।

আলঝাইমার প্রতিরোধ করে:

মাছের ডিমের পুষ্টিকর উপাদান (ওমেগা-৩ ও অন্যান্য) আলঝাইমার রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের বেশি লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হন। যদিও আলঝেইমার রোগের প্রারম্ভিক-সূত্রপাত অনেক আগেও হতে পারে। এক ধরনের বার্ধক্যজনিত স্নায়বিক অবক্ষয়মূলক রোগ। এটি স্মৃতিভ্রংশের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। এই রোগের কোন প্রতিকার নেই। তাই প্রথম থেকেই পুষ্টিকর খাবার খেয়ে যেতে হবে।

 স্বাস্থ্যকর হাড় এবং দাঁত:

মাছের ডিমের মধ্যে থাকে ভিটামিন-ডি, যা হাড়কে শক্ত করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি দাঁতকে মজবুত ও ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 স্বাস্থ্যকর হার্ট:

মাছের ডিম হার্ট সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। হার্ট সারা শরীর জুড়ে রক্ত ​​পাম্প করার কাজ করে। মাছের ডিমে ওমেগা-৩ অ্যাসিড থাকে। এটি আমাদের হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখে।

 প্রোস্টেট ক্যান্সার:

পুরুষদের মধ্যে এই ধরণের ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রকোপ রোধ করার জন্য নিয়মিত এবং মাঝে মাঝে মাছের ডিম খাওয়ার মাধ্যমে প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়।

 রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান:

আপনার অসুস্থ হওয়ার জন্য দায়ী ভাইরাসগুলি এড়াতে শরীরের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এমন খাবারের প্রয়োজন যা মাছের ডিম বাড়িয়ে তুলতে পারে। মাছের ডিমে থাকা প্রয়োজনীয় উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্রঃ verywellfit.com, bodyacheescape.com