কিভাবে গলা ও ঘাড়ের কালো দাগ দূর করবেন?
মুখ ও হাত-পায়ের যত্নে কত কিছুই না করছেন। কিন্তু সাজগোজের পর দেখলেন মুখের ত্বকের উজ্জ্বলতার সঙ্গে ঠিক যেন মিলছে আপনার গলা ও ঘাড়ের ত্বকের রং। কারণ, মুখের ত্বকের মতো যত্ন নেওয়া হয় না ঘাড় ও গলার ত্বকের।
কিন্তু সব সময়ই যদি এমন অবহেলা চলে তাহলে তা শুধু ত্বককে নিষ্প্রাণ করেই দেবে না, চর্মরোগের কারণও হতে পারে| সাধারণত শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় গলা ও ঘাড়ের ত্বকে খুব দ্রুত ময়লা জমে| এছাড়াও অনেকেই ঘাড়ে কালো দাগ থাকায় বড় গলার পোশাক পড়তে পারেন না। সব সময় কলার দেওয়া পোশাকই তাদের ভরসা।
তবে লজ্জা না পেয়ে বরং ভাবতে থাকুন, কীভাবে দূর করবেন এই কালো দাগ।
যেকারণে, গলা ও ঘাড়ে কালো দাগ হয়-
গলা ও ঘাড়ের কালো দাগ প্রথমত ওজন বেশি হলে হয়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে ঘাড়ের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে দাগ হয়। এছাড়া অ্যালার্জির সমস্যা থাকলেও হতে পারে। সানবার্ন এর কারনেও হতে পারে।
কিন্তু এক দুর্দান্ত ঘরোয়া প্যাকের মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই ঘাড় ও গলার কালো দাগ দূর করতে পারবেন। জেনে নিন কীভাবে?
শসার রস:
শসার রস গলা ও ঘাড়ের কালো দাগ দূর করতে বেশ কার্যকর। শসার রস ত্বকের হারানো রং ফিরে পেতে সহায়তা করে। ত্বকের মরা কোষ দূর করে ত্বক করে উজ্জ্বল ও সুন্দর। শসা মিহি কুচি করে নিন অথবা ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ঘাড়ের কালো দাগের ওপর কয়েক মিনিট ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
বাদাম:
বাদাম মস্তিষ্ক এবং ত্বকের জন্য খুবই ভালো একটি খাবার। এটি ত্বকের যত্নেও বিশেষ কাজ করে, বিশেষ করে কালো দাগ সারাতে বাদাম খুবই কাজের জিনিস। এটি ভিটামিনে ভরপুর এবং এতে থাকা তেল ত্বকের যেকোনো দাগ খুব সহজেই দূর করতে পারে।
এক মুঠো বাদাম সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকাল বেলায় সামান্য একটু পানি দিয়ে বাদামগুলো পেস্ট করে নিন। এবার এই পেস্টটি ঘাড়ের কালো অংশে লাগিয়ে রাখুন ২০-২৫ মিনিট তারপর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
লেবুর রস:
প্রাকৃতিক ব্লিচিং হিসেবে কাজ করে লেবুর রস। এটি কালো ও ছোপ ছোপ দাগ দূর করে ভেতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে। এক টুকরো লেবু চিপে ২ টেবিল চামচ রস বের করে নিন। এরপর এর সাথে যোগ করুন এক টেবিল চামচ গোলাপ জল। মিশ্রণটি ঘাড়ে লাগিয়ে ২৫-৩০ মিনিট রেখে শুকিয়ে যেতে দিন।
তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি আপনি সপ্তাহে ২/৩ দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
ওটস:
ওটস দেহের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার। রুপচর্চায়ও এর জুড়ি নেই। আপনি যদি নিয়মিত ওটস ব্যবহার করেন তাহলে খুব দ্রুতই গলা ও ঘাড়ের কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
১ টেবিল চামচ পরিমাণ ওটস চূর্ণ করে নিন। এর সাথে যোগ করুন ১ টেবিল চামচ কাচা দুধ এবং ১ টেবিল চামচ পরিমান মধু। সবগুলো মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এই পেস্টটি ঘাড়ে ও গলায় মেখে রাখুন ২০-৩০ মিনিটের মত। তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি খুব দ্রুত কালো দাগ সারাতে সাহায্য করবে।
গোলাপজল:
লেবুর রস ও গোলাপজল গলা ও ঘাড়ের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সমপরিমাণ লেবুর রস ও গোলাপজল মিশিয়ে ঘাড়ের কালো দাগে লাগিয়ে নিন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। এক মাস ব্যবহারে পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
আলুর রস:
আলুর রস গলা ও ঘাড়ের কালো দাগ দূর করতে ভূমিকা রাখে। আলু কুচি অথবা আলুর রস ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে গলা ও ঘাড়ের কালচে ভাব দূর হয়ে যাবে।
অ্যালোভেরা:
আপনারা জানেন যে প্রায় সব ধরনের ত্বকের সমস্যার জন্য অ্যালোভেরা একটি গিফট! অ্যালোভেরা যখন ঘাড়ে ইউজ করা হয়, তখন কেবল একটি প্রাকৃতিক স্কিন লাইটার-এর মতই এটি কাজ করে না, সাথে সাথে ত্বকের গঠনও উন্নত করে এটি। মূলত, অ্যালোভেরা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়াতে এটি নতুন চামড়া পুনর্বিন্যাসে সাহায্য করে।
একটি অ্যালোভেরা পাতা থেকে এর সবটুকু জেল চামচের সাহায্যে বের করে নিন। তারপর আপনার গলা ও ঘাড়ের চারপাশে জেলটি আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করে ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে শুকাতে দিন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ১/২ বার ব্যবহার করুন।
চন্দনের গুড়া:
প্রথমে চন্দনের গুড়ার সঙ্গে গ্লিসারিন, গোলাপ জল ও লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। মিশ্রণটি গলা ও ঘাড়ে মেখে ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। পুরো শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করুন। ১ সপ্তাহেই দেখতে পারবেন ফলাফল।
তাহলে বুঝলেন তো, হাতের কাছে থাকা কত সাধারণ কিছু উপাদান দিয়েই আমরা আমাদের অবহেলিত গলা ও ঘাড়ের যত্ন নিতে পারি। তাই আর দেরি না করে আজই প্যাকগুলো ব্যবহার করার যে উপায়গুলো আপনাদের জানালাম সেই অনুযায়ী গলা ও ঘাড়ের যত্ন শুরু হোক।