শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে যেসব খাবার।
শীতকালে প্রকৃতির সর্বত্র দেখা যায় এক ধরনের আঁকালাে শুষ্কতার জমজমাট রেশ। প্রকৃতি তার রূপ-রস-বর্ণ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সন্ন্যাস ব্রত পালনে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। সেই সাথে আমাদের ত্বকও রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। চেহারায় তেমন কোনো উজ্জ্বলতা থাকে না। তাই এসময় আমাদের ত্বকের একটু বেশি যত্ন নিতে হয়।
কারণ সুস্থ ও কোমল ত্বক মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শর্ত। তাই এসময় আমাদের খাবারেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। এসময় আমাদের পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, যা ত্বককে রুক্ষ ও শুষ্কতার হাত থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের ত্বকে উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
চেহারায় উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির খাবারকে ইংরেজিতে বলে “সুপার ফুড”। যা ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শীতেকালে এসব খাবার ত্বক সজীব রাখতে সাহায্য করে। তাই শীতে চেহারায় উজ্জ্বলতা বাড়ায় এমন কিছু খাবারের নাম ও তার উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো-
পালং শাক:
শীতকালের একটি অতি পরিচিত সবজি হলো পালং শাক। এতে রয়েছে অক্সালিক অ্যাসিড, যা শরীরকে দ্রুত পুষ্টি শোষণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ভিটামিন “এ”, “সি” ও “কে” সমৃদ্ধ যা ত্বককে উজ্জ্বল রাখে এবং দাগ ছোপ ও কালচেভাব কমাতে সহায়তা করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের নানান সমস্যার বিরুদ্ধে কাজ করে। এছাড়াও বয়সের ছাপ কমাতে ও প্রাকৃতিক সান ব্লক হিসেবে কাজ করে।
আলু:
আলুতে রয়েছে ভিটামিন “এ”, “সি” এবং “বি” যা দ্রুত জেল্লা নিয়ে আসে ত্বকে। এছাড়া আলুতে থাকা ক্যালসিয়াম, প্রোটিন আয়রন ত্বকের যত্ন নেয়। ত্বক প্রাকৃতিকভাবে ব্লিচ করতে পারে আলু। ফলে উজ্জ্বল ও কোমল হয় ত্বক। রাতে আলুর রস মুখে লাগিয়ে রাখুন, ঘুম থেকে উঠে সকালে মুখটা ধুয়ে নিন। ত্বকের পানি ধরে রাখতে সাহায্য করবে আলুর রস। এছাড়াও এটি ত্বক সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
অলিভ ওয়েল:
রান্নায় অলিভ ওয়েল ব্যবহার খুবই উপকারী। এছাড়াও আপনার দেহের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করতে পারে অলিভ ওয়েল। রাতে শোয়ার আগে নাইট ক্রিম হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। মেকআপ উঠানোর জন্যও খুব ভালো কাজ করে অলিভ ওয়েল।
দই:
শুষ্ক ত্বকে দই খুব উপকারী। দইয়ের সাথে মধু, বেসন এবং হলুদ দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ১০ থেকে ২০ মিনিট মুখে মেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন।
পেঁপে:
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আর নানা উপকারী উপাদানে ভরপুর পেঁপে খেলে একদিকে স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকে, তেমনি চুল আর ত্বকের জন্যও উপকারী। পেঁপে কেবল ভিটামিন “এ” এর ভালো উৎস নয় বরং এটা পেপাইনেরও ভালো উৎস। এই দুই উপাদানই ত্বক আর্দ্র ও সতেজ রাখতে সহায়তা করে।
নিয়মিত রসালো ফল পেঁপে খেলে ত্বকের দাগ ছোপ ও ব্রেক আউট কমে। মুখে মেচতা থাকলে পেঁপে মাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। পেঁপে স্ম্যাশ করে থকথকে পেস্ট বানিয়ে ২০ মিনিটের মতো মুখে লাগিয়ে রেখে তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়।
টমেটো:
ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করতে টমেটোর ব্যবহার হয়ে আসছে বহুদিন ধরে। মসৃণ আর মোলায়েম ত্বকের জন্য টমোটো অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। প্রতিদিন নিয়ম করে টমেটো খেলে স্বাস্থ্যকর একটি মসৃণ ত্বক পাওয়া সম্ভব যা দামী প্রসাধনী ব্যবহারেও সম্ভব না। মুখের ডার্ক স্পট কমাতে গেলে টমেটো বেশ কাজ দেবে। দৈনিক ডেড স্কিন মারতেও টমেটো খুব উপকারী।
গাজর:
ত্বকের সমস্যার সমাধানে নিয়মিত গাজর খাওয়া উপকারী। গাজর ভিটামিন “এ” সমৃদ্ধ, যা অতিরিক্ত সিবাম নিঃসরণ কমায়। এটা আবন্ধ লোমকূপ পরিষ্কার করে ও ত্বকে উজ্জ্বলভাব আনে। এছাড়াও গাজর বিটা-ক্যারোটিন ও ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ যা প্রাকৃতিক ভাবেই “ট্যান” বা রোদপোড়া ভাব প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
হলুদ:
ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল রাখতে খাবারে হলুদ অত্যন্ত জরুরি। হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ক্ষয় থেকে বাঁচায়, লালচেভাব ও ব্রণ কমাতে সহায়তা করে। বয়সের ছাপ কমাতে ও হারানো লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে হলুদ আবশ্যক। যা শীতে চেহারায় উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।
ডিম:
ডিমে আছে সালফার যা কোলাজেন উৎপাদন করে যা ত্বককে টানটান ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুম খেতে না চাইলে ত্বকে ব্যবহার করুন। এটা ভিটামিন “ই” সমৃদ্ধ যা ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সহায়তা করে।
মধু:
মধু এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বক নরম রাখে, বলিরেখা ও কালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া ব্রণের জীবাণুও ধংস করতে মধু বেশ কার্যকর।
খুব কম সময়েই উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে মধুর কোনো বিকল্প নেই। এক চা চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ২০ মিনিট মুখ ম্যাসাজ করুন। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বক এক নিমিষেই উজ্জ্বল হয়ে যাবে।