জোয়ান কাশি কমাতে পারে, পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ও খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে নাক বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা ঠান্ডা লেগে জ্বর এলে ছোট একটা কাপড়ে যদি কিছুটা জোয়ান বেঁধে মাঝে মাঝে গন্ধ নেওয়া যায় তাহলে উপকার হয়। কেউ যদি শ্বাসকষ্টে ভোগেন যেমন এজমা বা ব্রঙ্কাইটিস তাহলে জোয়ান খেলে তা উপশম হয়। মাইগ্রেনের যন্ত্রনার হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।

জোয়ান মূলত পেটের রোগের জন্য প্রচলিত আয়ুর্বেদিক ঔষধে ব্যবহার করা হয়। এটি বদহজম এবং পেট ফাঁপা সারাতে কার্যকরী। এছাড়া এটি পেট পরিষ্কারক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অম্লতা কমাতেও এটি ঔষধ হিসাবে কাজ করে।

অজওয়াইন বীজ বা জোয়ান প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, খনিজ, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এগুলি কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়, এছাড়া পানি বা চায়ের সাথেও দিয়ে খাওয়া যায়। জোয়ান বীজে থাইমল নামে একটি শক্তিশালী উপাদান রয়েছে যা ছত্রাকনাশক এবং জীবাণুনাশক হিসাবে কাজ করে।

ইংরেজিতে Carom Seeds (Ajwain) এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Trachyspermum ammi. জোয়ান মসলা আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে বেশি পরিচিতি। এটা হজমক্রিয়া ঠিক রাখার পাশাপাশি ওজন কমিয়ে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

একটি পাত্রে দুই লিটার পানি ফুটিয়ে নিন। তারপর এতে এক চামচ জোয়ান যোগ করুন ও তিন থেকে চার মিনিট ফুটান। পানির রং সোনালি হয়ে এলে চুলা বন্ধ করে ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। একটি বোতলা সংরক্ষণ করে সারাদিন একটু পর পর পান করুন। এছাড়া ঠান্ডা পানিতে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারেন।

এই পানি কেবল হজমে সাহায্য করে না বরং বিপাক বাড়াতেও সাহায্য করে। এর উচ্চ বিপাকীয় শক্তি বাড়তি ক্যালরি খরচ করে এবং দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

জোয়ান মুখকে তরতাজা রাখে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। এছাড়া জোয়ান বিভিন্ন সংক্রমণ এবং জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে। শরীরে ব্যথা হলে বা কোথাও ফুলে গেলে জোয়ান খেলে উপকার পাওয়া যায়। ক্ষুদ্র এই বীজের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অনেক বড় বড় গুন।

ছোট ছোট দানা তিতকুটে এবং ঝাঁজালো স্বাদযুক্ত। তাই হয়তো অনেকে পছন্দ করেন না। এই উপাদানটি একবার খাওয়া অভ্যাস করে ফেলতে পারলে শরীরের অনেক উপকার হবে। জোয়ানের গন্ধটা খুব উগ্র বলে জোয়ানকে সংস্কৃত ভাষায় ‘উগ্রগন্ধ্যা’ বলা হয়।

জোয়ানের স্বাস্থ্য উপকারিতা

নিচে জোয়ানের স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো –

পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:

জোয়ান মূলত পেটের রোগের জন্য প্রচলিত আয়ুর্বেদিক ঔষধে ব্যবহার করা হয়। এটি বদহজম এবং পেট ফাঁপা সারাতে কার্যকরী। এটি পেট পরিষ্কারক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অম্লতা কমাতে এটি ঔষধ হিসাবে কাজ করে।

জোয়ান পেট ভালো রাখে এবং বদহজম হলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন পেট ব্যথা, পেট জ্বালা, গ্যাস-অম্বলের ভাব, পেটে বায়ুর উদ্রেক হওয়া, বমি বমি ভাব প্রভৃতির হাত থেকে মুক্তি দেয়।

সর্দি-জ্বরে উপকার পাওয়া যায়:

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে নাক বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা ঠান্ডা লেগে জ্বর এলে ছোট একটা কাপড়ে যদি কিছুটা জোয়ান বেঁধে মাঝে মাঝে গন্ধ নেওয়া যায় তাহলে উপকার হয়। এছাড়া রোজ কিছুটা করে জোয়ান খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সাথে লড়াই করে:

জোয়ানে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এতে থাইমল (thymol) এবং কারভ্যাক্রোল (carvacrol) নামে দুটি যৌগ রয়েছে যা ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাকের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে এই যৌগগুলি সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া যেমন Escherichia coli এবং Salmonella- এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করে:

প্রাণী গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে জোয়ান বীজ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড হার্টের রোগের ঝুঁকির কারণ। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জোয়ান পাউডার মোট কোলেস্টেরল, খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করে।

রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে:

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হল একটি সাধারণ অবস্থা যা হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ হলে সাথে সাথে একটি ঔষধ খেয়ে নেন। এটাকেই একমাত্র সহজ উপায় বলে মনে করি। কিছু প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে যেগুলো রক্ত চাপের মাত্রা কমাতে পারে। তারমধ্যে একটি হল জোয়ান।

কিছু গবেষণা নির্দেশ করে যে জোয়ানে একটি উপাদান রয়েছে যা রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। তবে রক্তচাপের মাত্রা কমাতে জোয়ান কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে গবেষণা এখনও সীমাবদ্ধ।

কানের ও দাঁতে ব্যথা কমায়:

কানের ব্যথা কমাতে ২ ফোঁটা জোয়ান তেলই যথেষ্ট। আর দাঁত-ব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য, হালকা গরম পানির সাথে ১ চা চামচ জোয়ান এবং লবণ মিশান। আবার এই পানি দিয়ে কুলকুচি করুন। এটি দুর্দান্ত মাউথ ওয়াশ হিসাবে কাজ করে এবং ওরাল হাইজিন (oral hygiene) বজায় রাখে।

আলসার কমায় এবং বদহজম থেকে মুক্তি দেয়:

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে জোয়ান পেপটিক আলসারগুলির সাথে লড়াই করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে পেপটিক আলসার এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত একটি সাধারণ ওষুধের সাথে জোয়ান তুলনামূলক ছিল।

আয়ুর্বেদিক ঔষধে হজম সমস্যাগুলির ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে সাধারণত জোয়ান ব্যবহার করা হয়। জোয়ান গ্যাস এবং দীর্ঘস্থায়ী বদহজম প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা করতে সাহায্য করতে পারে।

কাশি কমাতে পারে:

জোয়ান কাশি থেকে মুক্তি দিতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে জোয়ান কোডিনের (codeine) চেয়ে বেশি পরিমাণে অ্যান্টিকফিইং (anticoughing) প্রভাব রয়েছে। তাই এটি কাশির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত একটি সাধারণ ঔষধ।

এটি ফুসফুসের বায়ু প্রবাহকেও উন্নত করতে পারে। হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে জোয়ান আহরণের পরে ফুসফুসে বায়ুপ্রবাহ বাড়িয়ে তোলে। তাই এটিকে একটি সাধারণ হাঁপানির ওষুধ বলা যেতে পারে।

এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব রয়েছে:

স্বল্পমেয়াদী ব্যথা আপনার শরীরের অসুস্থতা বা আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করার প্রাকৃতিক উপায়। অন্যদিকে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা আপনার শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং নির্দিষ্ট কিছু রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। জোয়ান বীজে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব রয়েছে এবং আপনার শরীরে ব্যথা হ্রাস করতে পারে।

জোয়ান কি নিরাপদ?

বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে ক্যারাম বীজ সেবন করা নিরাপদ। তবুও, গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের জন্য এটি নিরাপদ নয়। আপনি যদি গর্ভবতী হন তবে জোয়ান খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। বেশি মাত্রায় জোয়ান খাওয়ার পরে বমি বমি ভাব হতে পারে। এ কারণে এইগুলো অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: