হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিওর মধ্যে পার্থক্য কী?

হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিওর আমাদের খুবই পরিচিত শব্দ। হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিওর আমাদের জীবনেকে জটিল করে তুলতে পারে এমনকি আমাদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

আমরা হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেলিওরকে অনেক সময় গুলিয়ে ফেলি। দুটি ক্ষেত্রেই একই অর্থে প্রয়োগ করে ফেলি।

অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকে হলে বলি হার্ট ফেলিওর আর হার্ট ফেলিওরকে বলি হার্ট অ্যাটাক। অথচ এই দুটি সমস্যা ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।

তাই আসুন হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিওরের ভেতর পার্থক্য জেনে নেওয়া নিই।

হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিওর মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হলো

হার্ট অ্যাটাক

প্রাণঘাতী রোগগুলির মধ্যে হার্ট অ্যাটাক একটি। হার্ট অ্যাটাকের কারণে প্রতি বছর আদের দেশের অনেক মানুষ মৃত্যু বরণ করেন। আমাদের শরীরে এমন তিনটি ধমনী আছে যারা হার্টে রক্ত সরবরাহ করে থাকে।

এদের মাধ্যমে হার্টের পেশিগুলি অক্সিজেন এবং নিউট্রিয়েন্ট পেয়ে থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে আর্টারির মধ্যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে রক্ত সরবরাহ বাধা পায়।

ফলে হার্ট পেশি পর্যাপ্ত পরিমান রক্ত পায় না, যার ফলে তাদের অক্সিজেন এবং নিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি দেখা দেয়।

এক বা একাধিক আর্টারিতে ব্লকের জন্য হার্টে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে হার্টের পেশি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

এই সময় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত না পেলে হার্ট পেশি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। হার্ট পাম্প করার ক্ষমতা হারানোর ফলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে আক্রান্ত রোগী মারা যেতে পারেন।

হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ

হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হলো বুকে ব্যথা হয়, ক্লান্তি বোধ হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, হঠাৎ শরীর ঘামতে থাকে, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া, বুকে জ্বালা হওয়া,  অস্থিরতা বা অতিরিক্ত উদ্বেগ।

হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি

কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে যা থেকে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যেমন, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল, স্থুলতা, স্ট্রেস, মদ্যপান ইত্যাদি। মহিলাদের থেকে পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি হয়ে থাকে।

সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সি মহিলাদের এই রোগ হয়ে থাকে। তবে ৬০ বছরের পরে সবারই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

হার্ট ফেলিওর

হার্টের স্বাভাবিক কাজ হলো রক্তকে পাম্প করে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে দেওয়া। এই কাজ করতে যখন অক্ষমতা দেখা দেয় তখন তাকে হার্ট ফেলিওর বলে।

এই অক্ষমতা দুই ধরনের হয়ে থাকে। হার্ট প্রথমে পাম্প করে রক্ত বের করার আগে রক্ত ভরে নেয় নিজের মধ্যে। যদি হার্টের রক্ত নেওয়ার পরিমাণ কমে যায় তবে সেটিকে ডায়াস্টোলিক হার্ট ফেলিওর বলা হয়ে থাকে।

অন্যদিকে পাম্প করার ক্ষমতা কমার জন্য বের করে দেওয়া রক্তের পরিমান যদি কমে যায় তবে সেটি সিস্টোলিক হার্ট ফেলিওর।

হার্ট ফেলিওর এর লক্ষণ

হার্ট ফেলিওর দুই ধরনের হলেও  লক্ষণ একই রকম। মূল লক্ষণ হল সামান্য কাজ করলে বা আগে যেটুকু কাজ করার ক্ষমতা ছিল সেটুকু করতে গেলেও দুর্বল লাগা বা ক্লান্তি আসা।

অনেক সময় দেখা যায় বুক ধড়ফড় করে, হাত-পা ফুলে ওঠেেএবং শ্বাসকষ্ট হয়। এই রোগের শুরুর দিকে কাজ করলে শ্বাসকষ্ট হয় এবং রোগের প্রকোপ বাড়লে হাঁটাচলা বা বসে থাকলেও শ্বাসকষ্ট হয়। এই ধরনের রোগীর সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ঝুঁকি বেশি হয়ে থাকে।

হার্ট ফেলিওর এর ঝুঁকি

হার্ট ফেলিওর বয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে বেশি হয়। অন্যদিকে কিছু রোগের সাথে হার্ট ফেলিওরের সম্পর্ক আছে। যেমন, হাইপারটেনশন, স্থুলতা, টাইপ 2 ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, কিছু হর্মোন ঘটিত সমস্যা ইত্যাদি।

এসব রোগ থাকলে হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি বেশি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে ডায়াস্টোলিক হার্ট ফেলিওর বেশি হয়ে থাকে।